Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ধরলার ভাঙনে মুখে দুই গ্রাম

কোথাও বিঘের পর বিঘে কৃষি জমি চলে গিয়েছে নদী গর্ভে। আবার কোথাও ভিটেমাটি ভেঙে নিয়ে গিয়েছে নদী। গত চার দিন ধরে ভাঙনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে একের পর এক গ্রাম। দিনহাটার গীতালদহ থেকে তুফানগঞ্জের দেওচড়াইয়ের একাধিক গ্রামে শুরু হয়েছে ওই ভাঙন।

ঘরঘরিয়া নদীর ভাঙনে বসতবাড়ি ভেসে গিয়েছে। (ডান দিকে) দেওচড়াইয়ের ঝলঝলিয়ার ভাঙন প্রতিরোধ দেখছেন বিধায়ক।—নিজস্ব চিত্র।

ঘরঘরিয়া নদীর ভাঙনে বসতবাড়ি ভেসে গিয়েছে। (ডান দিকে) দেওচড়াইয়ের ঝলঝলিয়ার ভাঙন প্রতিরোধ দেখছেন বিধায়ক।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৫ ০২:২৫
Share: Save:

কোথাও বিঘের পর বিঘে কৃষি জমি চলে গিয়েছে নদী গর্ভে। আবার কোথাও ভিটেমাটি ভেঙে নিয়ে গিয়েছে নদী। গত চার দিন ধরে ভাঙনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে একের পর এক গ্রাম। দিনহাটার গীতালদহ থেকে তুফানগঞ্জের দেওচড়াইয়ের একাধিক গ্রামে শুরু হয়েছে ওই ভাঙন। বাসিন্দাদের দাবি, প্রায় চার হাজার বিঘে কৃষি জমি ইতিমধ্যেই চলে গিয়েছে নদী গর্ভে। ২৫টি বাড়ির ভিটেমাটি নদী গর্ভে চলে গিয়েছে। অনেক বাড়ি নদীগর্ভে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নদীর জল বেড়ে যাওয়াতে ওই ভাঙন শুরু হয়েছে। বাসিন্দাদের আশঙ্কা, নদীর জল কমতে শুরু করলে ভাঙনের তীব্রতা আরও বেশি হবে।

রবিবার দেওচড়াইয়ের কৃষ্ণপুর, ঝলঝলি, চৌখুসি বলরামপুর, সন্তোষপুর এলাকায় পরিদর্শনে যান নাটাবাড়ির বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি বলেন, “ভাঙনে বহু কৃষি জমি নদী গর্ভে গিয়েছে। সেচ দফতরের তরফে বেশ কয়েকটি জায়গায় অস্থায়ী ভাবে নদী ভাঙন রোখার কাজ শুরু করা হয়েছে। বর্ষার পরে যে সব এলাকায় বাঁধ তৈরি করা সম্ভব সেখানে স্থায়ী বাঁধের কাজ শুরু করা হবে।” তিনি দাবি করেন, কয়েকবছর ওই এলাকাগুলিতে ভাঙন আরও ভয়াবহ আকার নিত। গত চার বছরে কয়েকটি বাঁধ নির্মাণের কাজ করা হয়েছে সেখানে। গীতালদহের জারিধরলা, দরিবস গ্রামেও এদিন ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরা পরিদর্শনে যান। কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, “অসংরক্ষিত এলাকায় কিছু ভাঙন হয়েছে। ভয়ের কিছু নেই। বৃষ্টি কমে গিয়েছে। আমরা সবসময় নজরদারি করছি। প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ধরলা নদী ঘেঁষে জারিধরলা, দরিবস গ্রাম। প্রায় প্রতি বছর ওই দুই গ্রাম ভাঙনের মুখে পড়ে। এবারে ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেছেন। গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যে ২২টি বাড়ির ভিটেমাটি নদীগর্ভে চলে গিয়েছে। ওই বাসিন্দারা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। আরও অন্তত ২৫ টি বাড়ি ভাঙনের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। গীতালদহ ১ পঞ্চায়েতের প্রধান আমিনুল হক বলেন, “বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর থেকেই ভাঙন শুরু হয়। সাধারণ মানুষ ওই সব এলাকায় থাকেন। ভিটেমাটি, কৃষি নদীতে চলে যাওয়ায় তাঁরা খুব অসুবিধের মধ্যে পড়েছে। প্রশাসনকে সব জানানো হয়েছে। আমরা পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে মানুষের পাশে রয়েছি।” কৃষ্ণপুরের বাসিন্দা আজিজুল হক, ফজলু হকের বাড়ির বেশিরভাগ অংশ নদীগর্ভে চলে গিয়েছে। আর দুদিনের মধ্যে বাকি অংশটুকুও নদীতে চলে যাবে বলে আশঙ্কা করছে তাঁরা। গদাধর নদীর ভাঙনে ওই এলাকার বহু জমিও নদীতে গিয়েছে। তাঁরা বলেন, “চোখের সামনে সবকিছু শেষ হয়ে গেল। এবার কোথায় যাব বুঝে উঠতে পারছি না। দিনমজুরি করে সংসার চালাই। এখন কোথায় গিয়ে বাড়ি করব।” চৌখুসি বলরামপুরের প্রায় তিন হাজার বিঘা জমি চলে গিয়েছে কালজানি নদীর গর্ভে। ওই এলাকার বাসিন্দা জয়নাল মিয়াঁ, সুটকা মিয়াঁরা বলেন, “জমিতে ফসল ফলিয়েই আমাদের সংসার চলে। একের পর এক কৃষি ক্ষেত নদী ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।” এ দিন দিনভর বৃষ্টি না হলেও আবহাওয়া দফতর থেকে জানানো হয়েছে, আগামী পাচদিন ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE