Advertisement
০৪ মে ২০২৪

পিছু ছাড়ছে না মুজনাই, উদ্বেগ

এ বার আর ফুট ছ’য়েক। গত বর্ষায় ছিল ফুট পনেরো দূরে। তার পরেও রক্ষা পায়নি শঙ্কর, নিতাই, পূর্ণিমাদেবীদের ঘর ও বসত ভিটে। দিনটা ছিল গত বছরের ২১ আগস্ট গভীর রাত। মধ্য রাতের মুষলধারায় বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আস্ত ঘরগুলো নদীতে তলিয়ে যেতে দেখেছেন শঙ্কর, নিতাই ও পূর্ণিমাদেবীরা।

ক্ষীরেরকোটে পাড় ভাঙছে মুজনাইয়ের।—নিজস্ব চিত্র

ক্ষীরেরকোটে পাড় ভাঙছে মুজনাইয়ের।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ফালাকাটা শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৬ ০২:২৭
Share: Save:

এ বার আর ফুট ছ’য়েক। গত বর্ষায় ছিল ফুট পনেরো দূরে। তার পরেও রক্ষা পায়নি শঙ্কর, নিতাই, পূর্ণিমাদেবীদের ঘর ও বসত ভিটে। দিনটা ছিল গত বছরের ২১ আগস্ট গভীর রাত। মধ্য রাতের মুষলধারায় বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আস্ত ঘরগুলো নদীতে তলিয়ে যেতে দেখেছেন শঙ্কর, নিতাই ও পূর্ণিমাদেবীরা। রক্ষা করতে পারেননি ঘরে থাকা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও। ভাসিয়ে নিয়ে যায় জামা-কাপড়, চৌকি-বিছানা এমনকি রান্না করার হাঁড়ি-কড়াইগুলোও। এক বছর অতিবাহিত হতে চললেও সেই রাতটার কথা মনে পড়লে এখনও বুকটা ধড়াস ধড়াস করে তাঁদের। তাঁদের মধ্যে রঞ্জিত বণিক এলাকা থেকেই উচ্ছেদ হয়ে গিয়েছেন। বাকি শঙ্কর শীল, নিতাই বণিক, পূর্ণিমা দাস, সঞ্জিত দাসদের ঘরের পিছনে যেটুকু জায়গা অবশিষ্ট ছিল, সেখানেই একটি করে ঘর তৈরি করে মাথা গোঁজার ঠাঁই করেছেন। ঘর থেকে বের হলেই চোখের সামনে সেই ভাঙন। কিন্তু, ফালাকাটার ক্ষীরেরকোট গ্রামে মুজনাই নদী যে তাদের পিছু ছাড়ছে না। গত কিছু দিন ধরে মাঝে মধ্যে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিতে ফের অল্প অল্প করে ধসে পড়ছে পাড়ের মাটি। বাঁধ কোন দিন যে হবে, কোন দিন তাঁরা নিশ্চিতে ঘুমতে পারবেন—তা জানেন না তাঁরা।

ফালাকাটার বিডিও স্মিতা সুব্বা বলেন, “মুজনাই নদীর ভাঙন রোধের জন্য কাজ করার জন্য সেচ দফতরে জানানো হয়েছে। এখন ওই দফতরের আধিকারিকরা বলতে পারবেন কোন দিন বাঁধের কাজ হবে। তবে, আশা করি অবিলম্বে কাজ শুরু করা হবে।”

জটেশ্বর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষীরেরকোট গ্রামের পঞ্চায়েত শশীমোহন বর্মনও নিশ্চিত করে বলতে পার‍ছেন না বাঁধটা ঠিক কোন দিন হবে। তিনি বলেন, “সেচ দফতরের আধিকারিকরা এসে মাপজোক করে গিয়েছেন। ওদের সাথে কথা বলে জেনেছি নদীর ভাঙন রুখতে পাথর দিয়ে বাঁধ দেওয়া হবে। কিন্তু, কোন দিন বাঁধের কাজ শুরু হবে তা নিশ্চিত করে আধিকারিকরাও বলেননি। ওই পরিবার গুলোর জন্য চিন্তিত আমিও।”

গত চার বছর ধরে ভাঙন চলতে থাকলেও প্রশাসন বাঁধ দেবার কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে একের পর বাড়ি তলিয়ে গিয়েছে নদী গর্ভে। বাসিন্দারা বার বার প্রসাসনের দরজায় কড়া নাড়লেও প্রশাসন উদাসীন থেকেছে। ওই সময়ের মধ্যে গ্রামের বিঘার পর বিঘা জমি চলে গিয়েছে মুজনাই নদীর গর্ভে। দু’বছর আগেও একটি বাড়ি তলিয়ে গিয়েছিল নদীতে। গত বছর এক রাতেই তলিয়ে গিয়েছিল দিন আনি দিন খাই মানুষগুলোর চারটি বাড়ি। তারপরেও হুঁশ ফেরেনি সেচ দফতর বা ব্লক প্রশাসনের।

গত বছর চারটি বাড়ি নদীতে তলিয়ে যাওয়ার পর গত বছর প্রশাসন কিছুটা নড়েচড়ে বসে। বর্ষার মধ্যেই শুরু করা হয় ১০ লক্ষ টাকা খরচ করে বাঁশ দিয়ে চারশো মিটার জায়গা জুড়ে নদীর ভাঙন রোধের কাজ। কিন্তু, বাঁশের কাজ শেষ হতে না হতেই ফের শুরু হয় বন্যা। ফলে, বাঁশের বাঁধ টেকেনি। বেশির ভাগ বাঁশ বন্যার জল ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

বর্ষা এখন শিয়রে। গত বর্ষার পর এক বছরেও শুরু হয়নি বাঁধের কাজ। তাই ফের আতঙ্কের দিন গুনছেন বাসিন্দারা। এলাকার মানুষের অভিযোগ ও আশঙ্কা, ‘‘অতি দ্রুত বাঁধের কাজ শুরু না হলে এ বারও বর্ষায় বাড়ি-ঘর তলিয়ে যাওয়ার চিন্তায় আছি। শুনছি এবার পাথরের বাঁধ হবে। কিন্তু, কেউ জানে না কোন দিন কাজ শুরু হবে। বাঁধ তৈরি নিয়ে সরকারের আঠারো মাসে বছরের মনোবৃত্তি আমরা মানব না। অবিলম্বে কাজ শুরু করা দরকার । নইলে সামনের বর্ষায় যে ঘরগুলি আছে সেগুলিও আর থাকবে না।’’

তাঁদের দাবি, পাথরের বাঁধ দিতে গেলেও সময় লাগবে। সেই কাজ অতি দ্রুত শুরু করা না হয় তাহলে প্রায় শুরু হওয়া বর্ষায় সেই কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না। নদীর পাড়ে পাথর বোঝাই ট্রাক নিয়ে যাবার বিকল্প কোনও রাস্তা নেই। নদীর পাড় থেকে প্রায় চারশো মিটার দূরে গ্রামীণ পাকা রাস্তা। ভাঙন কবলিত নদীর পাড়ে পাথর বোঝাই ট্রাক নেওয়ার বিকল্প রাস্তা বলতে ঢালু ও এবড়ো খেবড়ো জমি।

ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দা নিতাই বণিক বলেন, “অনেক টালবাহনা সয়েছি। সেচ দফতরের আধিকারিক এসে ভাঙন দেখে গিয়েছেন। কিন্তু শুধু দেখে গেলে হবে? গত বর্ষায় শেষ পর্যন্ত বাঁশের বাঁধ দিয়ে ১০ লক্ষ টাকা জলে গেল। এ বার ওই সব চলবে না। পাথর কংক্রিটের বাঁধ চাই। বাঁধ না হলে পথে বসতে হবে।”

ফালাকাটার ব্লকের সেচ বিষয়ের কাজ কর্ম দেখা হয় বীরপাড়া সেচ সেকশনের দফতর থেকে। বীরপাড়া সেচ সেকশনের আধিকারিক সুপ্রিয় দাস বলেন, “ওই বাঁধ দিতে গেলে ১৫০ কোটি টাকার প্রয়োজন। কিন্তু মাত্র ৪২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এই টাকা দিয়েই এই বর্ষার আগেই বাঁধের কাজ শুরু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mujnai river erosion Citizen
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE