Advertisement
E-Paper

এই প্রথম মানুষের পা পড়ল পাহাড়ে ঘেরা ভেজা জঙ্গলে

আমরা বন দফতরের সঙ্গে সামিল হয়ে সমীক্ষা করতে বনে ঢুকে পড়েছি। দশ দিন ধরে সমীক্ষা চলবে। ৩টি ক্যাম্প করে সমীক্ষা হবে। অ্যাসালে ক্যাম্প ১৮০০ থেকে ২ হাজার ফুচ উঁচুতে, মৌচুকি আড়াই থেকে ৪ হাজার ফুট এবং শেষে ডোলে ক্যাম্পে সমীক্ষা হবে।

অনিমেষ বসু

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৮ ০২:৫৫

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কয়েক হাজার ফুট উঁচু এই ঘন জঙ্গলের কোনও অংশে দিনের আলো পর্যন্ত ঢোকে না। একা পা ফেললে গা ছমছম করে উঠবেই। কেমন ভেজা ভেজা ভাব গোটা বনে। কত রকমের পাখির ওড়াওড়ি। বিশাল প্রাচীন কিছু গাছে শ্যাওলা ধরে রয়েছে। দেখা যায় কত ধরনের গুবড়ে পোকা, প্রজাপতির উড়ে বেড়ানোর ছবি। বাজখাঁই কর্কশ কণ্ঠে গাছের আড়ালে লুকিয়ে ডাকে ধনেশের মতো কোনও পাখি। ময়ূরের চেঁচামেচি। কত সুন্দর গাছগাছালি, রঙিন ছত্রাকও। এগুলির কোনটাই এতদিন সরকারি ভাবে লিপিবদ্ধ হয়নি।

তাই আমরা বন দফতরের সঙ্গে সামিল হয়ে সমীক্ষা করতে বনে ঢুকে পড়েছি। দশ দিন ধরে সমীক্ষা চলবে। ৩টি ক্যাম্প করে সমীক্ষা হবে। অ্যাসালে ক্যাম্প ১৮০০ থেকে ২ হাজার ফুচ উঁচুতে, মৌচুকি আড়াই থেকে ৪ হাজার ফুট এবং শেষে ডোলে ক্যাম্পে সমীক্ষা হবে। ডোলেও কম উঁচু নয়। নানা উচ্চতায় কত গাছগাছালি, প্রাণী রয়েছে সবই জানা যাবে সমীক্ষায়। জানা যাবে বিভিন্ন উচ্চতায় থাকা জঙ্গলের প্রাণীরা কেমন রয়েছে তাও।

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় তো রয়েইছে সেই সঙ্গে রাজ্যের বিভিন্ন অংশ থেকে এসেছেন বনপ্রাণ এবং উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞরা। এমন একটি সমীক্ষা সারা দেশের গবেষকদের কাছে নতুন দিগ্ন খুলে দেবে। গত ৩ মার্চ থেকে সমীক্ষা শুরু হয়েছে। সবে মাত্র কয়েকদিন পার হয়েছে। কতরকম গুবরে পোকা, মাছ, মাকড়সা, ফড়িং য়ে দেখা যাচ্ছে! যতদিন যাবে নতুন নতুন প্রাণীর খোঁজ পাব। যে প্রাণী, গাছগাছালি দেখা যাচ্ছে সেগুলির বিষয়ে বিস্তারিত নথি তৈরি করা হয়েছে। সমীক্ষা শেষ হলে চমকপ্রদ অনেক তথ্যই সমানে আসতে পারে।

সবে দুদিন পেরোল। এখানে মোবাইলের নেটওয়ার্ক অধিকাংশ জায়গাতেই মেলে না। ফলে, নিয়মিত যোগাযোগ রাখাও মুশকিল। তারই মধ্যে যখন সুযোগ মিলছে একটু করে অভিজ্ঞতা পাঠানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। প্রথম দুদিনের নিরিখে বলতে পারি, যে জায়গায় আমরা এখন রয়েছি তা মানুষের স্পর্শ না পাওয়া একটা জঙ্গল। গাছগাছালিতে ভরা। অসংখ্য বন্যপ্রাণী। ‘ভার্জিন’ জঙ্গলের বাংলা তর্জমা মানুষের স্পর্শ না পাওয়া জঙ্গল বলাই যেতে পারে।

দেশের মধ্যে নেওড়া ভ্যালির জঙ্গল তাই স্বতন্ত্র। গত বছরই ট্র্যাপ ক্যামেরায় রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ছবি পাওয়া গিয়েছে। তাতে উৎসাহিত রাজ্য তো বটেই সারা দেশের পরিবেশ প্রেমীরা। তবে জঙ্গল বলতে শুধু বড় বড় প্রাণী নয়, জঙ্গল মানে গুবড়ে পোকা, সাপ, ফড়িঙেরও। এদের খোঁজও পাচ্ছি আমরা। প্রায় ১৬০ কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে এই জঙ্গল। এ মাথা ও মাথা ঘুরে বেড়াচ্ছি নানা দলে ভাগ হয়ে। এককেকটি দলের একেক ধরনের রোমাঞ্চিত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। তবে ক্রমশ মোবাইলের সিগনাল কমে যাচ্ছে। এর পরে নেটওয়ার্কের আওতায় এলে আবার সেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরার চেষ্টা করব।

(লেখক হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের কো-অর্ডিনেটর)

Survey Neora Valley National Park Himalayan Nature and Adventure Foundation Research
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy