হতাশা: আদালতে চলছে কর্মবিরতি। কাজের অপেক্ষায়। শিলিগুড়ি আদালত চত্বরে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
ফাঁকা কোর্ট চত্বর। একটি ছোট টুলে বসে ঝিমোচ্ছিলেন বছর সত্তরের গণেশ ঘোষ। সামনের টেবিলে রাখা বিভিন্ন ধরনের ফর্ম। ঘুমোচ্ছেন? তিনি বলেন, ‘‘বিক্রি নেই, এই বয়সে আর কী করব! ফর্ম বেচেই সংসার চলে। মাত্র ২০ টাকার বিক্রি হয়েছে। তা দিয়ে কি সংসার চলে?’’ তিনি যেখানে বসেছিলেন, তার আশেপাশে ১০-১২টি ছোট টেবিল টুল বাঁধা রয়েছে। আইনজীবীরা কাজ বন্ধ করে রাখায় যাঁরা ফর্ম বেচেন, তাঁরাও আর বিশেষ আসছেন না, জানালেন গণেশ। দুই ছেলে বিয়ে করে আলাদা সংসার করছেন। স্ত্রীকে নিয়ে এখন একাই থাকেন গণেশ। শিলিগুড়ি আদালত চত্বরে ফর্ম বেচে রোজ দুই-আড়াইশো টাকা হয়। তাতে কোনও মতে দিন চলে। কর্মবিরতির জেরে গত তিন সপ্তাহ ধরে তা-ও বন্ধ।
আদালত চত্বরে দীর্ঘদিন থেকে পানের দোকান হায়দার পাড়ার বাসিন্দা বিমান সাহার। রোজ সাত-আটশো টাকার বিক্রি। বর্তমানে সেই বেচাকেনা কমে দাঁড়িয়েছে দু-আড়াইশো টাকায়। তাঁর কথায়, পানের দোকানের উপর সংসার চলে। তাতে ছেলের পড়াশোনার খরচ চলে। কিন্তু আদালতে আইনজীবীদের কর্মবিরতিতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘এই কর্মবিরতি নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত। প্রশাসনের কর্তাদের উচিত আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলা, যাতে কর্মবিরতি এ বারে শেষ হয়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এত দিন তো আদালত বন্ধ রাখা ঠিক নয়।’’
শুধু গণেশ ঘোষ বা বিমান সাহা নন, আদালত চত্বরের মুহুরি, টাইপিস্ট থেকে চা-পান দোকানদার, সকলের প্রায় একই অবস্থা। অনেকে কাজে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। কেউ বিকেলের পরে দোকান খুললেও সারাদিন বন্ধ করে রাখছেন।
আইনজীবীদের সাহায্য করে থাকেন ল’ক্লার্করা। তাঁরাও কাজ বন্ধ রেখেছেন। ফলে বিএলআরও, রেজিস্ট্রি অফিসের কাজও কিছুটা থমকে গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ল’ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশনের শিলিগুড়ি ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক কাজল চক্রবর্তী জানান, বিচারপ্রার্থীদের সঙ্গে কোর্ট চত্বরে জীবিকার সঙ্গে যুক্ত প্রায় প্রত্যেককে সমস্যায় পড়েছেন। কিন্তু আন্দোলনের সঙ্গেও তো থাকতে হবে। আইনজীবীদের আন্দোলনে তারাও সামিল হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘কর্মবিরতি হলে সমস্যা তো হবেই। কিন্তু সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’’
আইনজীবীদের কর্মবিরতিতে শিলিগুড়িতে থাকা ১১টি কোর্টে রোজ পাঁচশোর বেশি মামলা জমা হচ্ছে বলে আইনজীবীদের একাংশের দাবি। শিলিগুড়ি বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মহম্মদ ইউসুফ আলি জানান, তাঁদের কাজ বন্ধ থাকার ফলে আদালত চত্বরে অনেকে সমস্যায় পড়েছেন। কিন্তু এটা সাময়িক। তাঁরাও বিচার চাইছেন। হাওড়ার ঘটনার পরে প্রশাসন যে ভাবে নীরব, তাতে আইনজীবীরা অবাক। তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসনের নীরবতার কারণেই এত মানুষের সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।’’
হাওড়ায় আইনজীবী-পুলিশ গন্ডগোলের জেরে ২৫ এপ্রিল থেকে রাজ্যে জুড়ে কর্মবিরতি করছেন আইনজীবীরা। শুনানি থাকলে আদালতে আসছেন বিচারপ্রার্থী এবং তাঁদের আত্মীয়রা। কিন্তু আইনজীবী না থাকায় শুনানি কার্যত হচ্ছে না। সুরাহা না পেয়ে ফিরতে হচ্ছে অনেককে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy