Advertisement
E-Paper

হাওয়া দিলে আতঙ্ক বাড়ে

এ যেন চড়া রোদে তুষার ঝড়। চারদিকে শুধু সাদাটে ঘন আস্তরণ। সাদা গুঁড়োয় ঢেকে গিয়েছে শহরের সবুজ। গাছের পাতা থেকে ঘরের মেঝে সাদা গুঁড়োয় ঢাকা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৮ ০৮:০০
বাতাসে বিষ: বায়ুদূষণের কবলে পড়েছে গোটা বীরপাড়া। রেলের হিসেবে প্রতিদিন গড়ে ডলোমাইট ভর্তি তিনশো ট্রাক আসে শহরে। নিজস্ব চিত্র

বাতাসে বিষ: বায়ুদূষণের কবলে পড়েছে গোটা বীরপাড়া। রেলের হিসেবে প্রতিদিন গড়ে ডলোমাইট ভর্তি তিনশো ট্রাক আসে শহরে। নিজস্ব চিত্র

এ যেন চড়া রোদে তুষার ঝড়। চারদিকে শুধু সাদাটে ঘন আস্তরণ। সাদা গুঁড়োয় ঢেকে গিয়েছে শহরের সবুজ। গাছের পাতা থেকে ঘরের মেঝে সাদা গুঁড়োয় ঢাকা। বীরপাড়ার বাসিন্দাদের দাবি, এই জনপদে হাওয়ার রং সাদা। তীব্র গরমেও হাওয়া দিলে বাসিন্দাদের বুক কাঁপে, এই বুঝি হাওয়ার সঙ্গে একদলা ডলোমাইট ঘরে ঢুকে পড়ল। সকাল থেকে মাঝরাত শহরের বাতাসে ওড়ে ডলোমাইটের গুঁড়ো। তার জেরে শহরের বাসিন্দাদের বড় অংশ শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে রাশি রাশি গাছ। প্রভাব পড়ছে চা বাগানেও। চা বাগান কর্তৃপক্ষের একাংশের দাবি, চা পাতার গুণমান মার খাচ্ছে গুঁড়ো ডলোমাইটের জন্য। বছরের পর বছর এমন চললেও পরিস্থিতি বদলায় না বীরপাড়ায়।

সকাল হতেই ভুটান পাহাড় থেকে গাড়িতে গাড়িতে ডলোমাইট এসে পৌঁছয় দলগাঁও-বীরপাড়া রেল স্টেশনে৷ তারপর সেই ডলোমাইট ট্রেনে করে পাঠানো হয় ভিন্ রাজ্যে। আবার কখনও বোকারো। এ ভাবেই ভুটান পাহাড় থেকে ডলোমাইট কেটে এনে দেশের নানা প্রান্তে পাঠানো হয়। ট্রাকে করে ডলোমাইট নিয়ে আসার সময় গুঁড়ো ছড়ায়। স্টেশনে ট্রাকের ডালা থেকে ডলোমাইট উঁচু থেকে ফেলা হয়, সেগুলিকে ফের ওয়াগানে তোলা হয়। সব প্রক্রিয়ায় গুঁড়ো ছড়াতে থাকে বাতাসে। অভিযোগ, তার জেরে বায়ুদূষণের কবলে পড়েছে গোটা বীরপাড়া এলাকা। রেলের হিসেবে প্রতিদিন গড়ে তিনশো ট্রাক ডলোমাইট বয়ে আসে শহরে।

ডলোমাইটের কবল থেকে বীরপাড়াকে বাঁচাতে এ বছর বারাসাত আদালতে জনস্বার্থ মামলা করেন এলাকার বাসিন্দা সঞ্জয় মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘রেলের পণ্য পরিবহণে আলিপুরদুয়ার জংশন ডিভিশনকে একটি বড় অংশের লাভ দিয়ে থাকে ডলোমাইট পরিবহণ। তাই রেল মানুষের সমসার দিকটি দেখে না।’’ আলিপুরদুয়ারের ডিআরএম চন্দ্রবীর রমণ অবশ্য বলেন, ‘‘দলগাঁও বীরপাড়া রেল স্টেশন থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই ডলোমাইট লোডিং আনলোডিং শেড তুলে মুজনাই রেল স্টেশনের পাশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। খুব দ্রুত কাজ চলছে।’’

বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, আলিপুরদুয়ার জংশন ডিভিশনের রেলের একাংশের আধিকারিকদের সঙ্গে ডলোমাইট ব্যবসায়ীদের যোগাযোগ রয়েছে। সেই কারণে ওই শেড সরানো হচ্ছে না। ডলোমাইট নিয়ে রাজনীতিও রয়েছে। এর আগে এলাকার বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিগ্গা দলগাঁও-বীরপাড়া রেল স্টেশনে ঢুকে রেলেরই কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ওই স্টেশন থেকে ডলোমাইট ‘লোডিং আনলোডিং’ বন্ধ করতে তিনি লাগাতার আন্দোলনও শুরু করেন। কিছু দিন পরে সেই আন্দোলন থিতিয়ে যায়। মনোজ টিগ্গাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "এ সমস্যাটি মানুষের। প্রতিদিন এলাকায় ডলোমাইট দূষণ চলছে। ২০০৬ সাল থেকে রেলকে বললেও কোনও লাভ হয়নি। বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছিলাম। প্রয়োজনে আবারও আন্দোলনে নামব।"

যদিও তৃণমূলের দাবি, ডলোমাইট নিয়ে বিজেপি বিধায়কের ওই আন্দোলন ছিল লোক দেখানো। মাদারিহাট-বীরপাড়া ব্লকের অন্যতম তৃণমূল নেতা মান্নালাল জৈন বলেন, "ভোটে জেতার আগে বিধায়ক মানুষকে কথা দিয়েছিলেন ক্ষমতায় এলে এক মাসের মধ্যে তিনি ওই স্টেশন থেকে ডলোমাইট নিয়ে যাওয়া ব্যবস্থা তুলে দেবেন। ওই কথা তিনি রাখতে পারেননি।’’ বাসিন্দাদের অবশ্য দাবি, রাজনীতির আকচাআকচি নয়, ডলোমাইট দূষণ বন্ধ হোক এটাই সকলে চাইছেন।

Fear Dolomite Mine
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy