Advertisement
E-Paper

রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে গ্রেফতারের দাবি বিরোধীদের

মৃদুভাষী বলেই পরিচিত কোচবিহারে তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের একটি মন্তব্যে ফের ঝড় উঠেছে রাজ্য রাজনীতিতে। রবিবার সকালে কোচবিহার পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে তিনি ভোট প্রচারে বেরিয়ে দলীয় প্রার্থীকে ‘রাজ্য সরকারের প্রার্থী’ বলে ঘোষণা করলেন। বিধায়ক রবিবাবু পূর্ত দফতরের পরিষদীয় সচিবও। এ দিন সকালে এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে তিনি বলেন, “রাজ্য সরকার পুরসভার উন্নয়নে টাকা দেয়। সেই রাজ্য সরকারের প্রার্থী বি‌শ্বনাথ দে। তাঁকে জোড়াফুল চিহ্নে ভোট দেবেন।’’

নমিতেশ ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৩
রবিবার কোচবিহারে পুরভোটের প্রচারে জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।—নিজস্ব চিত্র।

রবিবার কোচবিহারে পুরভোটের প্রচারে জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।—নিজস্ব চিত্র।

মৃদুভাষী বলেই পরিচিত কোচবিহারে তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের একটি মন্তব্যে ফের ঝড় উঠেছে রাজ্য রাজনীতিতে। রবিবার সকালে কোচবিহার পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে তিনি ভোট প্রচারে বেরিয়ে দলীয় প্রার্থীকে ‘রাজ্য সরকারের প্রার্থী’ বলে ঘোষণা করলেন। বিধায়ক রবিবাবু পূর্ত দফতরের পরিষদীয় সচিবও। এ দিন সকালে এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে তিনি বলেন, “রাজ্য সরকার পুরসভার উন্নয়নে টাকা দেয়। সেই রাজ্য সরকারের প্রার্থী বি‌শ্বনাথ দে। তাঁকে জোড়াফুল চিহ্নে ভোট দেবেন।’’

অন্য কোনও দলকে ভোট দিলে এলাকার উন্নয়নও থমকে যাবে বলে রবিবাবু এ দিন দাবি করেছেন। এই ঘটনাতেই বিধি ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। বারবার নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের অভিযোগ ওঠায় রবিবাবুকে গ্রেফতার করার দাবিও তুলেছেন কোচবিহার পুরসভার সিপিএমের বিদায়ী বিরোধী দলনেতা মহানন্দ সাহা। এ দিন সকালে মহানন্দবাবুর ওয়ার্ডেই প্রচার চালিয়েছেন রবিবাবু।

বিধিভঙ্গের অভিযোগ ওঠায় নির্বাচন কমিশন থেকে গত শনিবার রাতে রবিবাবুর থেকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়। এর ২৪ ঘণ্টা না কাটতেই ফের রবিবাবু দলের প্রার্থীকে ‘রাজ্য সরকারের প্রার্থী’ বলে ঘোষণা করায় তিনি নির্বাচন কমিশনকে আমলই দিচ্ছেন না বলে দাবি করেন বিরোধীরা।

এ দিনের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেও ফের রবিবাবুকে শোকজ করেছে কমিশন। এই অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের কাছে যাওয়া হবে বলেও বিরোধীরা জানিয়েছে। গত ৩ এপ্রিল কোচবিহারে তৃণমূলের এক কর্মিসভায় শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতেই ভোটে জিততে দলীয় প্রার্থীদের প্রশাসনিক সহযোগিতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন রবীন্দ্রনাথবাবু। সেই সভায় তাঁর বক্তব্য ছিল, “ভোটটা করার জন্য প্রশাসনিক এবং অন্য যে সব মদত প্রয়োজন হবে, প্রত্যেকটা করব। পঞ্চায়েতে করেছি, লোকসভায় করেছি। যে কোনও মদত করব। জেতার জন্য যা যা দরকার তাই তাই করতে হবে।’’ তবে রবিবাবুর পরে ওই মঞ্চেই পার্থবাবু জানিয়ে দেন, কোনও প্রশাসনিক মদত তারা দেবেন না।

যদিও, বিরোধীদের বক্তব্য, সংবাদমাধ্যমে যাতে কোনও ভুল ব্যাখ্যা না যায় সে কারণেই পার্থবাবু বিষয়টি লঘু করে দিতে চেয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা পূর্ত সচিবের ‘প্রশাসনিক মদতে’র আশ্বাসের পরে জেলা জুড়ে সন্ত্রাস শুরু হয়েছে। এমনকী মালদহ, উত্তর ২৪পরগণা কলকাতাতেও সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে। বিরোধীদের কটাক্ষ সন্ত্রাসের ঘটনা সব ‘রবীন্দ্রনাথ এফেক্ট’।

তাঁর বক্তব্যে বিধিভঙ্গের অভিযোগ ওঠায় রাজ্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কোচবিহারের জেলাশাসকের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে। রবীন্দ্রনাথবাবুকে নোটিশ পাঠিয়ে ৬ এপ্রিলের মধ্যে ব্যাখ্যা চেয়েছে কমিশন। এদিনের অভিযোগ ওঠার পর ফের রবীন্দ্রনাথবাবুকে শোকজ করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ৭ এপ্রিলের মধ্যে উত্তর চেয়ে পাঠানো হয়েছে। কোচবিহার সদর মহকুমাশাসক তথা মহকুমা নির্বাচনী আধিকারিক বিকাশ সাহা বলেন, “রবীন্দ্রনাথবাবুর এদিনের বক্তব্যের ভিত্তিতে ফের নোটিস পাঠানো হয়েছে। দু’দিনের মধ্যে উত্তর চাওয়া হয়েছে। তা হাতে পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

কেন দলের প্রার্থীকে রাজ্য সরকারের প্রার্থী বলেছেন তার জন্য যুক্তিও দিয়েছেন রবিবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘এই ভোটটা উন্নয়নের ভোট। লোকসভার, বিধানসভার ভোট আলাদা। যে দলের কাজ করার ক্ষমতা রয়েছে, যে দল রাজ্যে সরকারে রয়েছে, যে দলের পুরমন্ত্রী রয়েছে সেই দলের প্রার্থীকেই ভোটটা দেওয়া উচিত। অন্য কাউকে দিলে ভোটটা নষ্ট হবে। এলাকার উন্নয়ন থমকে যাবে। অন্য প্রার্থী জিতলে বলবে আমাদের দল ক্ষমতায় নেই, পুরবোর্ডে নেই কী করে উন্নয়ন করব? সে জন্যই বলছি আমাদের প্রার্থীকে জেতান।’’

বাম নেতা তথা ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, “রাজ্য সরকার, রাজ্য নির্বাচন কমিশন তৃণমূলের দলের শাখা সংগঠনের মতো কাজ করছে। নির্বাচন বিধি লঙ্ঘনের পরেও তারা কোনও ব্যবস্থা নেবে না। আমরা মানুষের সামনে এই ভয়ঙ্কর অবস্থার কথা তুলে ধরছি। ভোটেই প্রতিবাদ হবে বলে বিশ্বাস রাখি।’’

কর্মিসভার মতোই এ দিনও তিনি বিধি লঙ্ঘন করেননি বলে রবিবাবু দাবি করেছেন। তাঁর দাবি, তিনি যুক্তিসঙ্গত কথাই বলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনকে সব ব্যাখ্যা দেব। আমি এদিন বলেছি রাজ্যে যে দল ক্ষমতায় রয়েছে সেই দলের প্রার্থীকে ভোট দিন। তৃণমূল রাজ্যে উন্নয়ন করছে। তৃণমূল প্রার্থীকে ভোট দিন। ওই ওয়ার্ডে সিপিএমের দুই দফায় কাউন্সিলর ছিলেন। কোনও উন্নয়ন হয়নি এলাকায়। যে দল রাজ্যে সরকার বা পুরসভায় ক্ষমতায় থাকে না সেই দলের প্রার্থীদের কাজ করার সুযোগ কম থাকে। এটা বাস্তব। এটা মানতে হবে।"

Namitesh Ghosh Police Trinamool municipal election Rabindranath Ghosh Cooch Behar TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy