ছাত্র খুন ও হাঙ্গামার জেরে বুধবারও দিনভর থমথমে ছিল কালিয়াচকের নওদা যদুপুর। ঝাঁপ বন্ধ ছিল এলাকার বেশিরভাগ দোকানপাটের। বন্ধ ছিল বাজার। রাস্তাঘাট ছিল শুনশান। নতুন করে কোনও গোলমাল না হলেও মঙ্গলবার রাতেও এলাকায় ফের বোমাবাজি হওয়ায় বাসিন্দাদের আতঙ্ক কাটছে না।
এ দিন সকালের দিকে যদুপুর বাজার চত্বরে পুলিশ পিকেট নজরে এলেও দুপুরে কেবলমাত্র টহলদারি ভ্যানের দেখা মিলেছে। নওদা যদুপুরে লাগাতার অশান্তির প্রেক্ষিতে পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ দাড়িয়াপুর নাগরিক কমিটি। তারা গ্রামের বিভিন্ন মহল্লায় বোর্ড ঝুলিয়ে বেশ কিছু নির্দেশিকাও জারি করেছে।
এলাকার দখলদারি ও পঞ্চায়েতের কর্তৃত্ব নিয়ে প্রায় পাঁচ বছর ধরে নওদা যদুপুরের দুই ত্রাস বকুল শেখ ও জাকির শেখের গোষ্ঠীর লড়াই চলছে বলে অভিযোগ। এলাকায় খুন-জখম লেগেই রয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা জানান, ওই দুই গোষ্ঠীর লড়াইয়ের জন্য তাঁদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। অথচ পুলিশ কোনও পদক্ষেপই করছে না। অভিযোগ, বাবাকে না পেয়ে সাবির মোমিন নামে ১২ বছরের ওই ছাত্রটিকে সোমবার রাতে তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। ওই নৃশংস ঘটনার জেরে মঙ্গলবার তেতে উঠেছিল নওদা যদুপুর। জাতীয় সড়ক অবরোধের পাশাপাশি ক্ষিপ্ত জনতা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি এমন ঘোরালো হয়ে উঠেছিল যে বন্দুক ফেলে পালিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। পরে অবশ্য জেলা থেকে বিশাল পুলিশবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। ওই খুনের ঘটনায় পাঁচ মহিলা-সহ আট জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
যদিও বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশের অভিযানের চলাকালীনই মঙ্গলবার রাতে এলাকায় ব্যাপক বোমাবাজি হয়। দিনভরই তাই আতঙ্কিত ছিলেন এলাকার মানুষ। এলাকার বস্ত্র ব্যবসায়ী সোলেমান শেখ বলেন, ‘‘প্রায় দিনই গোলমাল, বোমাবাজি হচ্ছে। এখন রমজান মাস চলছে। বিকেলের পর বেচাকেনা ভালোই হয়। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে জীবন বাঁচাবো না দোকান খুলব সেই চিন্তাই করছি।’’
চায়ের দোকানি গোলাম শেখ বলেন, ‘‘সকালে এক ঘণ্টা দোকান খুলেছিলাম। লোক না থাকায় এক কাপ চা বিক্রি করতে পারিনি। এলাকার গোলমালের প্রভাব পড়ছে সংসারে।’’ এলাকায় শান্তি আনার লক্ষ্যে তৈরি দাড়িয়াপুর নাগরিক কমিটির এক সদস্য প্রবীণ শিক্ষক মহম্মদ নেজামুদ্দিন বলেন, ‘‘আমরা নাগরিক সমাজ এলাকায় শান্তি চাই। কমিটির তরফে এলাকায় বোর্ড ঝুলিয়ে প্রচার করা হয়েছে। দাড়িয়াপুরের কোনও বাসিন্দার কাছ থেকে জবরদস্তি টাকা তোলা যাবে না, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘোরা যাবে না। এসব হলে গ্রামবাসীরাই বিরোধিতা করবে। এছাড়া গ্রামের মানুষকে নেশার জিনিস খেতেও নিষেধ করা হয়েছে।’’ পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা চলছে। ছাত্র খুনের ঘটনায় আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy