Advertisement
E-Paper

সুমনার জন্য হাসি গোটা তল্লাট জুড়ে

অনেক দিনই মুড়ি খেয়ে স্কুলে চলে যেত। স্কুলের মিড ডে মিলেই দুপুরের খাওয়া হত। দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ ব্লকের বাসন্তী হেদয়াতুল্লা হাইমাদ্রাসার ছাত্রী সুমনা খাতুন রাজ্যে প্রথম স্থান অর্জন করে সকলের নজর কেড়ে নিয়েছে। মোট ৮০০ নম্বরের মধ্যে সুমনা পেয়েছে ৭৪৮।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৬ ০২:৫৩
স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে সুমনা। ছবি: অমিত মোহান্ত।

স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে সুমনা। ছবি: অমিত মোহান্ত।

অনেক দিনই মুড়ি খেয়ে স্কুলে চলে যেত। স্কুলের মিড ডে মিলেই দুপুরের খাওয়া হত। দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ ব্লকের বাসন্তী হেদয়াতুল্লা হাইমাদ্রাসার ছাত্রী সুমনা খাতুন রাজ্যে প্রথম স্থান অর্জন করে সকলের নজর কেড়ে নিয়েছে। মোট ৮০০ নম্বরের মধ্যে সুমনা পেয়েছে ৭৪৮।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই শুরু হত লড়াই। বাবা ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন। তাঁর পাঠানো টাকাই তিন বোন ও মা-র বেঁচে থাকার একমাত্র রসদ। শুক্রবার সকাল ১১টা নাগাদ পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর শিক্ষকদের কাছ থেকে খবর পেয়ে সুমনা বাড়ি থেকে এক ছুটে চলে যায় মাদ্রাসায়। ফোনে দিনমজুর বাবা আবু সিদ্দিকি মিঁয়াকে সাফল্যের খবর জানায় সে। আনন্দে কেঁদে ফেলেন মেয়ে ও বাবা দু’জনেই। মা বিলকিসবিবি বলেন, ‘‘আমাদের খুব কষ্ট করে কাটাতে হয়। মেয়ের জন্য এমন দিন আমাদের জীবনে এল।’’

শুধু তাঁদের জীবনেই নয়। সুমনা গোটা তল্লাটেরই মুখে হাসি ফুটিয়েছে। নানা কষ্ট, দারিদ্রের মধ্যে এমন একটি ঘটনায় গ্রামের মানুষ প্রথমে হতবাক হয়ে যান। অনেকে ভাবতেই পারেননি, তাঁদেরই রোজকার চেনা পরিবারেরই এক মেয়ে সারা রাজ্যের মধ্যে শোরগোল ফেলে দেওয়ার মতো ফল করবে। কুমারগঞ্জের সমজিয়া অঞ্চলের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া গ্রাম দেউন জুড়েই আনন্দের ঝড় বয়ে যায়। সুমনাদের মাটির বাড়িতে পড়শিদের ভিড় বাড়তে থাকে।

মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষিকা ছন্দা সরকারের কথায়, ‘‘প্রত্যন্ত এলাকা থেকে মেয়েটা রীতিমত লড়ে সাফল্য পেল। স্কুল থেকে পঠনপাঠনে আমরা যতটা পেরেছি সাহায্য করেছি। তবে স্কুলের পঠনপাঠনের অগ্রগতির জন্য কম্পিউটারের ব্যবস্থা থাকলে আরও ভালো হতো।’’ সমুনা ভাল তালিম পেলে ফল আরও ভাল করতে পারত, তা-ও একবাক্যে শিক্ষকরাও স্বীকার করেছেন। প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ‘‘সুমনা ভাল করবে জানতাম, কিন্তু রাজ্যে প্রথম হবে ভাবতে পারিনি।’’ সুমনার কথায়, ‘‘আমার পড়াশোনায় যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, বাবা ও মা সাধ্যমতো বইপত্র টিউশনের টাকার ব্যবস্থা করে গিয়েছেন। শিক্ষকদেরও পাশে পেয়েছি।’’

প্রত্যন্ত ওই সীমান্ত এলাকায় বাসিন্দাদের মধ্যে শিক্ষার হার সামান্য। সুমনার বাবা ও মা দু’জনেরই প্রাথমিকের পর পড়া হয়নি। নিজেরা অল্পশিক্ষিত হলেও লেখা পড়ার ক্ষেত্রে তাদের তিন মেয়েকে উৎসাহ ও সাহায্যে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন তারা। দুই দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। হতদরিদ্র আবু সিদ্দিক মিঁয়া ও মা বিলকিস বিবির ছোট মেয়ে সুমনা। সুমনার বাবা আবু সিদ্দিক বছর দশেক আগে ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজে পাড়ি দেন। তাঁর পাঠানো টাকায় টেনেটুনে সংসারের হাল ধরে মেয়ের ভাল তালিমের ইচ্ছে বুকে নিয়েই দিন কেটে যেত মায়ের। বিলকিস বিবির কথায়, ‘‘মেয়ের জন্য আরও ভাল ব্যবস্থা করা দরকার বুঝতাম, কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও উপায় ছিল না।’’ মাটির ছোট্ট ঘরে বেশি রাত পর্যন্ত পড়ত সুমনা। মা-ও জেগে থাকতেন। সুমনার অঙ্কের শিক্ষক ছিল। আর কোনও বিষয়ে গৃহশিক্ষক ছিলেন না।

বিলকিসবিবি বলেন, ‘‘শত অভাবেও মেয়ের মুখে কোনওদিন কোনও নালিশ ও অভিযোগ শুনিনি। আজ ওর এই সাফল্যে ওর বাবার লড়াইটা সবচেয়ে বেশি করে মনে পড়ছে।’’ সুমনা বলেছে, ‘‘বাবার পাশাপাশি মায়েরও প্রতিনিয়ত সংগ্রাম চোখে দেখেছি। ওঁদের লড়াই আমাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।’’

আর সাহায্য করেছে মালালা ইউসুফজাই। সুমনা বলে, ‘‘মালালাকে ওরা গুলি করেছিল। তবু ওর পড়াশোনা থামাতে পারেনি। এটাই আমাকে বারবার অনুপ্রাণিত করেছে।’’

সংখ্যালঘুদের মধ্যে মেয়েদের শিক্ষার প্রতি যে অবহেলা, তা দূর করার লক্ষ্য নিয়ে সুমনা ভবিষ্যতে শিক্ষিকা হতে চায়। বিলকিস বলেন, ‘‘মেয়েকে কী ভাবে পড়াব, শুধু সেটাই বুঝতে পারছি না।’’

Kumarganj High Madrasa result
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy