জলপাইগুড়ি। অর্ধেক নামানো এটিএমের শাটার। ছবি: সন্দীপ পাল।
রায়গঞ্জ
রায়গঞ্জের মিলনপাড়া এলাকার বাসিন্দা মালবিকা সরকার। কাপড় সেলাই করে পেট চলে তাঁর। সামান্য হাজার টাকা তুলতে গিয়ে জেরবার অবস্থা তাঁর। প্রথমে মোহনবাটি, পরে নেতাজি সুভাষ রোড ও কলেজপাড়ার একাধিক এটিএমে ঢুঁ মারলেন তিনি। কোথাওই টাকা পেলেন না। কারণ? তাঁর দরকার হাজার টাকা। কিন্তু সব এটিএমেই দু’হাজারের নোট। মালবিকা দেবী বলছেন, ‘‘আমার অ্যাকাউন্টেই আছে দু’হাজার টাকা। সেই সবটা তুলে নিলে চলবে?’’
নোট বাতিলের পরে তিন মাস কেটে গিয়েছে। তার পরেও নগদের জোগানে এমন ঘাটতি রয়ে গিয়েছে উত্তর দিনাজপুরের অনেক জায়গায়। রায়গঞ্জ জেলার সদর শহর। সেখানেও সুদর্শনপুর, শিলিগুড়ি মোড়, সুপারমার্কেট, বিধাননগর, মোহনবাটি, উকিলপাড়া, নেতাজি সুভাষ রোড, বিদ্রোহীমোড়, কলেজপাড়া, বীরনগর, রাসবিহারী মার্কেট, দেবীনগর, বিবিডি মোড়, লাইনবাজার, হাসপাতাল রোড ও কসবা এলাকার বেশির ভাগ এটিএম এবং ই-কর্নারে টাকা তোলার জন্য বাসিন্দাদের ভিড় দেখা যাচ্ছে এখনও। দুপুরের পর থেকে সুদর্শনপুর, মোহনবাটি-সহ একাধিক এলাকায় এটিএমে টাকা ফুরিয়ে যাচ্ছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ।
শহরে যে সব এটিএমে পরিষেবা চালু রয়েছে, সেগুলির বেশিরভাগ থেকে দুই হাজার টাকার কম তোলা সম্ভব হচ্ছে না বলেও দাবি করছেন বাসিন্দারা।
রায়গঞ্জের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের দাবি, গত এক সপ্তাহ ধরে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ চাহিদা অনুযায়ী টাকা সরবরাহ করছেন না। তার জন্যই বিভিন্ন এটিএমে নতুন করে নোট সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
শিলিগুড়ি
শিলিগুড়ি শহর এবং লাগোয়া এলাকায় গত তিন-চার দিনে অনেক সময়ই এটিএমে গিয়ে টাকা না মেলায় ঘটনা ঘটছে। ব্যাঙ্কের গ্রাহকেরা, বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, গত সপ্তাহের শেষ দিকে সিটি সেন্টারের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক, স্টেশন ফিডার রোডের দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমে টাকা মেলিনি। এই সপ্তাহেও এর বিশেষ তফাত হয়নি। গত তিন-চার দিনে যেমন দেখা গিয়েছে, হিলকার্ট রোডের দুটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমে টাকা ছিল না। তেমনিই, হাকিমপাড়া, পঞ্জাবিপাড়ার দু’টি এটিএমে বেশি বেলা অবধি টাকা মেলেনি। বর্ধমান রোডের ছোট গাড়ি লাগোয়া দুটি ব্যাঙ্কের এটিএম ঠা ঠা দুপুরেও পাঁচ-ছ’জনকে লাইনে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে।
সেবক রোড, বিধান মার্কেটের কয়েক জন ব্যবসায়ী জানাচ্ছেন, আগের তুলনায় এটিএমগুলিতে এখন টাকা বেশি মিলছে। কিন্তু সমস্যা দুটো। প্রথমত, অনেক সময়েই টাকা ফুরিয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, বেশিরভাগ সময়েই সব ধরনের নোট মিলছে না। কোথাও খালি দু’হাজারের নোট বার হচ্ছে। কোথাও মিলছে শুধু পাঁচশো টাকার নোট। স্টেশন ফিডার রোডের কালীমন্দির লাগোয়া একটি রাষ্ট্রায়ত্ত গত দু’দিন টাকা না মিললেও এ দিন শুধুমাত্র একশো টাকার নোট মিলেছে। আবার কোথাও কোথাও একলপ্তে দশ হাজারের বেশি টাকা নোট বার হচ্ছে না। কেউ কুড়ি বা চব্বিশ হাজার টাকা তুলতে চাইলে একাধিকবার কার্ড সোয়াইপ করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। এর পরে ঊর্ধ্বসীমা ৫০ হাজার টাকা হবে বা একেবারে উঠে গেলেও এই সমস্যাটা রয়ে যেতে পারে।
কোচবিহার। বন্ধ এটিএম। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
তবে শিলিগুড়ি শহরে উল্টো ছবিও রয়েছে। কিছু এটিএমে এখন টাকা মিলছে। নভেম্বর-ডিসেম্বরে যে ভয়াবহ সঙ্কট বা নগদের অভাব দেখা দিয়েছিল, কিছুটা কেটেছে বলেও জানিয়েছেন বাসিন্দাদের একাংশ।
বিভিন্ন ব্যাঙ্কের অফিসারেরা অবশ্য বলছেন, গত এক সপ্তাহ ধরে শিলিগুড়িতে টাকার একটু জোগান কম রয়েছে। তাই ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এটিএমগুলি সচল করা রাখা হয়েছে। তবে ধীরে ধীরে নগদের জোগান বাড়ছে। তাতে শীঘ্রই পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
কোচবিহার
কোথাও টাকা মিলছে, তো কোথাও মিলছে না। নোটবন্দির পর বহু দিন কেটে গেলেও কোচবিহারে এখনও সব এটিএম কাউন্টার সচল হয়নি। তাই দুপুর বা সন্ধের পরে এখনও কিছুটা ভিড় হচ্ছে কয়েকটি এটিএমে। যেমন, সাগরদিঘি পাড়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের একটি এটিএম।
এ তো গেল কোচবিহারের কথা। চলুন দিনহাটা। সেখানকার বাসিন্দা লুতফর রহমান জানান, তিনি শহরের সব এটিএমে ঘুরে টাকা না পেয়ে শেষে মোটরবাইক নিয়ে প্রায় পঁচিশ কিলোমিটার দূরের কোচবিহার শহরে চলে আসেন। সেখানে একটি এটিএমে তিনি টাকা পেয়েছেন।
কোচবিহারে সব মিলিয়ে ১৬৪টি এটিএম কাউন্টার রয়েছে। এগুলির মধ্যে গ্রামের এটিএমগুলিতে টাকা ঠিকমতো পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ। ভেটাগুড়ির বাসিন্দা রাজীব বর্মন বলেন, “আমাদের এখানে দুটি এটিএম রয়েছে। এর মধ্যে একটিতে মাঝেমধ্যে টাকা পাওয়া যায়। আর একটি প্রায় সেই নভেম্বর থেকেই বন্ধ হয়ে রয়েছে।” কোচবিহারের লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার সঞ্জয় কুমার অবশ্য বলেন, “এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। প্রায় সব এটিএমেই টাকা মিলছে। সিতাইয়ের মতো জায়গাতেও সমস্যা নেই। যান্ত্রিক কারণে একটি-দুটি এটিএম খারাপ থাকতে পারে। তবে টাকার সমস্যা নেই।”
জলপাইগুড়ি
টাকার জোগান বাড়লেও এটিএমের সমস্যা পুরোপুরি মেটেনি জলপাইগুড়িতে৷ বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের অনেক এটিএমে সমস্যা রয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ৷ টাকা থাকলেও অনেক এটিএমে আবার একশো টাকার নোটের অভাব রয়েছে বলেও অভিযোগ গ্রাহকদের৷ গ্রাহকরা বলছেন, জলপাইগুড়ি শহরের বেশিরভাগ এটিএমে এখন টাকা আছে ঠিকই, কিন্তু কয়েকটি এটিএম এখনও বন্ধ৷ অনেক এটিএমে আবার ছুটির দিন টাকা পাওয়া যায় না৷ মাঝেমধ্যে অনেক এটিএমে আবার একশো টাকার নোট পেতে সমস্যা হয়৷
জেলার বাসিন্দাদের বক্তব্য, শহরাঞ্চলে গ্রাহকরা এটিএম পরিষেবা আগের চেয়ে অনেকটাই ভাল পাচ্ছেন। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে অনেক এটিএমে বেশিরভাগ সময়ই টাকা পাওয়া যায় না৷ যদিও জলপাইগুড়ির একটি রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার বলেন, একশো টাকার নোটের জোগান সে ভাবে না হওয়ায় এটিএমগুলিতে তা কম পাওয়া যাচ্ছে। তবে শহর বা গ্রামের সব এটিএমেই যাতে গ্রাহকরা ঠিকমতো টাকা পান, সেটা আমরা দেখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy