Advertisement
১৮ মে ২০২৪
হেঁসেলে হাহাকার

গিন্নিদের গুপ্তধন হাতছাড়া

খুচরোর অভাবে কেমন আছেন গিন্নিরা? কী ভাবে সামলাচ্ছেন সংসার? তাঁদের মুখেই তার খোঁজ।মঙ্গলবার রাত থেকে একেবারেই গুম মেরে গিয়েছেন জয়ন্তী দাস। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ ও কংগ্রেস নেতা সতীশচন্দ্র দাসের স্ত্রী-র অবস্থা দেখে হতবাক। ঠিক কী হয়েছে কিছুতেই বুঝতে পারছেন না। বারেবারেই স্ত্রীর শরীর খারাপ কি না জানতে চেয়েছিলেন।

বাপি মজুমদার
চাঁচল শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৬ ০২:২৪
Share: Save:

মঙ্গলবার রাত থেকে একেবারেই গুম মেরে গিয়েছেন জয়ন্তী দাস।

মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ ও কংগ্রেস নেতা সতীশচন্দ্র দাসের স্ত্রী-র অবস্থা দেখে হতবাক। ঠিক কী হয়েছে কিছুতেই বুঝতে পারছেন না। বারেবারেই স্ত্রীর শরীর খারাপ কি না জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু উত্তর না পেয়ে উদ্বেগ আরও বেড়ে গিয়েছিল। একে তো পাঁচশো, হাজার টাকার নোট বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। তা নিয়ে বেজায় উৎকণ্ঠা।

কিন্তু দিন তিনেক বাদে সবটাই জলের মতো পরিষ্কার হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত তাঁর স্ত্রী বলেই ফেললেন, ‘‘আমার কাছে পুরনো কিছু ৫০০ ও এক হাজার টাকার নোট রয়েছে। ওগুলো পাল্টে দিতে হবে।’’

সতীশবাবু হতবাক। বিস্ময় আরও বাড়ল, যখন ‘কিছু টাকা’ বলতে পাঁচশো ও হাজার টাকা মিলিয়ে স্বামীর হাতে ৬০ হাজার টাকা তুলে দিলেন জয়ন্তীদেবী।

কী করে এই টাকা জমালেন জয়ন্তীদেবী? জয়ন্তীদেবী হেসে বলেন, ‘‘সংসার থেকে কোনওরকমে বাঁচিয়েছি। মেয়েদের এমন টাকা থাকে। সংসারের অনেক বিপদে এই টাকা কাজে লাগে। কিন্তু নোট বাতিল হয়ে যাওয়ায় মুশকিলে পড়েছিলাম।’’ সতীশবাবুর বক্তব্য, ‘‘আগে জানলে একটা অ্যাকাউন্ট করে তাতে ফেললেই তো হত। তা হলে কিছু সুদও পেতাম। তবে আমি তো এই টাকার কথাটা জানতামই না।’’

খবরটা ছড়িয়ে পড়তে আস্তে আস্তে জানা গেল, কেবল জয়ন্তীদেবীই নন। অনেকের বাড়িতেই এমন টাকা থাকে। কখনও লক্ষ্মীর ভাঁড়ে। কখনও ভাঁড়ার ঘরের তাকে। এক বধূ জানালেন, ‘‘হাঁড়ির মধ্যে রাখতাম টাকা। সে টাকা এখন বার করতে হয়েছে।’’ তিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

কিন্তু সতীশবাবুর উদ্বেগ কাটলেও দীর্ঘ দিনের জমানো গচ্ছিত ধনের কথা ফাঁস হওয়ায় এখনও থম মেরে রয়েছেন জয়ন্তীদেবী।

বুধবার সাত সকালেই হইহই পড়ে গিয়েছিল হরিশ্চন্দ্রপুরের এক পুলিশকর্মীর বাড়িতেও। বিবাহিত দিদি বাড়িতে হাজির হয়েই হাত-পা ছুঁড়ে কাঁদতে শুরু করেছিলেন। কী হয়েছে, জানতে চাওয়ায় তাঁর কান্না আরও বেড়ে যায়। শেষে ঝোলা থেকে পুলিশকর্মী ভাইয়ের হাতে ১০১টি এক হাজার টাকার নোট তুলে দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘তুই পাল্টে দে। না হলে আমার সব যাবে।’’ ভাই তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন। ব্যাঙ্কের লাইনেও দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু এ ভাবে গুপ্তধনের কথা প্রকাশ্যে এসে পড়ায় গুম মেরে গিয়েছেন তিনিও। প্রতিটি এলাকায় কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, বধূদের টাকা জমানোর পর তা ফাঁস হওয়ার এমন হরেক কিসিমের গল্প।

হতবাক স্বামীরাও। সতীশবাবু বলছেন, ‘‘সংসার চালাতে অনেক সময় সমস্যায় পড়তে হয়েছে। কিন্তু স্ত্রীর কাছে যে এত টাকা রয়েছে ঘূণাক্ষরেও টের পাইনি।’’

কী করে এই টাকা জমা করেছেন ঘরের বধূরা? কেউ সংসারের খরচ বাঁচিয়ে, কেউ হাঁস, মুরগি প্রতিপালন করে। কেউ মজুত ফসলের কিছুটা বেচে। এক বধূ বলেন, ‘‘ টাকা একবার হাত গলে বের হতে শুরু করলে ফেরত পাওয়া যে অসম্ভব, তা জেনেই কর্তাদের ঘুণাক্ষরেও টের পেতে দেননি বধূরা। কিন্তু এ বার উপায়ান্তর না দেখেই গচ্ছিত ধনের হদিশ ফাঁস হয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা। এমন পরিস্থিতিতে পড়েও গুপ্তধনের কথা যাতে ফাঁস না হয়, সেই চেষ্টাও করছেন অনেকেই। যেমন হরিশ্চন্দ্রপুরের এক স্কুল শিক্ষকের স্ত্রী। গোপনে বিবাহিত মেয়েকে জরুরি তলব করে ডেকে এনেছিলেন। তাঁকে দিয়ে জমানো ৪৫ হাজার টাকা পাল্টাবেন ভেবে। নতুন নোট না আসায় স্থানীয় গ্রামীণ ব্যাঙ্কে মেয়েকে পাঠিয়েও পুরনো টাকা পাল্টাতে পারেননি তিনি। ফলে আশঙ্কা যাচ্ছে না। গিন্নিদের এমন অসহায় অবস্থার মধ্যে দিন কাটলেও বহু কর্তার গোঁফে যে চওড়া হাসি খেলতে শুরু করেছে তা বলাই বাহুল্য।

ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

banned notes hindrances
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE