Advertisement
০৩ মে ২০২৪

‘যুদ্ধক্ষেত্র’ শিলিগুড়ি

হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের (ন্যাফ) মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, ‘‘প্রতিটি পাড়ার অলিগলিতে এমন বাজি ফেটেছে যে বাতাসে শুধুই বারুদের গন্ধ। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। কত রোগের প্রকোপ যে বাড়বে, কে জানে! পুলিশও কী করছে জানি না।’’

আতসবাজির এই ধোঁয়াতেই বাড়ে দূষণের আশঙ্কা। শিলিগুড়িতে। ছবি: স্বরূপ সরকার

আতসবাজির এই ধোঁয়াতেই বাড়ে দূষণের আশঙ্কা। শিলিগুড়িতে। ছবি: স্বরূপ সরকার

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৮ ০৫:৩৩
Share: Save:

বাজি ফাটানোর প্রসঙ্গে এত দিন এক কথায় সবার মনে পড়ে যেত খালাপড়া আর সেবক রোডের নাম। বুধবার সেই দুই জায়গার সঙ্গে যেন পাল্লা দেবে বলে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছিল শিলিগুড়ি শহরের অন্য এলাকাগুলিও। বিকট শব্দে পিলে চমকানোর দশা হয়েছে মানুষজনের। হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের (ন্যাফ) মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, ‘‘প্রতিটি পাড়ার অলিগলিতে এমন বাজি ফেটেছে যে বাতাসে শুধুই বারুদের গন্ধ। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। কত রোগের প্রকোপ যে বাড়বে, কে জানে! পুলিশও কী করছে জানি না।’’

খালপাড়া-সেবক রোডের ‘মুকুট’ যে হাতছাড়া হয়েছে তা মানছেন নর্থ বেঙ্গল মার্চেন্ট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সঞ্জয় টিবরেওয়াল। তিনি নিজে খালপাড়ারই বাসিন্দা। তাঁর মতে, ‘‘গোটা ব্যাপারটাই উদ্বেগের।’’ তবে শুধু অন্য এলাকা যখন শব্দ-তাণ্ডবে মাত্রা ছাড়াচ্ছে, সাবেক খালপাড়া আর সেবক রোড সেখানে এই বছর কিছুটা হলেও ক্ষান্ত দিয়েছে বলে তাঁর দাবি। সঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘খালপাড়া আর সেবক রোড মানেই যে দেওয়ালির সময়ে মাত্রাছাড়া বাজির দাপট হয়ে উঠেছিল, সেটা কিন্তু এ বার অনেক কমেছে।’’

কী করছে পুলিশ? প্রশ্নটা তুলছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই। অধিকাংশ পাড়ার বাসিন্দাদেরই অভিযোগ, বুধবার সন্ধ্যা থেকে লাগাতার শব্দে চমকে উঠেছেন তাঁরা। কিন্তু শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার ভরতলাল মিনা জানাচ্ছেন, রাত পর্যন্ত এই ব্যাপারে কোনও জায়গা থেকে কোনও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি।

কেন? বাবুপাড়ার বাসিন্দা আইনজীবী অখিল বিশ্বাস বলেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানোর কথা বললে লোকে তাকে পাগল ভাবছে!’’ তিনি জানাচ্ছেন, বাজির দাপট এ বার এমন ছিল, রাস্তার কুকুরগুলিও কালভার্টের নীচে গিয়ে লুকিয়েছিল। অখিলবাবু বলেন, ‘‘শব্দ শুনে মনে হচ্ছে যেন যুদ্ধক্ষেত্রে বসে রয়েছি। সমাজের রাশটাই এ ভাবে একটু একটু করে আলগা হয়ে যাচ্ছে।’’

কী করা যেত?

পরিবেশকর্মী সুজিত সাহার মতে, সচেতনতাই হাতিয়ার। শিলিগুড়ির শহরের বাতাসে দূষণের মাত্রা নিয়ে আরও প্রচার বাড়ালে বাজির উৎপাত কিছুটা কমানো যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্ট দেখলেই জানা যায়, কী ভাবে দূষণের মাত্রা ক্রমশ চড়ছে এই শহরের বাতাসে। সেই রিপোর্টই বলছে, গত মার্চে শিলিগুড়ির বাতাসের দূষণ পিছনে ফেলে দিয়েছিল দেশের বাকি ৫৫টি শহরকে। এই সমস্ত কথা মানুষের কানের ভিতর দিয়ে মর্মে ঢুকিয়ে দেওয়া দরকার বলে মনে করেন সুজিতবাবু।

তিনি বলেন, ‘‘প্রতিটি এলাকায় বিধি মেনে নির্দিষ্ট সময়েই যাতে বাজি ফাটানো হয়, সেটা পুলিশকে দেখতে নির্দেশ দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। অনেক জায়গায় তার পরেও কোনও পদক্ষেপ হচ্ছে না। আর সেই থেকেই বেপরোয়া মনোভাব বাড়ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE