ধান খেতের মাঝখানে টিমটিম করে জ্বলছে আলো। প্রচুর মানুষ ভিড় করেছে সেখানে। কারও মুখে তেমন কোনও শব্দ নেই। একটু ভাল করে লক্ষ্য না করলে ভাল করে বোঝাই যাবে না, সেখানে বহু মানুষের জটলা। কেউ তাস নিয়ে বসেছে। কেউ আবার ‘ঘুটঘুটি’ নিয়ে বসেছে, যা ‘ঢোপ’ নামেই পরিচিত। কোচবিহার জেলার আনাচে-কানাচে কালীপুজোর রাতে এমন ভাবেই চলল জুয়ার আসর। বহু জায়গায় অবশ্য প্রকাশ্যেই জুয়ার আসর বসেছে বলে অভিযোগ। ব্যতিক্রম শুধু চার নম্বর থেকে পানিশালা যাওয়ার এলাকা। সেখানে গত বছর জুয়ার আসর বন্ধ করতে গিয়ে জুয়াড়িদের হাতে আক্রান্ত হন এক পুলিশ অফিসার। তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশ জানিয়েছে, গত রাতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় হানা দিয়ে ৫০ জন জুয়াড়িকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিরিশ হাজারের উপরে টাকা আটক করা হয়েছে। আটক করা হয়েছে জুয়া খেলার সরঞ্জাম।
কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবাল বলেন, “গত কয়েক দিন ধরে আমাদের টানা অভিযান চলছে। গত রাতে যেখানেই খবর পাওয়া গিয়েছে, অভিযান করা হয়। তাতে অনেক গ্রেফতার হয়েছে। নজরদারি রয়েছে।” তিনি জানান, গত রাতে গোটা জেলায় ৬৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জুয়াড়িদের পাশাপাশি সেখানে মদ্যপ অবস্থায় গণ্ডগোল করার অভিযুক্তরাও রয়েছেন। চার নম্বর লাগোয়া এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ওই এলাকার মানুষ এবারে সতর্ক ছিলেন। কোথাও যাতে জুয়ার আসর না বসে সে দিকে লক্ষ্য ছিল তাঁদের।
পুলিশ সূত্রের খবর, কোচবিহার জেলায় জুয়া নিয়ে অভিযোগ নতুন কিছু নয়। বিশেষ করে শীতের সময় নানা অনুষ্ঠানের আড়ালে বসে জুয়ার আসর। কয়েক মাসে কোটি কোটি টাকার বেআইনি লেনদেন হয়। কালীপুজোর রাত থেকেই জুয়ার প্রকোপ শুরু হয়। শনিবার রাতে কোতোয়ালি থানার ঠকের বাজার, জিরানপুর, রাজারহাট, শহরের বিবেকানন্দ স্ট্রিট সহ নানা জায়গায় হানা দেয় পুলিশ। জিরানপুরে একটি স্কুল ঘর থেকে জুয়াড়িদের ধরা হয়। অভিযোগ, ভেটাগুড়িতে একাধিক জায়গায় ধান খেতের আড়ালে জুয়ার আসর বসানো হয়। দিনহাটার মাতালহাটের একাধিক জায়গায় খোলা প্যান্ডেলে যাত্রার আসরের আড়ালে জুয়ার আসর বসানো হয়েছে। শুধু ওই এলাকাই নয়, শুকারুর কুঠি গীতালদহ, ভলকা-পুটিমারি সহ বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় দেদারে জুয়ার আসর বসেছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, তিন-চারদিন ধরে পুজো উপলক্ষ্যে যাত্রাগান সহ নানা অনুষ্ঠান রাখা হয়। সেখানে নানা ধরনের জুয়া হয়। মাতালহাটের একটি এলাকায় আয়োজকরা জুয়ার বোর্ড নিলামে তুলে দেন। তিন দিনের জন্য তিন লক্ষাধিক টাকায় ওই বোর্ড কিনে জুয়ার আসর বসিয়েছে সীমান্ত এলাকার কয়েকজন জুয়াড়ি। এক জুয়াড়ি বলেন, “আমাদের নিরাপত্তা দেন আয়োজকরা। আমরা জুয়া চালাই। কখনও লাভ হয়। কখনও লোকসান।” দিনহাটার এসডিপিও কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মাতালহাটের লক্ষ্মীরবাজার এবং দিনহাটা শহর লাগোয়া ভাগ্নি থেকে ৯ জন জুয়াড়িকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, “অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy