এত দিন যা হওয়ার হয়েছে! এ বার থেকে দলীয় অনুশাসন না-মানলে, সকলকে নিয়ে চলতে না-পারলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বুধবার কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে সদ্য গঠিত দার্জিলিং জেলা কমিটির বৈঠকে এ কথা জানিয়েছেন জেলা সভাপতি তথা পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব।
এ দিন নান্টু পাল, কৃষ্ণ পাল, অরূপরতন ঘোষ-সহ কয়েক জন নেতা বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন। তাদের কয়েক জন কারণ জানালেও অনেকেই অনুপস্থিতির কোনও কারণ জানাননি বলে অভিযোগ। গৌতমবাবু বৈঠকে বলেন, ‘‘প্রতি মাসে রিপোর্ট দলের পর্যবেক্ষক এবং সভাপতিকে পাঠানো হবে। যে যত বড় নেতাই হোক না কেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের প্রতীক ঘাসফুল ছাড়া কেউ-ই কিছু নয়। শহরে থাকলেও ওই বৈঠকে আসেননি এমন খবরও আছে। এটা দলকে অবহেলা করার সামিল। এমন হলে তাঁর দরকার নেই।’’
মঙ্গলবার জেলা কার্যালয়ে এসে নিজেদের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সরিয়ে একযোগে কাজ করার নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন অরূপ বিশ্বাস। এ দিন গৌতমবাবু বলেন, ‘‘শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। সভাপতি হিসেবে আমাকে দিয়েই শুরু হবে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘দলনেত্রীর কাছে সব খবরই পৌঁছয়। কোথাও অনিয়ম হলে, কেউ শৃঙ্খলা না মানলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ এখন থেকে প্রতি মাসে অন্তত দুই-তিনটি বৈঠক করতেই হবে বলে জানানো হয়েছে। পারলে মাসে চারটি বৈঠক করা হবে। জেলা কমিটির নেতাদের জানিয়ে দেওয়া হয়, ঐক্যবদ্ধ ভাবে, দলের ‘ডিসিপ্লিন’ মেনে মানুষের কাছে যেতে হবে। এ দিন কৃষ্ণবাবু, অরূপবাবুরা না-আসার কারণ জেলা সভাপতিকে জানিয়েছিলেন। তবে নান্টুবাবুকে মোবাইলে ফোন করা হলে রিং বেজে গিয়েছে।
তৃণমূল সূত্রেই খবর, রাজ্যের সর্বত্র তৃণমূলের জয়জয়কার হলেও শিলিগুড়িতে পুরভোট থেকে মহকুমা পরিষদ এবং বিধানসভা নির্বাচন, সর্বত্র একের পর এক কেন হারতে হয়েছে— এই প্রশ্ন তুলে দলেরই একাংশ নেতার কড়া সমালোচনা করেন জেলা কমিটির সদস্যদের অনেকে। মাটিগাড়া-১ নম্বর ব্লকের সভাপতি অর্ধেন্দু বিশ্বাস বলেন, স্থানীয় কিছু নেতা অবৈধ জমির করবার, জমি দখলে যু্ক্ত। দলের পতাকাকে সামনে রেখে তাঁরা ওই কাজ করছেন। ব্লককে না জানিয়ে নিজেদের মতো মিটিং করছে। কিছু বললে শুনছেন না। জেলা কমিটির নেতাদের একাংশ ইন্ধন দিচ্ছে। মহকুমা পরিষদের বিরোধী দলনেতা কাজল ঘোষ জানান, বিধানসভা ভোটে দলের প্রার্থীকে হারানোর জন্য তৃণমূলেরই একাংশ টাকা ছড়িয়েছে।
এক নেতার কথায়, অনেক বৈঠকে নিজেদের পছন্দের লোককে ডাকা হয়। কাউকে ডাকা এবং কাউকে বাদ দেওয়ার এই প্রবণতা ঠিক নয়। দলের কিছু নেতার চলাফেরা বদলানো উচিত। বৈঠকেই দলের এক নেত্রী জানান, বিধাননগরে একটি বুথে দলের দায়িত্বে থাকা এক নেতা এলাকায় চার লক্ষ টাকার একটি উন্নয়ন কাজ করাতে এক ঠিকাদারের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ‘কাট মানি’ নিয়েছে। এ সব ব্যক্তিদের সরিয়ে স্বচ্ছ মুখ আনতে হবে। মানুষ যাদের বিশ্বাস করতে পারবে। নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ে একে অপরকে নিয়ে চলার স্বদিচ্ছার অভাব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
এ দিন জানিয়ে দেওয়া হয়, আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ব্লক কমিটি গড়ে ফেলার কথা বলা হয়েছে। পরবর্তীতে গ্রামাঞ্চলে এবং বুথ কমিটি এবং পুর এলাকার ওয়ার্ডগুলিতেও বুথস্তরে কমিটি গড়া হবে। ২৭ জানুয়ারি কোর কমিটির বৈঠকের পর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি ফের বৈঠক হবে জেলা কমিটির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy