Advertisement
E-Paper

নোট ভেদে দর বদল

একেই ধানের দাম কমতির দিকে। এর উপরে তৈরি হয়েছে নতুন উপসর্গ—পুরনো এবং নতুন নোটে ‘দু’রকম দাম’ দিতে চাইছে ফড়েরা। এই অভিযোগে ফড়েদের বিরুদ্ধে দক্ষিণ দিনাজপুরের একাধিক হাটে ধান চাষিরা বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৪৩
বালুরঘাট-হিলি জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভে চাষিরা। — অমিত মোহান্ত

বালুরঘাট-হিলি জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভে চাষিরা। — অমিত মোহান্ত

একেই ধানের দাম কমতির দিকে। এর উপরে তৈরি হয়েছে নতুন উপসর্গ—পুরনো এবং নতুন নোটে ‘দু’রকম দাম’ দিতে চাইছে ফড়েরা। এই অভিযোগে ফড়েদের বিরুদ্ধে দক্ষিণ দিনাজপুরের একাধিক হাটে ধান চাষিরা বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন।

রবিবার জেলার ধান কেনাবেচার বড় হাট বালুরঘাটের কামারপাড়া, গঙ্গারামপুরের শিববাড়ি এবং তপন ব্লকের চামটাকুঁড়িতে হাট শুরু হতেই ছোট ধান চাষিদের বিক্ষোভ থেকে পথ অবরোধ সামলাতে হিমশিম খেতে হয় প্রশাসনকে।

এ দিন সকাল থেকে কামারপাড়া হাটে চাষিরা ভিড় করেন। ধান বিক্রি করতে গেলে তাঁদের পুরনো বাতিল ৫০০টাকা ধরিয়ে দেয় ফড়ে ও আড়তদারেরা। চাষিরা বাতিল নোট নিতে অস্বীকার করেন।

চাষিদের অভিযোগ, বাতিল টাকায় মণ প্রতি ধানের দাম ৩০০ টাকা দেওয়া হচ্ছে। অথচ নতুন বা চলতি টাকায় মণ প্রতি ধানের দাম ২৬০ টাকা ধার্য হয়েছে। সেখানে গত হাটে প্রতি মণ ধানের দর ছিল ৩৫০ টাকা। এ দিন এক দিকে মণ পিছু দর কমে ৩০০ টাকা হয়। অন্য দিকে ফড়েরা নতুন ২০০০ এবং চলতি টাকায় দাম মেটানোর শর্তে কম দাম দিতে চায়। এই অভিযোগেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন চাষিরা।

ন্যায্য দামে ধান বেচতে না পেরে বেলা ১১টা নাগাদ হাট থেকে বেরিয়ে চাষিরা কামারপাড়া মোড়ে বালুরঘাট-হিলি ৫১২ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছলে ফড়ে ও আড়তদরেরা গা ঢাকা দেয়। শেষে পুলিশ এবং হাট মালিকের হস্তক্ষেপে এক ঘণ্টা বাদে অবরোধ উঠলেও এ দিনের মতো কামারপাড়ার মতো বড় হাটে ধান কেনাবেচা পুরো বন্ধ হয়ে যায়। কামারপাড়ায় হাটবারে রোজ অন্তত ২০০০ টন ধান বেচার সুযোগ পান চাষিরা। এতে ধান বস্তায় ভরা থেকে লরিতে ওঠানোর কাজে যুক্ত শতাধিক শ্রমিকের রোজগারে কোপ পড়েছে।

তা ছাড়া দু-চার মণ ধান নিয়ে হাটে বেচতে না পেরে চরম বিপাকে পড়ে যান ছোট চাষিরা। এলাকার হরিপুরের এক ছোট চাষি নকুল পাহান তিন মণ ধান বিক্রির ব্যবস্থা করে দিতে হাটের কাছারি কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হন। নকুলবাবুর আর্তি, ‘‘বাড়িতে ছেলের অসুখ। ধান বিক্রি করে টাকা না পেলে ছেলের চিকিৎসা হবে না।’’ এলাকার ধানের আড়ত ব্যবসায়ী বাবলু মণ্ডল বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ক থেকে নতুন নোটের সরবরাহ না পেয়ে আমরা চরম সমস্যায় পড়েছি। সামান্য কিছু ২০০০ টাকার নোট আছে। পুরনো ৫০০ টাকাই বেশি। নতুন নোটে সব চাষির ধান কেনা সম্ভব নয়। ফলে কিছু ব্যবসায়ী পুরনো ও নতুন নোট ভেদে দু’রকম দামে ধানের টাকা দিতে চেয়েছিল।’’ কামারপাড়ার মতো এ দিন গঙ্গারামপুরের শিববাড়ি হাটে চাষিরা ধান বেচতে না পেরে তুমুল বিক্ষোভ দেখান। তপনের চামটাকুঁড়ি হাটেও এ দিন দুপুরে ধান বেচতে গিয়ে চাষিরা একই পরিস্থিতির মুখে পড়েন। দূর থেকে গরুর গাড়ি এবং ভ্যানোতে বস্তা চাপিয়ে নিয়ে এসে দাম না পেয়ে চাষিরা অকুলপাথারে পড়েন। নতুন নোটের বদলে বতিল নোটে ধান বিক্রিতে আপত্তি জানালে ফড়েরা মণ প্রতি দাম কমিয়ে দেন বলে অভিযোগ। সেখানেও বালুরঘাট-তপন রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান শতাধিক চাষি।

খবর পেয়ে এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন তপনের জয়েন্ট বিডিও বিশ্বজিৎ দত্ত। আজ, সোমবার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বালুরঘাটে হাট মালিক, চাষি এবং ধানের আড়ত ব্যবসায়ীর প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন মহকুমাশাসক।

Paddy farmers Demonetisation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy