Advertisement
১১ মে ২০২৪

সব আছে শুধু কাজই বাড়ন্ত

ঝাঁ চকচকে দফতরে দামি কম্পিউটার, চেয়ার, টেবিল সবই আছে। আছেন ডজনেরও বেশি কর্মচারী। নেই শুধু ফাইলের চাপ। তাই কাগজ পড়ে, চায়ে চুমুক দিয়ে আড্ডার ঝড় তুলে দিন কাটে কর্মীদের। রাজ্য সরকার গঠিত টি ডিরেক্টরেটের বাস্তব ছবি ঠিক এটাই।

ভবন: এমনই ঝাঁ চকচকে অফিস টি ডিরেক্টরেটের। নিজস্ব চিত্র

ভবন: এমনই ঝাঁ চকচকে অফিস টি ডিরেক্টরেটের। নিজস্ব চিত্র

শুভঙ্কর চক্রবর্তী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৮ ০৯:২০
Share: Save:

ঝাঁ চকচকে দফতরে দামি কম্পিউটার, চেয়ার, টেবিল সবই আছে। আছেন ডজনেরও বেশি কর্মচারী। নেই শুধু ফাইলের চাপ। তাই কাগজ পড়ে, চায়ে চুমুক দিয়ে আড্ডার ঝড় তুলে দিন কাটে কর্মীদের। রাজ্য সরকার গঠিত টি ডিরেক্টরেটের বাস্তব ছবি ঠিক এটাই। সোমবার সকালে সংশ্লিষ্ট দফতরে গিয়ে ধরা পরেছে সেই চেনা দৃশ্য। দফতরের এক কর্মী একান্তে মন্তব্য করেন, ‘‘কাজ না দিলে বসেই থাকতে হবে।’’

কেন্দ্রীয় সরকারের টি বোর্ডের অনুকরণে উত্তরের চা শিল্পের উন্নয়নে ২০১৬ সালে ডিরেক্টরেট তৈরি করেছিল রাজ্য সরকার। দুই বছরে সেই ডিরেক্টরেটের কোনও কাজ চোখে পড়েনি কারও। প্রকাশ্যে না বললেও ডিরেক্টরেটের একাধিক পদস্থ কর্তা ‘অফ দ্য রেকর্ড’ স্বীকার করে নিয়েছেন ডিরেক্টরেটের কোনও কাজ না থাকায় সংশ্লিষ্ট কর্মীরা প্রয়োজন অনুসারে মাঝেমধ্যে রাজ্য সরকারের অন্য দফতরের কাজ করছেন। বর্তমানে কাউন্সিলের চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, ‘‘আমি ১৩ মাস হল দায়িত্ব পেয়েছি। একাধিক বৈঠক করে বেশ কিছু পরিকল্পনা হয়েছে। রূপরেখা চূড়ান্তের প্রক্রিয়া চলছে। চা শ্রমিক তো বটেই, সামগ্রিকভাবে চা শিল্পের উন্নতির জন্য অনেক কাজ হবে।’’

প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হওয়াতে ২০১৭ সালে টি ডিরেক্টরেটকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের দফতরের নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছিল। ডিরেক্টরেট পরিচালনার জন্য তৈরি করা হয়েছিল ‘টি অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল’। কিন্তু, নিয়মিত সভাই হচ্ছে না ডিরেক্টরেটের। সব মিলিয়ে চা শিল্পের উন্নয়নে রাজ্য সরকার গঠিত ডিরেক্টরেট ও কাউন্সিল বাস্তবে অকেজো হয়ে পরে রয়েছে।

বাগানের শ্রমিকদের মজুরি থেকে বটলিফ কারখানা পরিচালনা চা শিল্পের প্রতিটি কাজের সঙ্গেই যুক্ত রয়েছে শ্রম দফতর। সেই দফতরের কর্তরাও টি ডিরেক্টরেটের কাজকর্ম নিয়ে পুরোপুরি অন্ধকারে। শ্রমমন্ত্রীর পরামর্শদাতা এবং রাজ্যের সহকারী শ্রম কমিশনার পশুপতি ঘোষ বলেন, ‘‘টি ডিরেক্টরেট বা কাউন্সিল কী কাজ করবে, তা আমরাও জানি না। কোথাও কোন কাজের বিজ্ঞপ্তিও জারি করেননি ওরা।’’

শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডে বিবেকানন্দ ভবনেই রয়েছে টি ডিরেক্টরেটের ঝাঁ চকচকে দফতর। দফতরের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত ডিরেক্টর এস পুন্নামলম বলেন, ‘‘ডিরেক্টরেটের কী কাজ হচ্ছে তা এখন বলতে পারবো না। তবে দফতরের কর্মীরা রাজ্যের নির্দেশমতো কাজ করছে।’’

সৌরভ চক্রবর্তী চেয়ারম্যান থাকার সময় ঘোষণা করেন টি ডিরেক্টরেট রাজ্যের কাছ থেকে ১০০ কোটি টাকা অনুদান পেয়েছেন। সেই টাকায় চা শিল্পের উন্নয়ন করা হবে। তবে আদৌ সেই টাকা ডিরেক্টরেটে এসেছে কি না বা কোন কাজ হয়েছে কিনা তাও বলতে পারছে না কেউই। ওই ধরনের কোন টাকার কথা তাঁর জানা নেই বলেই জানিয়েছেন অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর। জয়েন্ট ফোরামের নেতা জিয়াউল আলম বলেন, ‘‘রাজ্য টি ডিরেক্টরেটকে দেখিয়ে চা শ্রমিকদের মন কাড়তে চাইছে। বাস্তবে ওটা মাকাল ফল।’’ চা বাগান মালিকদের সংগঠন টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার তরাই শাখার সম্পাদক সুমিত ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা চাই টি ডিরেক্টরেট চা শিল্পের উন্নয়নে দ্রুততার সঙ্গে সক্রিয় হোক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tea Directorate Work Pressure
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE