Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিচার চাইছেন ছাত্রীর বাবা 

টিনের চাল বেয়ে লতা নেমেছে। মাটি থেকে দরমার বেড়ার গায়ে জড়িয়ে বাড়ছে আগাছা। স্ত্রী, দুই মেয়েকে নিয়ে বাড়ির কর্তা চলে গিয়েছেন শ্বশুরবাড়ির গোয়ালে। চার বছর ধরে বাড়িটা তালাবন্ধ। 

নির্যাতিতা ছাত্রীর বাড়ি: সে ভাবেই পড়ে রয়েছে, বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন সকলে। নিজস্ব চিত্র

নির্যাতিতা ছাত্রীর বাড়ি: সে ভাবেই পড়ে রয়েছে, বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন সকলে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:৪৪
Share: Save:

টিনের চাল বেয়ে লতা নেমেছে। মাটি থেকে দরমার বেড়ার গায়ে জড়িয়ে বাড়ছে আগাছা। স্ত্রী, দুই মেয়েকে নিয়ে বাড়ির কর্তা চলে গিয়েছেন শ্বশুরবাড়ির গোয়ালে। চার বছর ধরে বাড়িটা তালাবন্ধ।

বছর চারেক আগে ধূপগুড়িতে রেল লাইনের পাশ থেকে উদ্ধার হয়েছিল দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর বিবস্ত্র দেহ। অভিযোগ দায়ের হয়েছিল, গণধর্ষণের পরে রেল লাইনে ছুড়ে ফেলা হয়েছিল ছাত্রীকে। সেই ছাত্রীর বই খাতা আজও তালা বন্ধ হয়ে রয়েছে টিনের চাল, দরমা বেড়া দেওয়া ঘরে। মোবাইলে কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন বন্ধ বাড়ির কর্তা, মাঝবয়সী কৃষক। বললেন, “ধূপগুড়িতেই আরও একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে অত্যাচার চালানোর কথা আমিও শুনেছি। ঘটনার পরে পুলিশ দু জনকে ধরেছে। আমি তাতে খুশি। পুলিশ সত্যি ভাল কাজ করেছে। কিন্তু আমার মেয়েকে যারা অত্যাচার করে খুন করল, তাদের বিচার কী হবে। আমি কি বাড়ি ছাড়াই থেকে যাব?”

২০১৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর রেল লাইনের পাশ থেকে দেহ উদ্ধার হয়েছিল ছাত্রীর। স্থানীয় কাউন্সিলরের স্বামী সহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন ছাত্রীর বাবা। অভিযোগ ছিল, আগের রাতে স্থানীয় মাতব্বরেরা সালিশি সভা বসায়। ছাত্রীর বাবা পাম্পসেট ভাড়া নিয়েও টাকা দেয়নি এই অভিযোগে সালিশি সভা বসানো হয় বলে দাবি। সেখানে বাবাকে মারধরের প্রতিবাদ করে ছাত্রীটি। অভিযোগ, প্রতিবাদের শাস্তি হিসেবে কয়েকজন মিলে ছাত্রীর চুলের মুঠি ধরে মারধর করে এবং থুতু চাটার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরিবারের দাবি, ‘‘থুতু চাটবো না’’ বলে ছাত্রীটি অন্ধকারে ছুটে পালায়, তার পিছনে কয়েকজন তাড়া করে। পরদিন ভোরে রেল লাইের পাশ থেকে বিবস্ত্র দেহ উদ্ধার হয় ছাত্রীর।

থানায় অভিযোগ দায়ের করে জানানো হয়, সালিশি সভায় প্রতিবাদ করা ফতোয়া না মানায় ছাত্রীকে গণধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। অভিযুক্তরা জামিনে মুক্ত রয়েছেন। মামলাও চলছে। অভিযুক্ত ১৪ জনের সকলেই গ্রেফতার হয়েছে অথবা আত্মসর্মপণ করেছে। হাইকোর্টের নির্দেশে বর্তমানে সকলেই জামিনে মুক্ত। পুলিশের দেওয়া চার্জশিটে খুনের উল্লেখ করা হয়নি। ঘটনাটিকে আত্মহত্যার বলে দাবি করে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার মামলা রুজু করা হয়েছে।

ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ, মামলা প্রত্যাহার করার জন্য হামেশাই চাপ দেওয়া হয়। নানা হুমকির মুখে তাঁরা বাড়ি ছেড়ে পাশে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। জানালেন এখন আর বাড়ি ফিরে যাওয়ার আশা করেন না। দু’একবার বাড়ি বিক্রি করবেন মনস্থ করেও পিছিয়ে এসেছেন। বললেন, “সারা বাড়িটায় যে মেয়েটার স্মৃতি। মাঝেমধ্যে তালা খুলে ওর বই-খাতা-জামাগুলোকে ছুঁয়ে আসি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Rape Father JUstice
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE