Advertisement
E-Paper

চল্লিশ কিলোমিটার পেরোতে চার ঘণ্টা

কালিয়াচকের যানজটের জন্য কেবল স্থানীয় বাসিন্দারাই নন, কলকাতা-শিলিগুড়ির মতো দূরপাল্লার বাসিন্দারাও অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। কলকাতা থেকে প্রায় মাঝ রাস্তা পর্যন্ত এসে বিরাট যানজটে ফেঁসে যেতে হচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৬ ০২:১৭

কালিয়াচকের যানজটের জন্য কেবল স্থানীয় বাসিন্দারাই নন, কলকাতা-শিলিগুড়ির মতো দূরপাল্লার বাসিন্দারাও অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। কলকাতা থেকে প্রায় মাঝ রাস্তা পর্যন্ত এসে বিরাট যানজটে ফেঁসে যেতে হচ্ছে। ফরাক্কা-মালদহ ৪০ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করতে সময় লাগছে ন্যূনতম ২-৪ ঘণ্টা।

তার উপরে প্রচণ্ড গরম পড়েছে। এ দিন কালিয়াচকের নওদা যদুপুর থেকে চৌরঙ্গি হয়ে পাগলা সেতু পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকায় ব্যাপক যানজট থাকায় দিনভর চূড়ান্ত নাকাল হচ্ছেন যাত্রীরা। মালদহের ব্যবসায়ীদেরও অভিযোগ, প্রশাসন ও পুলিশের সদিচ্ছার অভাবেই যানজট সমস্যা মিটছে না। প্রশাসন ও পুলিশ অবশ্য যানজটের দায় চাপিয়েছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের উপর। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, জুন মাসের মধ্যেই কালিয়াচক এলাকায় ফোর লেনের কাজ শেষ করা হবে।

বুধবার রাত ৮টায় কলকাতা থেকে বেসরকারি লাক্সারি বাসে চেপেছিলেন বেহালার বাসিন্দা দিবাকর বসু। সংস্থার কাজে তিনি শিলিগুড়ি যাচ্ছিলেন। বেলা ১২টায় তাঁর শিলিগুড়ি পৌঁছনোর কথা। একটায় মিটিং ছিল। কিন্তু কালিয়াচকের যানজটের জেরে তিনি মালদহ জেলা সদর ইংরেজবাজারের রথবাড়িতেই পৌঁছেছিলেন সকাল সাড়ে ১০টায়। বাসচালক রতন দাশগুপ্তের কথায়, ‘‘বাস শিলিগুড়ি পৌঁছবে বিকেল সাড়ে চারটেয়।’’ যা শুনে দিবাকরবাবুর যেন মাথায় বাজ পড়ার মতো অবস্থা। সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলে সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিলেন, সময় মতো পৌঁছতে পারবেন না।

একা দিবাকরবাবু নন, এরকম কয়েক হাজার যাত্রী প্রতিদিনই এই যানজটের নরক যন্ত্রণা ভোগ করছেন। কেউ ব্যবসার কাজে সময় মতো পৌঁছতে না পেরে অপ্রস্তুত হচ্ছেন। কেউ আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে পাহাড় ডুয়ার্সে যেতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন। তাঁদের কয়েকজন জানান, গাড়ি ঠিক করা ছিল। কিন্তু সময় মতো না যেতে পারায় গাড়ি না-ও পেতে পারেন তাঁরা। তাতে গন্তব্যে পৌঁছতে দেরি হয়ে যাবে। অনেকের সঙ্গেই রয়েছেন বয়স্ক আত্মীয়েরা। তাই যাত্রাপথ দীর্ঘ হয়ে যাওয়ায় তাঁদের সমস্যা বাড়ছে।

কালিয়াচকের বাসিন্দারা বলছেন, এখানে যানজট নতুন বিষয় নয়। যে দিন থেকে ফোরলেনের কাজ শুরু হয়েছে, সেদিন থেকেই দুর্ভোগ আরও বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু প্রশাসন ও পুলিশ নির্বিকার। অথচ এ বারের বিধানসভা ভোটের আগে নির্বাচন কমিশনের কর্তারা যানজটে ফেঁসে চোখ রাঙিয়ে যখন হম্বিতম্বি করেছিল তখন কিন্তু এই পুলিশ-প্রশাসনই দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে এলাকা যানজট মুক্ত করেছিল। সেই রেশ কিন্তু অনেকদিন ছিল। এখন ভোট নেই, কমিশনের চোখ রাঙানিও নেই, তাই যানজট মেটাতে পুলিশ-প্রশাসনেরও কোনও হেলদোল নেই।

কালিয়াচকে লাগাতার যানজট চলায় ব্যাপক ক্ষুব্ধ মালদহ জেলার ব্যবসায়ী মহলও। মালদহ মার্চেন্টস চেম্বার অফ কমার্সের সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা বলেন, ‘‘কালিয়াচকে লাগাতার যানজট চলায় প্রভাব পড়ছে ব্যবসায়। পণ্য বোঝাই লরি যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেঁসে থাকছে। পণ্য লোডিং-আনলোডিংয়ে সমস্যা হচ্ছে। লরি ভাড়া বেশি গুণতে হচ্ছে। প্রশাসন ও পুলিশের সদিচ্ছার অভাবেই এটা হচ্ছে। এ ভাবে চললে আমরা আন্দোলনে নামব।’’

মালদহের জেলাশাসক শরদ দ্বিবেদী অবশ্য বলেন, ‘‘কালিয়াচক এলাকায় ফোরলেন তৈরির কাজ চলছে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন যে, তাঁরা এই জুন মাসেই কাজ শেষ করবেন। তারপর আর যানজটের আশঙ্কা নেই।’’ তবে এখন সমস্যা মেটাতে এলাকায় বাড়তি ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাস্তার কাজ শেষ না হলে ওই যানজট পুরোপুরি মিটবে না। তবে যানজট সমস্যা মেটাতে পুলিশ কাজ করছে।’’ তাঁর যুক্তি, ‘‘গাজোলে তো যানজট হচ্ছে না। সেখানে ফোরলেনের কাজ শেষ।’’

বাকি এলাকায় ফোর লেনের কাজ কবে শেষ হবে? জাতীয় সড়ক মালদহ ডিভিশনের প্রজেক্ট ম্যানেজার দিনেশকুমার হানসারিয়া বলেন, ‘‘ফোর লেনের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। কালিয়াচকে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের যে সব এলাকা খারাপ, সেটাও মেরামতির কাজ চলছে। জুন মাসেই কাজ শেষ হবে।’’

traffic congestion
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy