Advertisement
১১ মে ২০২৪

সালিশি সভা থেকে নিখোঁজ ছাত্রীর দেহ উদ্ধার ধূপগুড়িতে

তৃণমূল নেতাদের ডাকা সালিশি সভা থেকে সোমবার রাতে নিখোঁজ হয়ে যায় এক ছাত্রী। মঙ্গলবার সকালে তার পোশাকহীন দেহ উদ্ধার হল রেললাইনের পাশ থেকে। অভিযোগ, জলপাইগুড়ির ধূপগুড়িতে ওই সালিশি সভায় মারধর করা হচ্ছিল ওই ছাত্রীর বাবাকে। ওই কিশোরী তখন তার প্রতিবাদ করে। এরপর ওই রাত থেকেই তার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। এ দিন তার দেহ উদ্ধারের পরে ওই কাউন্সিলরের স্বামী ও এলাকার আরও দুই তৃণমূল নেতা সহ মোট ১৩ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন ওই কিশোরীর বাবা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ধূপগুড়ি শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৪৫
Share: Save:

তৃণমূল নেতাদের ডাকা সালিশি সভা থেকে সোমবার রাতে নিখোঁজ হয়ে যায় এক ছাত্রী। মঙ্গলবার সকালে তার পোশাকহীন দেহ উদ্ধার হল রেললাইনের পাশ থেকে। অভিযোগ, জলপাইগুড়ির ধূপগুড়িতে ওই সালিশি সভায় মারধর করা হচ্ছিল ওই ছাত্রীর বাবাকে। ওই কিশোরী তখন তার প্রতিবাদ করে। এরপর ওই রাত থেকেই তার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। এ দিন তার দেহ উদ্ধারের পরে ওই কাউন্সিলরের স্বামী ও এলাকার আরও দুই তৃণমূল নেতা সহ মোট ১৩ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন ওই কিশোরীর বাবা। তাঁরা সকলেই ওই সালিশি সভায় উপস্থিত ছিলেন। ওই ছাত্রীর বাবার দাবি, তাঁর মেয়েকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে।

তদন্ত করতে এ দিন ঘটনাস্থলে যান জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জেমস কুজুর। তিনি অবশ্য বলেন, “ওই ছাত্রীর ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে বলে আমরা মনে করছি। তাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল কি না, তা ময়না তদন্তের রিপোর্ট এলে বোঝা যাবে।” পুলিশ তিন জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তবে মূল অভিযুক্তদের কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি। সিপিএমের জেলা কার্যকরী সম্পাদক সলিল আচার্যের অবশ্য দাবি, “তৃণমূল নেতাদের ডাকা সালিশি সভা থেকে বার করে এনে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তারপরেও কেন অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না?” এসএফআই-ও অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে ৩ ও ৪ সেপ্টেম্বর রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়েছে। তৃণমূলের অভিযুক্ত নেতাদের অবশ্য দাবি, তাঁদের ফাঁসানো হয়েছে। দলের জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “এই ঘটনায় রাজনীতির রং চড়ানো ঠিক নয়। পুলিশ নিজেদের মতো তদন্ত করছে।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ধূপগুড়ির নয় নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ওই ছাত্রীর বাবা কৃষিজীবী। তিনি সম্প্রতি চাষের জন্য এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে একটি পাওয়ার টিলার ভাড়া নেন। সেই পাওয়ার টিলারের ভাড়া নিয়েই বিবাদের সূত্রপাত। ওই ছাত্রীর বাবার দাবি, ওই পাওয়ার টিলারের দেড় হাজার টাকা ভাড়া তাঁর দেওয়া বাকি ছিল। কিন্তু যিনি সেটি ভাড়া দিয়েছিলেন, তিনি দাবি করছিলেন নয় হাজার টাকা বাকি রয়েছে। সোমবার রাতে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলার নমিতা রায়-এর স্বামী চন্দ্রকান্ত রায়, তৃণমূলের ওয়ার্ড কমিটির সম্পাদক ও স্থানীয় আর এক তৃণমূল নেতার উপস্থিতিতে এই নিয়েই সালিশি সভা বসে। সভায় জোর করে তাঁদের ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রীর বাবা। তাঁর অভিযোগ, “রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ সকলে মিলে সঙ্গে সঙ্গে চার হাজার টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেন। তা দিতে অস্বীকার করায় আমাকে মারধর করা হয়।” সে সময়েই তাঁর মেয়ে তাঁকে মারধরের প্রতিবাদ করেন। ওই ছাত্রীর বাবা বলেন, “কিছুক্ষণ পরেই দেখি মেয়ে নিখোঁজ। নিখোঁজ মেয়েকে খুঁজতে যাব বললেও আমাকে তখন ছাড়া হয়নি।” দেড়টা নাগাদ তিনি সালিশি সভা থেকে বেরিয়ে মেয়েকে খুঁজতে শুরু করেন। কিন্তু সেই রাতে আর মেয়ের সন্ধান পাননি। সকালে বাড়ি থেকে ছ’শো মিটার দূরে রেললাইনের ধারে গিয়ে দেখেন মেয়ের প্যান্ট ও জামা পড়ে রয়েছে। তার কিছু দূর থেকেই ওই ছাত্রীর পোশাকহীন দেহ পাওয়া যায়।

কাউন্সিলার নমিতাদেবীর স্বামী অভিযুক্ত চন্দ্রকান্তবাবু বলেন, “একটা ছোট ব্যাপার নিয়ে আমরা সালিশি সভা ডেকেছিলাম। সেখানে কাউকে মারধর করা হয়নি।” তাঁর দাবি, “ভিড়ের মধ্যে থেকে কোনও যুবক ওই ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে যায় বলে জানতে পেরেছি। আমাদের ফাঁসানো হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE