Advertisement
E-Paper

সেনার জন্য ফ্রি-রাইড

কস্মিনকালেও তাঁর তিন কুলের কেউ সেনাবাহিনীতে ছিলেন না। কিন্তু দেশের জন্য প্রাণ বাজি রেখে কাজ করেন যারা তাঁদের প্রতি বরাবরই টান অনুভব করতেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৬ ০১:৪৯
সুশান্তর টোটোর সামনেই সেনাকর্মীদের প্রতি বার্তা। ছবি: সন্দীপ পাল

সুশান্তর টোটোর সামনেই সেনাকর্মীদের প্রতি বার্তা। ছবি: সন্দীপ পাল

কস্মিনকালেও তাঁর তিন কুলের কেউ সেনাবাহিনীতে ছিলেন না। কিন্তু দেশের জন্য প্রাণ বাজি রেখে কাজ করেন যারা তাঁদের প্রতি বরাবরই টান অনুভব করতেন তিনি। ফলে তাঁদের জন্য কিছু করে দেখানোর তাগিদ তাড়া করে বেড়াতো জলপাইগুড়ির বাসিন্দা সুশান্ত বারুইকে। সেজন্যই এক অভিনব পন্থা বের করেছেন তিনি। তাঁর আয়ের অন্যতম উৎস টোটোকে উৎসর্গ করেছেন সেনা জওয়ানদের জন্য। জলপাইগুড়িতে যেখানেই হোক সেনাকর্মীরা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে যেতে পারেন সুশান্তবাবুর টোটোতে।

জলপাইগুড়িতে বৌবাজার এলাকায় বাড়ি বছর পয়ত্রিশের সুশান্ত বারুইয়ের। বাড়িতে বাবা-মার পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়েও রয়েছে৷ আগে সংসার চালানোর জন্য তাঁর ভরসা ছিল রাস্তার ধারের একটি মোমোর দোকান। কিন্তু যথেষ্ট পরিমাণে আয় না হওয়ায় প্রায় সাত-আট মাস আগে কষ্ট করে একটি টোটো কেনেন তিনি। আর তাতেই তিনি সেনা কর্মীদের জন্য এই ফ্রি রাইডের ব্যবস্থা করেছেন।

গত ফেব্রুয়ারির একটি ঘটনা সুশান্তবাবুর মনকে রীতিমত নাড়িয়ে দিয়েছিল৷ ওই মাসে সিয়াচেনে হিমবাহ ধসে দশজন জওয়ান নিঁখোজ হয়ে যান৷ ছ’দিন পর হনুমানথাপা কোপ্পড নামে এক জওয়ানকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হলেও পরে তাঁর মৃত্যু হয়৷ সুশান্তের স্ত্রী মাম্পিদেবী বলেন, “সিয়াচেনের ওই ঘটনা প্রতিদিন খবরে দেখে বাড়ির মধ্যে ছটফট করতেন আমার স্বামী৷ আর শুধু বলতেন আমি যদি সেনা জওয়ানদের জন্য কিছু করতে পারতাম৷’’ সাধারণ এক মানুষের পক্ষে কতটা করা সম্ভব তা নিয়েও তাঁর ধন্দের কথা স্বামীকে জানিয়েছিলেন মাম্পিদেবী। টোটোতে ফ্রি রাইড দেওয়ার চিন্তা তাঁরও ভালো লেগেছে বলে তিনি কখনও বাধা দেননি বলে জানান মাম্পিদেবী। সেই থেকেই সুশান্তের টোটোতে কর্মরত ও প্রাক্তন সেনা জওয়ানদের জন্য ফ্রি রাইড ব্যবস্থা চালু ৷ একই সঙ্গে জলপাইগুড়ির প্রতিবন্ধী যাত্রীদের জন্যও একই ব্যবস্থা নিয়েছেন তিনি। তাঁদেরকেও সুশান্তবাবুর টোটো বিনামূল্যে পরিষেবা দেয়।

সুশান্তবাবু বলেন, “আমাদের দেশের সেনাদের জন্য সরকার যথেষ্ট করে৷ কিন্তু যাঁরা দেশ ও দেশবাসীদের নিরাপত্তা দিয়ে আসছেন তাঁদের জন্য আমাদের মত সাধারণ মানুষেরও কিছু করা দরকার বলে আমার মনে হয়৷’’ এই ভাবনা থেকেই তিনি তাঁর সাধ্য মত কাজ করেছেন বলে জানান তিনি। টোটো কেনার পর প্রথমদিকে নিজেই তা চালাতেন সুশান্তবাবু৷ কিন্তু মোমোর দোকান ও টোটো একার পক্ষে একসঙ্গে চালিয়ে ওঠা অসম্ভব হয়ে উঠেছিল তাঁর ৷ তাই নিজের পুরানো এক বন্ধুকে টোটোর চালক হিসাবে নিযুক্ত করেন তিনি৷ সুশান্তবাবু তাঁকে বলেও রেখেছেন, রাস্তায় সেনা কর্মী বা প্রতিবন্ধী কাউকে পেলেই তিনি যেখানেই যেতে চান না কেন, বিনা ভাড়ায় যেন তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয়৷

সুশান্তবাবু বলেন, “জলপাইগুড়িতে প্রত্যেক টোটো চালককেই দিনের শেষে একটা নির্দিষ্ট টাকা মালিককে দিতে হয়৷ কিন্তু আমার বন্ধুর জন্য তেমন কোনও নিয়ম নেই৷’’ সেনাকর্মী ও প্রতিবন্ধীদের বিনা ভাড়ায় গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে দিনের শেষে যে টাকাই পাওয়া যাক তাতে কোনও সমস্যা হয় না বলে জানান তিনি৷ এমনকী কোনও কোনও দিন এই ফ্রি রাইডের জন্য আয় তেমন না হলে তিনি নিজেই টাকা দিয়ে তাঁর বন্ধুর আয় পুষিয়ে দেন।

Toto free-ride
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy