Advertisement
০৪ মে ২০২৪
তৎপর পুলিশ

অনাস্থা নিয়ে ফের তাতছে কালিয়াচক

ফের তেতে উঠছে মালদহের কালিয়াচকের নওদা যদুপুর।এবার অশান্তির মেঘ ঘনিয়েছে তৃণমূল প্রধানের বিরুদ্ধে খোদ দলের পঞ্চায়েত সদস্যরাই অনাস্থা ডাকায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৬ ০২:১৭
Share: Save:

ফের তেতে উঠছে মালদহের কালিয়াচকের নওদা যদুপুর।

এবার অশান্তির মেঘ ঘনিয়েছে তৃণমূল প্রধানের বিরুদ্ধে খোদ দলের পঞ্চায়েত সদস্যরাই অনাস্থা ডাকায়। নেপথ্যে নওদা যদুপুরের সেই দুই ত্রাস বকুল শেখ বনাম জাকির শেখের লড়াই। দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও এখনও বকুল শেখের হাতেই রয়েছে পঞ্চায়েতের রাশ। তাঁর হাত থেকে পঞ্চায়েত কেড়ে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে দলেরই পঞ্চায়েত সদস্য জাকির শেখ। অনাস্থা ভোট যতই এগিয়ে আসছেই ততই উত্তেজনা বাড়ছে নওদা যদুপুরে।

এরই জেরে আতঙ্ক বাড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যেও। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকায় ক্ষমতা ধরে রাখতে দুই গোষ্ঠীই একাধিকবার প্রকাশ্যে বোমা, গুলি নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। তাঁদের লড়াইয়ে একাধিকবার প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন সময় জখম হয়েছেন গ্রামের মানুষ। তাই আবারও অশান্তির আশঙ্কায় ভুগছেন তাঁরা। কালিয়াচক ১ ব্লকের বিডিও কুন্তল বসু বলেন, ‘‘প্রধানের বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত সদস্যেরা অনাস্থা এনেছেন। পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী আগামী ৭ জুন তলবি সভা ডাকা হয়েছে। তারপরে নিয়ম অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশকে বলা হয়েছে।’’ মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অনাস্থা ভোটের দিন পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। এলাকায় আমাদের নিয়মিত টহলদারি চলছে।’’

পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, কালিয়াচকের নওদা যদুপুরে ২৩টি আসন রয়েছে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সবকটি আসনেই জয়ী হয় তৃণমূল। সেই সময় নওদা যদুপুরের তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি ছিলেন বকুল শেখ। অভিযোগ, বকুলের ভয়ে বিরোধীরা এই অঞ্চলের একটিও আসনে প্রার্থী দিতে না পারায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন তৃণমূলের সদস্যেরা। নওদা যদুপুরের পঞ্চায়েত প্রধান হন বকুল শেখের ভ্রাতৃবধূ ফারহানা বিবি। আর এরপরেই প্রধান পদ নিয়েই তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে।

জানা গিয়েছে, নওদা যদুপুরের তৃণমূল নেতা জাকির শেখ দলের টিকিটে জয়ী হয়ে গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য হন। তিনিও প্রধান পদের দাবিদার ছিলেন। তবে, বকুলের দাপটে প্রধান হতে পারেননি জাকির শেখ। বকুল শেখ তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি থাকায় কোনঠাসা হয়ে পড়ে জাকির শেখ। তবে অস্তিত্ব জানান দিতে একাধিকবার দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বোমা, গুলি নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে। এমনকী ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কেও দুই গোষ্ঠীর অনুগামীরা সংঘর্ষে জড়িয়েছে। আর তাঁদের সংঘর্ষের জেরে নিরীহ ট্রাক চালক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষেরও মৃত্যু হয়েছে।

গত সেপ্টেম্বর মাসে বকুল শেখকে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কার করেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। বকুল দল থেকে বহিষ্কার হতেই তাঁকে গ্রেফতারে তৎপর হয়ে ওঠে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বকুলের বিরুদ্ধে খুন, তোলাবাজি, বোমাবাজির মতো আটটি মামলা রয়েছে। তবে এখনও বকুলকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। বকুল কোণঠাসা হয়ে পড়তেই স্বমহিমায় চলে আসে ওই অঞ্চলের তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য জাকির শেখ। তবে তাঁর বিরুদ্ধেও খুন, বোমাবাজির ছ’টি মামলা রয়েছে। দু’জনই ফেরার রয়েছে বলে দাবি পুলিশের।

তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতির পর এবার প়ঞ্চায়েত প্রধানের পদে থাকা বকুলের ঘনিষ্ঠকে সরাতেও মরিয়া হয়ে উঠেছে দলের পঞ্চায়েত সদস্যদের একাংশ। পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৯ মার্চ প্রধানের অপসারণ চেয়ে ব্লক প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছিলেন এই পঞ্চায়েত সদস্যরা। সেই চিঠিতে দলের ১১ জন পঞ্চায়েত সদস্য স্বাক্ষর করেছিলেন। প্রত্যেকেই জাকির ঘনিষ্ঠ বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। তাঁদের দাবি, ভোট হলে আরও পঞ্চায়েত সদস্য প্রধানের বিরুদ্ধে রায় দেবেন। নিয়ম অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে আস্থা প্রমাণ করতে হয় প্রধানকে। তবে প্রধান আস্থা প্রমাণ না করায় প্রশাসন আগামী ৭ জুন তলবি সভা ডেকেছে।

তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য জাকির শেখ বলেন, ‘‘দলের বিরুদ্ধে আমরা অনাস্থা ডাকিনি। ডেকেছি প্রধানের বিরুদ্ধে। এখানে প্রধান কোনও কাজ করছেন না। তিনি দলের সদস্যদের গুরুত্ব দিচ্ছেন না। নিজের খেয়াল খুশি মতো পঞ্চায়েত চালাচ্ছেন। তাঁর দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনাস্থা ডাকা হয়েছে।’’অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা সমালোচনা করেছেন বকুল শেখের ভ্রাতৃবধূ তথা তৃণমূলের প্রধান ফারহানা বিবি। তিনি বলেন, ‘‘ভোটাভুটিতে আমরাই জিতব। আমি কাজ করছি কিনা তা মানুষ জানেন। আর জাকিররা প্রধান পদ দখল করলে এলাকায় কি হবে তাও মানুষ জানেন।’’

এ দিকে, দলের প্রধানের বিরুদ্ধে খোদ তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যরা অনাস্থা আনায় অস্বস্তিতে পড়েছে জেলা নেতৃত্ব। তাই এই বিষয়ে এড়িয়ে গিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘এই বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। তাই এখনই কিছু বলতে পারব না। আমি পরে খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Pradhan No-confidence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE