Advertisement
১৯ মে ২০২৪

লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ স্বাস্থ্য বিমা, অভিযোগ মালদহে

রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা প্রকল্পে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থতার অভিযোগ উঠল মালদহ জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে। ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে এই প্রকল্পে লক্ষ্যমাত্রার ৪০ শতাংশ বাকি রয়েছে। ফলে জেলার বহু মানুষ এই প্রকল্পের সুযোগ থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।

শয্যা না থাকায় ময়নাগুড়ি হাসপাতালে গুদাম ঘরের মাটিতেই ঠাঁই মিলেছে রোগীদের। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।

শয্যা না থাকায় ময়নাগুড়ি হাসপাতালে গুদাম ঘরের মাটিতেই ঠাঁই মিলেছে রোগীদের। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৫ ০১:৫২
Share: Save:

রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা প্রকল্পে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থতার অভিযোগ উঠল মালদহ জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে। ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে এই প্রকল্পে লক্ষ্যমাত্রার ৪০ শতাংশ বাকি রয়েছে। ফলে জেলার বহু মানুষ এই প্রকল্পের সুযোগ থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। এর জন্য অবশ্য তাঁরা প্রশাসনের উদাসীনতাকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, এই প্রকল্পের সুযোগ সুবিধে এখনও সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে ব্যর্থ প্রশাসন। ফলে অনেকের কাছে রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বীমা যোজনার প্রকল্পের বিষয়টি অজানা। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, এই প্রকল্পে উপভোক্তাদের কাছে ছড়িয়ে দিতে প্রচার চালানো হয়। প্রয়োজনে প্রচার আরও বাড়ানো হবে।

মালদহ জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা সিপিএমের শেখ খলিল বলেন, ‘‘জেলা পরিষদে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ ধীর গতিতে চলছে। যার ফলে রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বীমা যোজনা প্রকল্পে লক্ষ্যমাত্রা পুরণে ব্যর্থ। বহু গরিব মানুষ তাঁদের উদাসীনতার জন্য এই প্রকল্পের সুযোগ থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।’’ জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ সৈয়দ মাঞ্জারুল ইসলাম বলেন, ‘‘এই আর্থিক বছরে লোকসভা নির্বাচন থাকায় এই প্রকল্পের কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছে। তবে এই প্রকল্পে জেলায় ভাল কাজ হয়েছে। গ্রামগঞ্জে প্রচার করা হয়েছিল এই প্রকল্প সম্বন্ধে। আশা করি জেলার সমস্ত উপভোক্তাই সুবিধে পাবেন।’’ জেলা পরিষদের অতিরিক্ত কার্যনির্বাহী আধিকারিক অমলকান্তি রায় বলেন, ‘‘এই প্রকল্পে জেলায় ভাল কাজ হয়েছে। কিছু সমস্যা থাকায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যায়নি। খুব শীঘ্রই এই প্রকল্পে উপভোক্তারা আরও সুবিধে পাবেন। রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা প্রকল্পের কার্ডের সুবিধে জেলার সমস্ত হাসপাতালেই মিলবে।’’

জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে মালদহ জেলায় ৬ লক্ষ ৫৪ হাজার ২৬৪টি পরিবারকে রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে লক্ষ্যমাত্রার ৪০ শতাংশ পরিবার এখনও এই প্রকল্পের আওতায় আসেনি। জেলাতেই এই মুহূর্তে ৪ লক্ষ পরিবার এই প্রকল্পের সুবিধে পাচ্ছেন। জেলার মধ্যে চাঁচল ১ ও ২ ব্লক এবং কালিয়াচক ২ ব্লকে ৫০ শতাংশ করে কাজ হয়েছে। হবিবপুর, বামনগোলায় কাজ হয়েছে ৪০ শতাংশ করে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সমস্ত পরিবার দারিদ্র্য সীমার নীচে বসবাস করেন তাঁরা এই প্রকল্পের সুবিধে পাবেন। এ ছাড়া যে সমস্ত পরিবার আর্থিক বছরে কম পক্ষে ১৫ দিন ১০০ দিনের কাজ করেছেন তাঁরাও এই প্রকল্পের সুবিধে পাবেন। রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা প্রকল্পে উপভোক্তাদের ৩০ টাকার বিনিময়ে স্মার্ট কার্ডের মতো একটি কার্ড দেওয়া হয়। এই কার্ড থাকলে চিকিৎসার জন্য অর্থ মেলে উপভোক্তাদের। এই কার্ড থাকলে জন্মগত রোগ ছাড়া, যে কোনও ধরনের পুরনো বা নতুন রোগের চিকিৎসার সুযোগ পাবেন তাঁরা। এ ছাড়া হাসপাতালের ভর্তির এক দিন আগে এবং ছাড়া পাওয়ার পাঁচ দিন পর্যন্ত বিনামূল্যে ওষুধ পাওয়া যায়। এ ছাড়া যাতায়াত খরচও দেওয়া হয়। আগে যাতায়ত খরচ হিসেবে একশো টাকা করে দেওয়া হতো। এ বার তা বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া এই কার্ডধারীদের চিকিৎসার জন্য সর্বাধিক ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত দেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে কেবল মালদহ মেডিক্যালে এবং চাঁচল মহাকুমা হাসপাতালে ও শহরের বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতালেই রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বীমা যোজনা প্রকল্পের কার্ডের পরিষেবা পান উপভোক্তারা। এ বার থেকে জেলার প্রতিটি গ্রামীণ হাসপাতালে এই পরিষেবা পাওয়া যাবে। প্রতিটি গ্রামীণ হাসপাতালেই রোগী সহয়তা কেন্দ্র খোলা হবে। সেখানে দু’জন করে কর্মী নিয়োগ করা হবে। তাঁরা রোগীদের কোথায় গেলে এর পরিষেবা পাওয়া যাবে এবং কী পরিষেবা পাবেন তা বোঝাবেন। প্রতিটি কেন্দ্রে একটি করে কম্পিউটার দেওয়া হবে। সেথান থেকে তাঁরা ডেটা অপারেট করবেন। আগামী মাস থেকেই এই সুবিধে চালু হবে বলে জানা গিয়েছে।

রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বীমা যোজনা প্রকল্পে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারায় এই বছর প্রায় আড়াই লক্ষ পরিবার এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলেন। হবিবপুরের আকতৈলের বাসিন্দা সালকে বাস্কে, বামনগোলার সুভাস সরকার প্রমুখেরা বলেন, ‘‘আমরা দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করা সত্ত্বেও সুবিধে থেকে বঞ্চিত রয়েছি। এলাকায় এই প্রকল্প সম্বন্ধে প্রচারই হয়নি। আমার মতো বহু মানুষ রয়েছেন, যাঁরা এই বিষয়ে কিছু জানেই না। তাই প্রশাসনের উচিত এই প্রকল্প সম্বন্ধে প্রচার করা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE