Advertisement
E-Paper

বালি-পাথরে দিনুদের বাঁচিয়ে রাখছে নদী

ওয়াং ছু বা রায়ডাক নদীর উৎস ভুটানের হিমালয় পর্বতমালা। উচ্চ গতিতে এই নদী থিম্পু ছু নামে পরিচিত।

রাজু সাহা

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৯ ০৫:৪৫
নদী-জীবন: এ ভাবেই মাঝনদীতে দাঁড়িয়ে বালি-পাথর তোলেন দিনু বর্মণরা। চকচকা গ্রামের কাছে রায়ডাকে। নিজস্ব চিত্র

নদী-জীবন: এ ভাবেই মাঝনদীতে দাঁড়িয়ে বালি-পাথর তোলেন দিনু বর্মণরা। চকচকা গ্রামের কাছে রায়ডাকে। নিজস্ব চিত্র

কুমারগ্রাম ব্লকের চকচকা গ্রামের বাসিন্দা দিনু বর্মণ। স্ত্রী রেণুবালা, একমাত্র ছেলে শানু। রোজ ভাল করে দিনের আলো না ফুটতেই নৌকা ভাসিয়ে দেন রায়ডাকে। চলে যান সোজা মাঝ নদীতে। মাঝ নদী মানে সেখানে হয় হাঁটু নয়তো কোমর জল। সেখানে দাঁড়িয়ে বালি-পাথর তোলেন তাঁরা। সে বালি ডাঙায় এনে ফেলতে হয়। দিনুদের তোলা বালি-পাথর নদীর পাড় থেকে সরাসরি ট্রাকে করে পাড়ি দেয় কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। সারাদিন বালি-পাথর তোলার পর জনপ্রতি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা মেলে। সেই টাকা দিয়ে চকচকা বা বারবিশা হাট থেকে চাল-ডাল, আনাজ কিনে দিনুরা সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন।

এ ভাবে রায়ডাকের উপর নির্ভর করে জীবন চালান ভুটান সীমান্তের তুরতুরিখণ্ড থেকে তুফানগঞ্জের বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত অন্তত এক লক্ষ মানুষ। পরোক্ষে সংখ্যাটা দ্বিগুণেরও বেশি।

সারাদিন নদী থেকে বালি-পাথর তুলে রেণুবালার হাত সাদা হয়ে গিয়েছে। সে দিকে কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। রেনুবালা বলেন, ‘‘রায়ডাকের গ্রাসে ভিটে-মাটি সব গিয়েছে। এখন নদীর চরই আমাদের আশ্রয়। তবে নদী যেমন সব কেড়েছে, তেমনই আবার উজাড় করে দিয়েছে তার সর্বস্ব। তার গর্ভে আগলে রেখেছে সোনার খনি (বালি-পাথর)। আর সেটা আছে বলেই আমরা দু’মুঠো বেঁচে আছি। কাজের খোঁজে ভিন রাজ্যে যেতে হচ্ছে না।’’

রায়ডাকের পাড়ে গেলেই দেখা যায়, মাঝ নদীতে সারি সারি নৌকা, পাড় ঘেঁসে দাঁড়িয়ে ট্রাকের সারি। সেখান থেকে তুলে বালি-পাথর নিয়ে আসা হচ্ছে পাড়ে। তার পর তা ট্রাকে তুলে দিচ্ছেন শ্রমিকেরা। সেই পাথর পাড়ি দিচ্ছে আলিপুরদুয়ার, কোচবিহারের বিভিন্ন প্রান্তে। এই দুটি জেলার নির্মাণ শিল্প রায়ডাকের উপর নির্ভরশীল। নির্মাণ কাজে যুক্ত ইঞ্জিনিয়রেরা জানান, রায়ডাকের বালি-পাথর গুণে মানে সেরা।

তবে রায়ডাক থেকে বালি-পাথর তোলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশপ্রেমীরা। তাঁদের কথায় নদীবক্ষ থেকে নিয়ম মেনে বালি পাথর তুললে সমস্যা নেই। কিন্তু কিছু আসাধু বালি ব্যবসায়ী অবৈধ ভাবে বালি-পাথর তুলছেন। এর ফলে নদী যেমন বাধা প্রাপ্ত হয়, তেমনই বন্যার প্রবণতা বাড়ে। তাই নদীবিজ্ঞানীরাও নিয়ম মেনে বালি তোলার পক্ষে। রায়ডাক থেকেও অবৈধ বালি-পাথর তোলার অভিযোগ রয়েছে। রায়ডাক সেতুর নীচ থেকে বালি তোলা নিষিদ্ধ। অথচ সে নিষেধ না মেনে দেদার বালি-পাথর তোলা হচ্ছে।

ওয়াং ছু বা রায়ডাক নদীর উৎস ভুটানের হিমালয় পর্বতমালা। উচ্চ গতিতে এই নদী থিম্পু ছু নামে পরিচিত। তার পরে এই নদী থিম্পু ও পারো পেরিয়ে, ভুটানের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ পথ চলে এসে ঢুকে পড়ে ভারতে। তার আগে কখনও সরু গিরিখাত, কখনও চওড়া উপত্যকার মধ্যে দিয়ে বয়েছে নদী। এর মধ্যে একাধিক ছোট নদী এসে এই নদীতে মিশেছ। পারো জংয়ের উজানে এই নদীর অন্যতম প্রধান উপনদী টা ছু এসে বাঁ দিকে মিশেছে। পশ্চিম দিকে এই নদীর সঙ্গে মিশেছে হা ছু। তাশিছো জংয়ে নদীর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬,৯৫৯ ফুট উঁচুতে। যেখানে নদী ডুয়ার্সে প্রবেশ করছে, সেখানে তার উচ্চতা মোটে ৯০ মিটার।

ভুটান থেকে বয়ে আনা এই বালি-পাথরেই এখন চলছে দিনুদের দিন। নদী এ ভাবেই বাঁচিয়ে রেখেছে বসতিগুলিকে।

Raidak River
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy