নদী গিলছে জমি, বাড়ি। পারদেওনাপুরে। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।
মালদহের কালিয়াচক ৩ এবং মানিকচক ব্লকের বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠল। কয়েকদিন ধরেই বাড়ছিল গঙ্গার জলস্তর। মঙ্গলবার থেকে তা চরম বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইতে শুরু করে। এর জেরে প্লাবিত হয় কালিয়াচক ৩ ব্লকের পারদেওনাপুর-শোভাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। পাশে থাকা কৃষ্ণপুর ও বাখরাবাদের একাংশ এবং মানিকচক ব্লকের জোতপাট্টা এলাকাও প্লাবিত হয়।
বুধবার সকাল থেকে গঙ্গার জলস্তর চরম বিপদসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। যে এলাকাগুলি প্লাবিত হয়েছিল, সেখানে জল আরও বেড়ে গিয়েছে। প্রায় ১০ হাজার মানুষ কার্যত জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। পারলালপুর এলাকায় আবার চলছে ব্যাপক গঙ্গা ভাঙন। সেখানে এ দিনও বিঘার পর বিঘা আবাদি জমি তলিয়ে গিয়েছে নদী গর্ভে।
এ দিন মানিকচক ব্লকের ভূতনির হীরানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেও জল ঢুকতে শুরু করেছে। সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, যা পরিস্থিতি, তাতে গঙ্গার জলস্তর আরও বাড়বে। এবং তাতে পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আশঙ্কা। এ দিন সকাল ৬টায় গঙ্গার জলস্তর ছিল ২৫.২৭ মিটার. সকাল ৯টায় তা হয় ২৫.৪৯ মিটার ও বেলা ১২টায় হয় ২৫.৫৩ মিটার।
পারদেওনাপুর-শোভাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারা দু’দিন ধরে জলবন্দি থাকলেও এ দিন দুপুর পর্যন্ত কোনও মানুষ ত্রাণ পাননি বলে অভিযোগ। এমনকী গঙ্গা ভাঙনের জেরে যে শতাধিক পরিবার পারলালপুর হাই স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে সেখানেও কোনও ত্রাণ শিবির খোলা হয়নি। ত্রাণ না মেলায় দুর্গতদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়েছে। প্রশাসনিক সুত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার চোপড়ায় তিন জেলাকে নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মালদহ জেলার প্রশাসনিক আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছিলেন দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ যেন সময় মতো পৌঁছয়। কিন্তু অভিযোগ, ওই নির্দেশ পাওয়ার ২৪ ঘন্টা পরেও কালিয়াচক ৩ ব্লকের দুর্গতদের মধ্যে কোনও ত্রাণ বিলি হয়নি। পারদেওনাপুর-শোভাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মায়া সরকার বলেন, ‘‘ত্রাণ সামগ্রীর জন্য ব্লক প্রশাসনের কাছে বারবার আবেদন করা হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনের কোনও উদ্যোগই নেই।’’
দুপুরে জেলাশাসক শরদ দ্বিবেদী অবশ্য বলেন, ‘‘কালিয়াচক ৩ ব্লকের বিডিওকে পারদেওনাপুর-শোভাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেওয়া মানুষদের মধ্যে শুকনো খাবার বিলি করতে বলা হয়েছে। আরও ত্রাণ পাঠানো হবে।’’
পারদেওনাপুর-শোভাপুর যাতায়াতে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের টাউনশিপ মোড় থেকে পারলালপুর ঘাট পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার রাস্তার প্রায় ৫০ মিটার অংশ মঙ্গলবারই ভেঙে গুড়িয়ে গিয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা বাঁশের মাচা তৈরি করে পারাপারের ব্যবস্থা করেছেন। এ দিন ওই রাস্তার আরও কয়েক জায়গা জলের তোড়ে ভেঙে গিয়েছে।
অনুপনগর মৌজার চৌধুরীপাড়া ও পারলালপুর গ্রামে এ দিনও ব্যাপক ভাঙন হয়। বিঘার পর বিঘা হলুদ ও শসা চাষের জমি এবং আম বাগান গ্রাস করেছে নদী। মানিকচক ব্লকের জোতপাট্টা, রামনগর এলাকাগুলিতে দু’দিন ধরে গঙ্গার জল ঢুকতে শুরু করেছিল। এ দিন জল বেড়ে যাওয়ায় আরও এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, এ দিন সকাল থেকে ভূতনির হীরানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেও জল ঢুকতে শুরু করে। এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, যেভাবে জল বাড়ছে তাতে ভূতনি চরে থাকা উত্তর ও দক্ষিণ চণ্ডীপুরও প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy