মেঝেতে ছড়িয়ে কাচের টুকরো। — নিজস্ব চিত্র
চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে এক সিপিএম নেতার মৃত্যুর অভিযোগকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়াল। রবিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে রায়গঞ্জের উত্তর কলেজপাড়া এলাকার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সংলগ্ন একটি নার্সিংহোমে। ওই সিপিএম নেতার মৃত্যুর পর ডাক্তারদের একাংশের বিরুদ্ধে চিকিত্সায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে মৃতের পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা নার্সিংহোমের দরজা ও রিসেপশন কাউন্টারে ভাঙচুর চালান বলে অভিযোগ। তাতে বেশ কয়েকটি কাচ ভেঙেছে। পাশাপাশি, নার্সিংহোমের কয়েকজন কর্মী ও নিরাপত্তারক্ষীকেও মারধর ও ধাক্কাধাক্কি করা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছতেই অভিযুক্তরা তড়িঘড়ি নার্সিংহোম ছেড়ে চলে যান বলে দাবি।
রায়গঞ্জ থানার আইসি গৌতম চক্রবর্তীর দাবি, পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। তবে মৃতের পরিবার বা নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের তরফে এখনও পর্যন্ত পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। পুলিশ অভিযোগ হাতে পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।
ঘটনাচক্রে, অংশীদারিত্বে ওই নার্সিংহোমের অন্যতম মালিক উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদের সহকারী সভাপতি তথা রায়গঞ্জ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি পূর্ণেন্দু দে। তাঁর কথায়, ‘‘নার্সিংহোমের সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে। কর্মীদের মারধর করা হয়েছে। কিন্তু তা সত্বেও ঘটনার সময়ে নার্সিংহোমে হাজির চিকিত্সকেরা কেন পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করলেন না, সেটা বুঝতে পারছি না। কর্তৃপক্ষের তরফে তাঁদের পুলিশে অভিযোগ দায়ের করার নির্দেশ পাঠানো হচ্ছে।’’
নার্সিংহোম সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম আনসারুল ইসলাম (৩২)। পেশায় ব্যাঙ্কিং গ্রাহক পরিষেবা সহায়তা কেন্দ্রের এজেন্ট আনসারুলবাবুর বাড়ি কালিয়াগঞ্জ থানার বোচাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ বিষ্ণুপুর এলাকায়। তিনি বোচাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএমের অঞ্চল কমিটির সম্পাদকের পদে ছিলেন। দীর্ঘ দিন ধরে পেট ও পাকস্থলীর সমস্যায় ভুগছিলেন। গত শুক্রবার সকাল ১০টা নাগাদ আনসারুলবাবুকে ওই নার্সিংহোমে ভর্তি করেন পরিবারের লোকজন। তিনি ওই নার্সিংহোমের শল্য চিকিত্সক সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের অধীনে ভর্তি হন। সোমনাথবাবুর দাবি, ওই দিন আনসারুলবাবুর নানা শারীরিক পরীক্ষা নীরিক্ষা করে জানা যায়, তিনি অগ্ন্যাশয়ের রোগে আক্রান্ত। সেই মতো তাঁর চিকিত্সাও চলছিল। এদিন বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। সেই সঙ্গে, তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তখন সোমনাথবাবুর অনুরোধে রায়গঞ্জের মেডিসিন বিভাগের প্রবীন চিকিত্সক শান্তনু দাস আনসারুলবাবুকে পরীক্ষা করে তাঁকে স্পেশাল কেয়ার ইউনিটে পাঠানোর পরামর্শ দিয়ে কিছু ওষুধ লিখে দেন। পাশাপাশি, শান্তনুবাবু আনসারুলবাবুকে বেশ কিছু পরীক্ষা করানোরও পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু শান্তনুবাবু নার্সিংহোম ছেড়ে চলে যেতেই দুপুর পৌনে দু’টা নাগাদ আনসারুলবাবু মারা যান।
ওই ঘটনার পর মৃতের পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশী মিলিয়ে প্রায় ৬০ জন মানুষ চিকিত্সকদের বিরুদ্ধে চিকিত্সায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে নার্সিংহোমের দরজা ও রিসেপশন কাউন্টারে ভাঙচুর চালান বলে অভিযোগ। সেই সময় নার্সিংহোমের একদল কর্মী ও নিরাপত্তারক্ষী বাধা দিতে গেলে তাঁদের মারধর ও ধাক্কাধাক্কি করা হয় বলে অভিযোগ। এরপর উত্তেজিত লোকজন অভিযুক্ত চিকিত্সকদের শাস্তি ও দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে নার্সিংহোম চত্বরে বিক্ষোভ শুরু করেন। খবর পেয়ে রায়গঞ্জ থানার আইসি গৌতমবাবুর নেতৃত্বে বিরাট পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছতেই অভিযুক্তরা নার্সিংহোম ছেড়ে চলে যান বলে পুলিশের দাবি। পুলিশের হস্তক্ষেপে এরপর আনসারুলবাবুর মৃতদেহ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন পরিবারের লোকজন।
মৃতের পরিবারের তরফে কালিয়াগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএমের সভাপতি নিতাই বৈশ্যের দাবি, ‘‘এ দিন সকালে আনসারুলবাবুকে উন্নত চিকিত্সার জন্য শিলিগুড়ির কোনও নার্সিংহোমে রেফার করে দিলে তাঁকে অকালে মরতে হত না! গত দুদিনে আনসারুলবাবুর সঠিক চিকিত্সা হয়নি বলেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। আমরা সকাল থেকে চিকিত্সকদের একাধিকবার অনুরোধ করলেও আনসারুলবাবুকে রেফার করা হয়নি। তবে নার্সিংহোমে কারা ভাঙচুর ও কর্মীদের উপর হামলা চালালেন, তা আমরা জানিনা।’’
চিকিত্সক সোমনাথবাবু ও শান্তনুবাবু অবশ্য চিকিত্সায় গাফিলতির অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তাঁদের পাল্টা দাবি, ‘‘আনসারুলবাবুকে খুব খারাপ অবস্থায় নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছিল। তাঁকে বাঁচানোর জন্য চিকিত্সকেরা সব রকম চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, অ্যাম্বুল্যান্সে চেপে বাইরের কোনও নার্সিংহোমে যাওয়ার ধকল সহ্য করতে পারতেন না তিনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy