Advertisement
০১ মে ২০২৪

জলাভূমি ভরাটের অভিযোগ তুলে ধূপগুড়িতে আন্দোলনে বামেরা

তৃণমূল পরিচালিত ধূপগুড়ি পুরসভার বিরুদ্ধে জলাভূমি ভরাটের অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামল সিপিএম। সোমবার দলের ধূপগুড়ি-১ লোকাল কমিটির তরফে পুরভবন ঘেরাও করে প্রায় তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ দেখায় দলের কর্মী সমর্থকরা। এপ্রিল মাসে একই অভিযোগে পুরসভার বিরুদ্ধে হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা রুজু করেন কলকাতার বাসিন্দা এক পরিবেশপ্রেমী। ওই মামলার পরে সিপিএমের আন্দোলন পুরসভায় তৃণমূল নেতৃত্বকে বেশ অস্বস্তিতে ফেলল।

এই জলাভূমিতে কাজ ঘিরেই বিতর্ক। —নিজস্ব চিত্র।

এই জলাভূমিতে কাজ ঘিরেই বিতর্ক। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ধূপগুড়ি শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৫ ০২:২২
Share: Save:

তৃণমূল পরিচালিত ধূপগুড়ি পুরসভার বিরুদ্ধে জলাভূমি ভরাটের অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামল সিপিএম। সোমবার দলের ধূপগুড়ি-১ লোকাল কমিটির তরফে পুরভবন ঘেরাও করে প্রায় তিন ঘণ্টা বিক্ষোভ দেখায় দলের কর্মী সমর্থকরা। এপ্রিল মাসে একই অভিযোগে পুরসভার বিরুদ্ধে হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা রুজু করেন কলকাতার বাসিন্দা এক পরিবেশপ্রেমী। ওই মামলার পরে সিপিএমের আন্দোলন পুরসভায় তৃণমূল নেতৃত্বকে বেশ অস্বস্তিতে ফেলল। এদিন জলাভুমি রক্ষার পাশাপাশি শহর এলাকার কুমলাই নদীকে দূষণ থেকে রক্ষার জন্য দ্রুত ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরি এবং জলকষ্ট কমাতে বাড়িতে পানীয় জল সরবরাহের দাবিও ওঠে।

সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, আইনের তোয়াক্কা না করে শহরের ১, ৪, ১০ এবং ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে জলাভূমি ভরাট করে জমি বিক্রি শুরু হয়েছে। পুরকর্তাদের একাংশ ওই ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত। সিপিএমের ধূপগুড়ি-১ লোকাল কমিটির সম্পাদক জয়ন্ত মজুমদার বলেন, “পরিবেশকে বিপন্ন করে যে ভাবে জলাভূমি ভরাট করে জমি বিক্রির কারবার জাঁকিয়ে বসেছে, তা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। পুরকর্তাদের একাংশ ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। সমস্যার কথা কয়েকবার জানিয়েও লাভ হয়নি। তাই আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।” যদিও সিপিএম নেতৃত্বের ওই অভিযোগ তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার কর্তারা ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন।

তবে পুরসভার চেয়ারম্যান শৈলেনচন্দ্র রায় বলেন, “শহরে কিছু নিচু এলাকা থাকলেও জলাভূমি নেই।’’ তিনি জানান, অনেকে নিচু এলাকায় মাটি ফেলে ভরাট করে নির্মাণ কাজ করছে। পুরসভার তরফে ১০ এবং ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংযোগস্থলে নিচু এলাকায় ইকোপার্ক তৈরির কাজ চলছে। সেখানে মাটি দিয়ে ভরাটের কোনও প্রশ্ন নেই। মাটি তুলে বোটিংয়ের জন্য বড় জলাশয় তৈরি করা হবে। তাঁর প্রশ্ন, “যেখানে জলাভূমি নেই সেখানে পুর কর্তাদের একাংশের বিরুদ্ধে জলাভূমি ভরাটের অভিযোগ উঠছে কেমন করে?” মহকুমা ভূমি ও রাজস্ব আধিকারিক নরবু ইয়ালমো বলেন, ‘‘আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’ তবে ওই দফতর সূত্রে খবর, যেখানে পার্ক করা হচ্ছে, সেটি নদীর পুরনো খাত।

কিন্তু চেয়ারম্যান যাই বলুন না কেন, শহরের ১০ এবং ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংযোগস্থলে বৈরাতীগুড়ি মৌজার যে ১৪৫ কাঠা জমিতে (জে এল নম্বর ২২৩) পুরসভার তরফে ইকোপার্ক তৈরির কাজ চলছে সেটাকে ঘিরে জলাভূমি ভরাটের সবচেয়ে বড় অভিযোগ উঠেছে। পরিবেশপ্রেমীদের দাবি, ওই নিচু এলাকা নদীর পুরনো খাত। সেটা ভরাট করা যায় না। গত ২২ এপ্রিল কলকাতার বাসিন্দা পরিবেশপ্রেমী বিপ্লবকুমার চৌধুরী ওই অভিযোগ তুলে পুরসভার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন।

পুরসভার চেয়ারম্যান বলেন, “পুরসভার তরফে ওই এলাকায় কী কাজ হবে, আদালতকে সেটা স্পষ্ট করে জানানো হবে।”

এদিন বেলা দেড়টা নাগাদ বিরাট মিছিল নিয়ে সিপিএম কর্মী সমর্থকরা পুর ভবন অভিযানে নামেন। মিছিলে নেতৃত্ব দেন দলের রাজ্য কমিটির সদস্য জিয়াউল আলম, স্থানীয় বিধায়ক মমতা রায় এবং দলের ধূপগুড়ি জোনাল কমিটির সম্পাদক তুষার বসু। বেলা সাড়ে ৩ টা পর্যন্ত পুরভবনে বিক্ষোভ চলে।

পুরসভার চেয়ারম্যানকে সিপিএম নেতৃত্ব ২২ দফা দাবি সংবলিত স্মারকলিপি দেন। চেয়ারম্যান জানান, কয়েকদিনের মধ্যে বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু হবে। ডাম্পিং গ্রাউন্ড নিয়ে অনিশ্চয়তার জন্য তিনি সিপিএমকে বিঁধেছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরির জন্য পাঁচ মাস আগে পুরসভার তরফে সর্বদলীয় সভা ডাকা হলেও সিপিএম নেতৃত্ব সহযোগিতা করেননি।’’ যদিও সমস্যা সমাধানে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন সিপিএমের ধূপগুড়ি-১ লোকাল কমিটির সম্পাদক জয়ন্ত মজুমদার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dhupguri Agitation CPM left front eco park
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE