Advertisement
০৮ ডিসেম্বর ২০২৩

এক হাতে ‘ভারু’ দাও, আর এক হাতে ‘নারু’ নাও! 

এক হাতে ‘ভারু’ দাও, আরেক হাতে ‘নারু’ নাও! 

.

.

কিশোর সাহা
কাঁকড়ভিটা (নেপাল) শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:৩১
Share: Save:

শিলিগুড়ির খড়িবাড়ির পানিট্যাঙ্কি সীমান্তে মেচি নদী পেরোলেই নেপালের কাঁকড়ভিটা। সেখানে একটু ঘোরাঘুরি করলেই শোনা যায় এমন ফিসফাস। রিকশা, অটো বা টোটো থেকে নামলে আচমকা কাছে এসে কেউ না কেউ শুনিয়ে যাবেই, টাকা বদলাতে চাইলে একটু এগিয়ে যেতে হবে! সরকারি ব্যাঙ্ক অবশ্য আছে। কিন্তু সেখানে মস্ত লাইন পড়ে। ফলে বাধ্য হয়েই যেতে হবে মেচিনগর পুরসভা ভবনের উল্টোদিকের রাস্তার মোড় থেকে বাসস্ট্যান্ড অবধি রাস্তায়, যেখানে চলছে ‘ভারু-নারু’র কারবার। কয়েকজন তরুণী ওই কারবার চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ।

নেপাল পুলিশ, সে-দেশের সেনাবাহিনী ও শুল্ক দফতরের অফিসার-কর্মীদের নজরদারি রয়েছে সারাক্ষণ। তাঁদের সামনেই রাস্তার মোড়ে কী ভাবে কারবার চলছে? কর্তব্যরত পুলিশ, সেনাকর্মীর দাবি, ওই তরুণীরা ভারতীয় টাকা নিয়ে নেপালের টাকা ভাঙালেও বাড়তি কোনও টাকা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ নেই। ভারতীয় পর্যটকদের সহযোগিতা করছেন বলে তাঁরা মনে করেন।

তাহলে ওই তরুণীরা দিনভর পরিশ্রম করছেন কেন? দু’দেশের ট্যুর অপারেটরদের একাধিক যৌথ সংস্থা রয়েছে। তেমনই একটি সংস্থার উপদেষ্টা রাজ বসু বললেন, ‘‘কয়েকজন নেপালি মহিলা কাঁকড়ভিটায় বসে খোলাখুলিই টাকা ভাঙিয়ে দিচ্ছেন। ভারতীয় টাকা নিয়ে সমমূল্যের নেপালি টাকা দিচ্ছেন। এক টাকাও কাটছেন না। এটা সহযোগিতাই বলা যেতে পারে।’’ তবে তাঁর কথায়, ‘‘নেপালের টাকা ভাঙিয়ে ভারতীয় টাকা নিতে হলে ওঁরা কিছু মূল্য ধরে নেন। হয়তো সেটাই লাভ। নতুন করে ২০০০, ৫০০ এবং ২০০ টাকার নোট বন্ধের পরে ভারু-নারুর কারবারের এখন রমরমা এখানে।’’

সোমবার কাঁকড়ভিটায় ঢুকে কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মীকে টাকা ভাঙানোর কথা জানতে চাইলে ব্যাঙ্কে যাওয়ার পরামর্শ দেন। মেচিনগরের গেট পেরিয়ে ঢুকতেই কয়েকজন তরুণী নোট ভাঙাতে চাই কি না, সেই প্রশ্ন করলেন। একটু দরাদরির পর এক তরুণী জানান, ভারতের ১০০ টাকার নেপালের ১৬০ টাকার সমান। সেটাই মিলবে। সেই টাকা নিয়ে কিছুটা এগিয়ে নেপালের ১৬০ টাকা দিয়ে ভারতীয় টাকা নিতে গিয়ে মিলল ১৫০ টাকা। মোটামুটি কারবারিদের কাছ থেকে যা হিসেব মিলল তাতে রোজ গড়ে কয়েক লক্ষ টাকার ‘ভারু-নারু’র কারবার চলে ওই এলাকায়।

এত চাহিদা সত্ত্বেও হলে ভারতের সীমান্তে কেন বিদেশি মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র হচ্ছে না? ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (নর্থ বেঙ্গল) সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘এসবিআইয়ের উত্তরবঙ্গের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।’’ কেন্দ্রীয় রাজস্ব মন্ত্রকের পানিট্যাঙ্কি সীমান্তের এক কর্তা জানান, পূর্ণাঙ্গ ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট তৈরির পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যেই বিদেশি মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE