Advertisement
E-Paper

নোট নেমেছে দশ-কুড়িতে

কেউ খুব ভোরে উঠে ব্যাঙ্কে লাইন দিয়েছেন। কিন্তু, প্রয়োজন মতো টাকা পাননি। আবার কেউ কোনও টাকাই পাননি। কারণ, ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন, টাকা পৌঁছয়নি। কোথাও ১০ টাকা, ২০ টাকার নোটের গাদা দেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে নোট-বাতিলের ১৪ দিন পরেও উত্তরবঙ্গের শহর-গ্রামের ব্যাঙ্কের সামনের লাইন, ক্ষোভ, আক্ষেপ, হতাশার ছবি এতটুকুও পাল্টায়নি। সোমবার উত্তরের বিস্তীর্ণ এলাকার কিছু ছবি তুলে ধরল আনন্দবাজার।কেউ খুব ভোরে উঠে ব্যাঙ্কে লাইন দিয়েছেন। কিন্তু, প্রয়োজন মতো টাকা পাননি। আবার কেউ কোনও টাকাই পাননি। কারণ, ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন, টাকা পৌঁছয়নি। কোথাও ১০ টাকা, ২০ টাকার নোটের গাদা দেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে নোট-বাতিলের ১৪ দিন পরেও উত্তরবঙ্গের শহর-গ্রামের ব্যাঙ্কের সামনের লাইন, ক্ষোভ, আক্ষেপ, হতাশার ছবি এতটুকুও পাল্টায়নি। সোমবার উত্তরের বিস্তীর্ণ এলাকার কিছু ছবি তুলে ধরল আনন্দবাজার।

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৬ ০২:০২
শিলিগুড়ির অদূরে শিবমন্দিরে একটি ব্যাঙ্কের সামনে দীর্ঘ লাইন। — বিশ্বরূপ বসাক

শিলিগুড়ির অদূরে শিবমন্দিরে একটি ব্যাঙ্কের সামনে দীর্ঘ লাইন। — বিশ্বরূপ বসাক

ক্ষোভ কোচবিহারে

ভোটের জন্য কোচবিহারে ক’দিন ছুটি ছিল ব্যাঙ্ক। খুলতেই ভিড় উপচে পড়ল গ্রাহকদের। চলল ভোগান্তিও। সোমবার কোচবিহার শহর, লাগোয়া খাগড়াবাড়ি, তুফানগঞ্জ, দিনহাটা, মাথাভাঙা সর্বত্র এক ছবি। কোচবিহার শহর ও লাগোয়া এলাকার একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে চেক দিয়ে সেভিংস আক্যাউন্ট থেকে ২৪ হাজার টাকা পর্যন্ত গ্রাহকেরা অনেকেই পেয়েছেন। তবে বেশির ভাগ শাখাতেই চাহিদা মতো টাকা মেলেনি। এটিএমের সামনেও ছিল উপচে পড়া ভিড়। কোচবিহারের নতুন বাজার লাগোয়া একটি ব্যাঙ্কের এটিএমের সামনে দীর্ঘ লাইন ছিল। সেখানেও যান্ত্রিক বিভ্রাটে গ্রাহকদের দীর্ঘ ক্ষণ ভোগান্তির মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ। কোচবিহারের লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার সঞ্জয় কুমার বলেন, “যা বরাদ্দ রয়েছে, তা দিয়ে যত বেশি সংখ্যক গ্রাহকদের যতটা সম্ভব টাকা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।”

হতাশা শামুকতলায়

টাকা না আসায় সোমবার শামুকতলা সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কে দীর্ঘ ক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়েও খালি হাতে ফিরতে হল গ্রাহকদের। রবিবার ব্যাঙ্ক বন্ধ ছিল। সোমবার টাকা পাওয়ার আশায় গ্রাহকরা ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। ব্যাঙ্ক খোলার পর টাকা নেই শুলেই গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।গ্রাহকদের অভিযোগ শনিবার বিকেলে টাকা আসে।অনেক গ্রাহক দুপুর পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে বাড়ি ফিরে যান। মাঝে রবিবার ছিল সোমাবার টাকা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি ছিল। অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক অমর শঙ্কর সান্যাল বলেন, ‘‘শনিবার সিনিয়র সিটিজেন-দের পুরানো টাকা বদলে দেওয়ার সরকারি ঘোষণা ছিল। ওই দিন ব্যাঙ্কে গিয়েও টাকা পাইনি। আজ ভেবেছিলাম টাকা পাব। কিন্তু আজও খালি হাতে ফিরতে হল।’’ তিনি জানান, চাল ডাল কেনার জন্যও হাতে নগদ কোনও টাকা নেই। কতদিন আর ধারে জিনিস আনবেন ভেবে পাচ্ছেন না তাঁর মতো অনেকেই।

নোট বদল বন্ধ রায়গঞ্জে

সোমবার ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার রায়গঞ্জ শাখায় ১০০ ও ২০০০ টাকার নোটের অভাব থাকায় বাসিন্দাদের ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বদল করে দেওয়া হয়নি। নোটের অভাবে এ দিন ওই ব্যাঙ্কের এটিএমও বন্ধ ছিল। একমাত্র চেকের মাধ্যমেই বাসিন্দাদের ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। রায়গঞ্জের মোহনবাটী বাজারের সব্জি ব্যবসায়ী কমলেশ্বর সাহা বলেন, ‘‘খুচরো টাকার ক্রেতাদের কাছে সবজি বিক্রি করতে পারছি না। এ দিন ১০০০ টাকার দু’টি বাতিল নোট বদল করার জন্য ইউনাইটেড ব্যাঙ্কে গিয়েছিলাম। কিন্তু ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ খুচরো না থাকায় তা বদল করে দেননি।’’ ওই ব্যাঙ্কের রায়গঞ্জ শাখার সিনিয়র ম্যানেজার (অপারেশন) পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ গত শনিবার থেকে চাহিদা অনুযায়ী ১০০ ও ২০০০ টাকার নোট সরবরাহ করছেন না। তার জন্য নোটের অভাবে এদিন বাসিন্দাদের নোট বদল করে দেওয়া হয়নি। সে কারণে এটিএমও বন্ধ ছিল।

পৌঁছয়নি পাঁচশো

খুচরোর সমস্যা৷ তাই দু’হাজারের বদলে পাঁচশো টাকার নোটের চাহিদা বাড়ছে মানুষের৷ ব্যাঙ্কের লাইনে দাড়িয়ে দু’হাজারের বদলে পাঁচশো’র নোট চাইছেনও অনেকেই৷ কিন্তু জলপাইগুড়িতে এখনও সেই নোট না আসায় হাতে পাচ্ছেন না গ্রাহকরা৷ জলপাইগুড়ির বাসিন্দা রমেন সরকারের কথায়, ‘‘এ দিন ব্যাঙ্ক থেকে ছয় হাজার টাকা তুলি৷ যার মধ্যে চার হাজার টাকা দু’হাজারের নোট দেওয়া হয়৷ কিন্তু বাজারে এই টাকা ভাঙতেই সমস্যা হচ্ছে৷’’ জলপাইগুড়ি সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের ম্যানেজার অনাদি বিশ্বাস বলেন, ‘‘জলপাইগুড়িতে এখনও পর্যন্ত পাঁচশো’র নোট না পৌছনোতেই এই সমস্যা হচ্ছে৷’’ এ দিকে ব্যাঙ্কে ভিড় গত কয়েকদিনের তুলনায় খানিকটা কমলেও জলপাইগুড়িতে এটিএমে মানুষের লাইন বেড়েই চলছে৷

উপহারের টাকা নেই

জলপাইগুড়ি শহর থেকে দূরে চাউলহাটির বাসিন্দা গোপাল সরকার এদিন ইউকো ব্যাঙ্কের এটিএম কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, “পাড়ায় একটা বিয়ের নেমন্তন্ন আছে। এখান থেকে টাকা তুলে উপহার কিনে বাড়ি ফিরব।” জলপাইগুড়ির রায়কতপাড়ার বাসিন্দা পেশায় ঠিকাদার সোমনাথ পাল সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার লাইনে দাঁড়িয়ে বলেন, “এখন আর বাড়িতে টাকা জমা করার দিন নেই। বিয়ের তারিখ বলে এ দিনই টাকা তুলে উপহার দিতে হবে।” জলপাইগুড়ি শহরে এসবিআই-এর ৩৯টি এটিএম কাউন্টার আছে। ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা যায় এ দিন সব ক’টিতেই টাকা ঢুকেছে। তা সত্ত্বেও সদর হাসপাতালের কাছে একটি কাউন্টার বন্ধ থাকতে দেখা যায়। এসবিআই-এর জলপাইগুড়ি শাখার চিফ ম্যানেজার বিদ্যাসাগর প্রসাদ বলেন, “সব ক’টি কাউন্টারে টাকা দেওয়া হয়েছে। কেন এটিএমটি বন্ধ ছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

উদ্বেগ মালদহে

মালদহে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের বিভিন্ন শাখায় গ্রাহকদের টাকা দেওয়ার পরিমাণ একেবারেই কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এক হাজার-পাঁচশো টাকা করে দেওয়া হয়েছে। ব্যাঙ্কের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমাদের চেস্ট ব্যাঙ্ক স্টেট ব্যাঙ্ক, ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক ও অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক। কিন্তু সেই ব্যাঙ্কগুলি থেকে পর্যাপ্ত টাকা না মেলায় শাখাগুলিতে টাকার যোগান দেওয়া যায়নি। স্বাভাবিকভাবেই কম পরিমাণ টাকা গ্রাহকদের দিতে হয়েছে।’’

এটিএম চলছে না

মালদহে এটিএম পরিষেবা স্বাভাবিক হয়নি। ইংরেজবাজার শহর সহ জেলা জুড়ে থাকা অনেক এটিএম বন্ধ ছিল। যে এটিএমগুলি খোলা ছিল সেগুলিতে ছিল মারাত্মক ভিড়। টাকাও দ্রুত শেষ হয়ে যায়। এ দিকে এটিএমগুলির বেশিরভাগ থেকেই এদিন ২০০০ টাকার নোট মিলেছে। সেই নোট নিয়েও বিপাকে পড়েছেন গ্রাহকরা। ইংরেজবাজার শহরের মকদমপুরের বাসিন্দা রবি কর্মকার এ দিন শহরের রবীন্দ্র অ্যাভিনিউ এলাকার একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএম থেকে টাকা তোলেন। তিনি একটি দু’হাজার টাকার নোটই পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘এর আগেও আমি একটি দু’হাজার টাকার নোট পেয়েছিলাম। কিন্তু তা বাজারে ভাঙাতে গিয়ে ঘাম ছুটে গিয়েছিল।’’ মালদহের ব্যাঙ্ক সমূহের লিড ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজার রবীন্দ্রনাথ শর্মা জানান, কয়েকদিনের মধ্যেই সমস্যা মিটে যাবে।

নগদ নেই

নগদ অমিল। তাই টাকার জন্য ছোটাছুটির অন্ত নেই আলিপুরদুয়ারেও। আলিপুরদুয়ারের চেম্বার অফ কর্মাসের সাধারণ সম্পাদক জানান, ব্যবসায়ীদের টাকা তুলতে গিয়ে সমস্যা হচ্ছে। অনেক গ্রাহক অভিযোগ করেন ব্যাঙ্কের লাইনে দাড়িয়ে চেক মারফত টাকা তুলতে গিয়ে কেন্দ্রের নির্দেশ মতো ২৪ হাজার টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। এদিন এটিএমগুলিতে নিমেষের মধ্যে নগদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। বারবার ব্যাঙ্ক ও এটিএমের লাইনে দাড়াতে হচ্ছে।

অবসর পেলেই লাইনে

লাইনে দাঁড়িয়ে চাঁচলের আদর্শপল্লির শিক্ষক আনসার আলি। কয়েক দিন আগে চোখেমুখে যে বিরক্তির ভাবটা ছিল, তা অনেকটাই উধাও। আনসার আলি বলছেন, ‘‘কবে পাঁচশো টাকার নতুন নোট আসবে।’’ পাশের জন বললেন, ‘‘কলকাতায় তো চলে এসেছে। পাঁচশো টাকা আসলেই বাঁচি।’’ আসলে কয়েকদিন ধরে নোটের গেরোয় ঘুরে ব্যাঙ্ক, এটিএমের সামনে লাইন দেওয়াটাই গা সওয়া হয়ে গিয়েছে আনসার আলির মতো অধিকাংশের। তাই পাঁচশো টাকার নতুন নোট বা দু’হাজার টাকার নোটের বৈশিষ্ট্য কেমন, তা নিয়ে আলোচনা করে সময় কাটাচ্ছেন লাইনে দাঁড়ানো মানুষজন। আনসার আলির কথায়, ‘‘সমস্যা তো রয়েছেই, কিন্তু সমস্যা তো আমাকেই দূর করতে হবে। কাকে বলব! বলেও তো ফল হবে না জানি। তাই এখন অবসর পেলেই লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ি।’’ এমন সমস্যা কোনওদিন পোহাতে হবে ভাবিনি।

মিড ডে-তেও টাকা নেই

মালবাজারে সরকারি কাজের টাকা, যেমন মিড ডে মিল প্রকল্পের টাকাও ২ হাজার টাকার বেশি দিতে পারছে না ব্যাঙ্ক। টাকার জোগান কম থাকায় মালবাজার প্রধান ডাকঘরেও একই দশা। এ দিন ডাকঘর থেকে সর্বাধিক ২ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। তাও দুপুরের পর সেই টাকাও ফুরিয়ে যাওয়ায় গ্রাহকদের খালি হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে ডাক কর্তৃপক্ষ। ডাকঘর আধিকারিকেরা অবশ্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে টাকার জোগান আসছে না বলেই দাবি করেছেন। ডাকঘরের এক পদস্থ কর্মী জানালেন ২২টি উপ ডাকঘর বিশিষ্ট মালবাজার প্রধান ডাকঘরে সোমবার মাত্র ২০ লক্ষ টাকা পাঠানো হয়েছে। ৩ লক্ষ টাকা প্রধান ডাকঘরের কাউন্টারে রেখে বাকি টাকা ২২টি অফিসে পাঠানো হয়েছে। এত স্বল্প টাকাতে কোনও ভাবেই সারাদিন অর্থ প্রদান সম্ভব নয় বলেই দাবি তাদের। নোটের জোগান বাড়লে উর্ধসীমা বাড়বে।

ATM Demonetization
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy