Advertisement
E-Paper

জনবহুল নিশ্চয় যান, কোলে শিশু নিয়ে অপেক্ষা

সন্তান কোলে নিয়ে কেউ ৩০ মিনিট। কেউ আবার এক ঘণ্টা ধরে বসে রয়েছেন গাছ তলায়। তবুও মিলছে না নিশ্চয় যান। মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নিশ্চয় যান নিয়ে এমনই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মায়েদের। এমনকী, একটি নিশ্চয় যানে একাধিক মায়েদের চাপাচাপি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ।

অভিজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৬ ০৮:০৯
(বাঁ দিকে) হাসপাতাল চত্বরেই শিশু কোলে নিয়ে অপেক্ষা। (ডান দিকে) একই গাড়িতে তোলা হচ্ছে একাধিক মায়েদের। —নিজস্ব চিত্র।

(বাঁ দিকে) হাসপাতাল চত্বরেই শিশু কোলে নিয়ে অপেক্ষা। (ডান দিকে) একই গাড়িতে তোলা হচ্ছে একাধিক মায়েদের। —নিজস্ব চিত্র।

সন্তান কোলে নিয়ে কেউ ৩০ মিনিট। কেউ আবার এক ঘণ্টা ধরে বসে রয়েছেন গাছ তলায়। তবুও মিলছে না নিশ্চয় যান। মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নিশ্চয় যান নিয়ে এমনই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মায়েদের। এমনকী, একটি নিশ্চয় যানে একাধিক মায়েদের চাপাচাপি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ।

সদ্যোজাতদের নিয়ে ছোট গাড়িতে চাপাচাপি করে যাতায়াত করতে হয় মায়েদের। ফলে মা ও শিশু দু’জনই বাড়ি ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ পরিবারের। এর জন্য মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন তাঁরা। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মালদহ মেডিক্যালের নিশ্চয় যান সংগঠনের নেতৃত্বরা। সংগঠনের সম্পাদক সহদেব দাস বলেন, ‘‘এখানে পর্যাপ্ত গাড়ির অভাব রয়েছে। কর্তৃপক্ষকে জানালেও লাভ হয়নি। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী এক জন করে রোগীকেই আমরা নিয়ে যাই। অনেক সময় প্রয়োজনে রোগীদের অনুরোধে দু’জন করে নিয়ে যাওয়া হয়।’’ বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছেন মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালে ২০টি নিশ্চয়যান রয়েছে। বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারের প্রসূতিরা হাসপাতালে পৌঁছনো এবং হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার ক্ষেত্রে বিনা মূল্যে এই যানের সুবিধা পান। মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, দৈনিক গড়ে ৫০ জন করে প্রসূতি হাসপাতালে ভর্তি হয়। আর গড়ে ৪০ জন প্রসূতি মেডিক্যাল কলেজে সন্তান প্রসব করেন। তার মধ্যে ২০ শতাংশের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসব হয়। কিন্তু, হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিশ্চয় যান পেতে কালঘাম ছুটে যায় রোগীর আত্মীয়দের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মেডিক্যাল কলেজের বাইরে সদ্যোজাতদের নিয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে হয় মায়েদের।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি নিশ্চয় যানে এক জন করে রোগী নিয়ে যাওয়ার নিয়ম রয়েছে। প্রসূতির সঙ্গে তাঁর পরিবারের দু’জন করে থাকতে পারেন। তবে সেই নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিশ্চয় যান চালকেরা অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছেন বলে অভিযোগ। অভিযোগ, অন্তত দু’জন না হলে গাড়িতে প্রসূতি বা মায়েদের নিতেই চান না তাঁরা। ফলে মায়েদের কপালে লেখা থাকে শিশু কোলে গাছ তলায় অপেক্ষা। এ ছাড়া, বিনা খরচে যাতায়াতের নিয়ম থাকলেও রোগীর আত্মীয়দের কাছ থেকে দেড়শো থেকে দুশো টাকা করে নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ।

তিন দিনের সন্তান কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা হবিবপুরের গোলাপি বাস্কে বলেন, ‘‘নিশ্চয় যানের জন্য এক ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। কারণ, আমাকে একা নিয়ে যাবে না চালকেরা। আমার এলাকার আরও এক জন প্রসূতি এলে তবেই আমি যেতে পারব।’’ এমনই অভিজ্ঞতা পুরাতন মালদহের যাত্রাডাঙার জাহানারা বিবির। তিনিও বলেন, ‘‘সাত দিন আগে অস্ত্রোপচার করে ছেলে হয়েছে। গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকলেও আমাকে নিয়ে যাচ্ছে না। যত ক্ষণ না পুরাতন মালদহের যাত্রী আসবে তত ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। আমার মতো অনেক মা-ই চড়া রোদে শিশুদের নিয়ে গাড়ির অপেক্ষায় বসে আছেন।’’ এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নজর দাবি করেন রোগীর পরিজনেরা।

কালিয়াচকের এক আশা কর্মী সালেহা বিবি বলেন, ‘‘প্রত্যেক প্রসূতির সঙ্গে এক জন করে আশা কর্মী আসেন। একটি গাড়িতে দু’জন করে রোগী নেওয়ার ফলে ছোট গাড়িতে সব মিলিয়ে আট জন মতো হয়ে যাচ্ছেন। ফলে চাপাচাপিতে যেমন সদ্যোজাতদের সমস্যা হচ্ছে, তেমনই মায়েদেরও সমস্যা হচ্ছে।’’ এই বিষয়ে হাসপাতালের সুপার তথা সহ অধ্যক্ষ অমিত কুমার দাঁ বলেন, ‘‘এমন অভিযোগ আমার কাছে কখনও আসেনি। তবে এমন হলে তা প্রশয় দেওয়া হবে না। শীঘ্রই খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।’’

Malda hospital and college Patient Bus route
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy