Advertisement
০১ মে ২০২৪

চিকিৎসা বিভ্রাট চলছেই এইএস নিয়ে

গত চার বছরে অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রমে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে চারশোর বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন। আক্রান্ত হয়েছেন বহু। তার মধ্যে ২৫ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছেন বা মারা গিয়েছে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে।

সৌমিত্র কুণ্ডু
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৬ ০২:০৬
Share: Save:

গত চার বছরে অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিস সিনড্রমে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে চারশোর বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন। আক্রান্ত হয়েছেন বহু। তার মধ্যে ২৫ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছেন বা মারা গিয়েছে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে। জেই ছাড়া আর কোন ভাইরাস বা জীবাণুর প্রভাবে অ্যাকিউট এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে তা জানতে এখনও পরীক্ষা ব্যবস্থা চালুই হল না এ রাজ্যে।

ঠিক ছিল বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ইন্সস্টিটিউট অব মেন্টাল হেল্থ অ্যান্ড নিউরো সায়েন্স-এর উদ্যোগে মার্চ থেকেই এ রাজ্যে এইএস-এর কারণ আরও বেশ কিছু ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া চিহ্নিত করতে পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু হবে। ভাইরাস চিহ্নিত হলে নির্দিষ্ট চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব। সেই মতো উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বাঁকুড়া এবং বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ থেকে এইএস রোগীদের রক্ত, সুষুম্না রসের নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলিও পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু হওয়ার কথা। এ ক্ষেত্রে ‘অ্যাপেক্স ল্যাবরেটরি’ হিসাবে কাজ করবে কলকাতার স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন। মেডিক্যাল কলেজগুলি থেকে নমুনা সেখানে পাঠানো হবে। ৭২-৯৬ ঘন্টার মধ্যে তারা সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল কলেজে রিপোর্ট পাঠিয়ে দেবেন। পরবর্তীতে ওই তিনটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু হবে। সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন দেশে ‘ইনটেনসিভ সার্ভিল্যান্স ফর জেই অ্যান্ড এইএস’ প্রকল্পে এ রাজ্যেও ওই কাজ করবে। কাজের জন্য অর্থ সাহায্য, কিট এবং অন্যান্য সরঞ্জামও দেবে তারাই। রাজ্য সরকার তরফে চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মী দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন থেকে নমুনা পাঠাতে না বলায় উদ্বেগে রয়েছেন চিকিৎসকরা।

স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান নিমাই ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মার্চে চালু করার কথা থাকলেও বিষয়টি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। আপাতত তিন বছরের জন্য ওই সমীক্ষা করার কথা। ওই তিনটি মেডিক্যাল কলেজে পরীক্ষায় যেগুলি জেই নয় বলে জানা যাচ্ছে সেই নমুনাগুলি এখানে পরীক্ষা করা হবে। ওই কাজের ব্যাপারে মৌ চুক্তি হয়ে গিয়েছে। রাজ্য সরকারের সম্মতিও মিলেছে। কিট এখনও এসে পৌঁছনি। আশা করছি জুলাই মাসের শুরু থেকেই ওই পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে।’’

জুন মাস পড়তেই এইএসের প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা। গত জানুয়ারি থেকে এ বছর এইএসে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। উপসর্গ নিয়ে রোগীরা ভর্তিও হচ্ছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে। তাঁদের অনেকের দেহে জেই র জীবাণু মেলেনি। সেক্ষেত্রে অন্য কোন ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে তা বুঝতে পারছেন না চিকিৎসকরা। চিকিৎসা করতে গিয়ে তাঁদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। গত মার্চ থেকে এইএস রোগীদের নমুনা কলকাতায় পাঠানোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে। সেই মতো উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের তরফে তাঁদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু নমুনা পাঠানো শুরু না হওয়ায় উদ্বেগে রয়েছেন চিকিৎসকরা।

নিমাইবাবু জানান, মেডিক্যাল কলেজগুলিতে জেই নির্ধারণের জন্য এলাইজা পরীক্ষা হত। এখানে আরও নিশ্চিত হতে প্রথমে ‘মলিউকুলার’ পদ্ধতিতে জেই পরীক্ষাও হবে। জেই ভাইরাস না মিললেও আরও অনেক ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার জন্য এইএস হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে হারপেস সিমপ্লেক্স, ওয়েস্ট নাইল বা ভ্যারিসেলা জুস্টার ভাইরাস। পরীক্ষা হলে সে সব ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট চিকিৎসাও আছে। তাই ওই সমস্ত জীবাণু চিহ্নিতকরণ করা গেলে রোগ প্রতিরোধ করার কাজ আরও ভাল করা যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

acute encephalitis syndrome Medical Test
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE