শিলিগুড়ির সেবক রোডে ঝড়ে উড়ে এসে রাস্তায় পড়েছে বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং। ছবি- বিশ্বরূপ বসাক।
আধঘণ্টার ঝড়-শিলাবৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হল শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। শনিবার রাত ৮টার পরে দুই শহরেই ঝড় শুরু হয়। প্রায় একইসঙ্গে শুরু হয়ে যায় শিলাবৃষ্টি। অন্তত পনেরো মিনিট ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি চলে। শিল পড়া থেমে গেলেও, বৃষ্টি এবং ঝড় চলতে থাকে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে দুই শহরের স্বাভাবিক জনজীবন। গাছ পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। জলপাইগুড়িতে বিএসএনএলের ল্যান্ডলাইন পরিষেবাও ব্যহত হয়। গাছ পড়ে শিলিগুড়ির ইস্টার্ন বাইপাসে বিদ্যুতের তার ছিড়ে যায়। রাস্তার উপরে গাছ উপরে পড়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাত পর্যন্ত যানজট লেগে থাকে বাইপাসে। শিলিগুড়ি শহরের বেশ কিছু বাড়ির টিনের চাল ঝড়ে উড়ে গিয়েছে।
ঝড়ের দাপটে শিলিগুড়ির সেবক রোডেও যান চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। লোহার ব্যারিকেডগুলি রাস্তায় পড়ে যায়। হাওয়ায় উড়ে অন্তত ৬টি হোর্ডিং সেবক রোডে পড়ে। একই দৃশ্য দেখা গিয়েছে হিলকার্ট রোড়ে। গাছ পড়ে দেশবন্ধু পাড়ার রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শিলিগুড়ি শহর থেকে নিউ জলপাইগুড়ি যাওয়ার সরাসরি রাস্তাটিও গাছ পড়ে বন্ধ হয়ে যায়। শহরের ৪, ৫, ১০, ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে তুলনামুলক বেশি ক্ষয়ক্ষতির খবর মিলেছে বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। শিলিগুড়ির পুর কমিশনার সোনম ওয়াংদি ভূটিয়া বলেন, ‘‘বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্ষয়ক্ষতির খবর এসেছে। পুরসভার একাধিক দল পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। পড়ে যাওয়া সব গাছ রাতেই কেটে ফেলার চেষ্টা চলছে। পুরসভার বিদ্যুত এবং পূর্ত বিভাগও পৃথক ভাবে বিপর্যয় মোকাবিলার কাজ করছে।’’
শিলিগুড়ির মহাকালপল্লি, আর্দশপল্লি এলাকায় গাছ পড়ে দু’টি বাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়েছে। সূর্যসেন পার্কের মধ্যে থাকা একটি বড় গাছ গোড়া থেকে উপরে একটি পাঁচিলে আটকে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। গাছটি পড়ে পাঁচিল ধসে গেলে পাশের একটি বাড়ির ক্ষতির আসঙ্কা রয়েছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। এলাকার বিদায়ী সিপিএম কাউন্সিলর কমল অগ্রবাল বলেন, ‘‘রাতেই কিছু গাছ কেটে সরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে প্রশাসনের তৎপরতা ছাড়া স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরানো সম্ভব নয়।’’
শিলিগুড়ি পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, রাত পর্যন্ত শহরের অন্তত ১৫টি এলাকা থেকে ছোট-বড় গাছ পড়ার কথা জানা গিয়েছে। চম্পাসারি, আশিঘর এলাকায় গাছ পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ঘোঘোমালি, গোড়ামোড় এলাকায় বেশ কিছু বাড়ির দেওয়াল ধসে গিয়েছে। ইস্টার্ন বাইপাস লাগোয়া শিলিগুড়ি পুরসভার ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে গাছ পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। গাছ পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে থাকে শিলিগুড়ি লাগোয়া সাহুডিঙিতেও। ক্ষতি হয়েছে, শহর লাগোয়া এলাকাতেও। নকশালবাড়ির মুনিরাম, হাতিঘিশা এলাকায় ৫০টিরও বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। তবে ওই এলাকায় শিলাবৃষ্টি হয়নি।
ঝড়-বৃষ্টিতে এ দিন দুই শহরেই ভোট প্রচার যেমন বিঘ্নিত হয়েছে, তেমনিই বিভিন্ন বাজারেও কেনাকাটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া এলাকায় গাছ পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। রাত পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবারহ স্বাভাবিক হয়নি। ঝড় শুরু হওয়ার পরে শিলিগুড়িতেও লোডশেডিং হয়ে যায়। শিলাবৃষ্টিতে ফসলেরও ক্ষতি হয়েছে।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, নিম্নচাপ অক্ষরেখার অবস্থানের কারণেই এ দিন ঝড় বৃষ্টি হয়েছে। পশ্চিমী ঝ ঞ্ঝার প্রভাবে বায়ুস্তরের উপরে নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হয়। এ দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তাপমাত্রা বেশি থাকায় বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্প ভরা বাতাস প্রবল গতিতে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ির দিকে ছুটে আসে বলে আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘‘সিকিম এবং উত্তরবঙ্গের সমতল এলাকায় নিম্নচাপ অক্ষরেখার অবস্থানের কারণে ঝড় বৃষ্টি হয়েছে। নিম্নচাপের কারণে শিলাবৃষ্টি হয়েছে।’’ আগামী ২৪ ঘণ্টাতেও ফের বিক্ষিপ্ত ভাবে ঝড়-শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy