Advertisement
E-Paper

সমাজ মাঠ, সুনীতিবালা স্কুলও সংরক্ষণের দাবি

জলপাইগুড়ি শহরের বয়স থেকে মাত্র দুই বছরের ছোট সুনীতিবালা সদর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। জলপাইগুড়ি শহরের ব্রাহ্ম সমাজের মাঠও শহরের ঐতিহ্যের আর একটি পরিচয়। একটি দু’টি জায়গাকে হেরিটেজ কমিশনে সুপারিশ করা হয়নি।

রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৫ ০২:২৮
শহরের প্রাচীন স্মৃতি ধরে রেখেছে দুলাল দিঘি ও (ডান দিকে) প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চও।—নিজস্ব চিত্র।

শহরের প্রাচীন স্মৃতি ধরে রেখেছে দুলাল দিঘি ও (ডান দিকে) প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চও।—নিজস্ব চিত্র।

জলপাইগুড়ি শহরের বয়স থেকে মাত্র দুই বছরের ছোট সুনীতিবালা সদর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। জলপাইগুড়ি শহরের ব্রাহ্ম সমাজের মাঠও শহরের ঐতিহ্যের আর একটি পরিচয়। একটি দু’টি জায়গাকে হেরিটেজ কমিশনে সুপারিশ করা হয়নি।

ব্রাহ্ম ধর্মগ্রহণ করে ১৮৬৯ সালে ঢাকা থেকে জলপাইগুড়িতে এসেছিলেন জালালউদ্দিন এবং তার স্ত্রী প্যারিবিবি। তারা এবং তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার বেকেট সাহেবের অফিসের চার জন কর্মী মিলে করলা নদীর পাশে সেই সময় তৈরি করেন একটি উপাসনা গৃহ। ১৯০১ সালে এখানে পাকা উপাসনাগৃহ তৈরি হয়েছিল। ব্রাহ্ম সমাজের নামেই এই এলাকাটি সমাজপাড়া নামে পরিচিতি লাভ করে।

এখন ব্রাহ্ম সমাজের উপাসনাগৃহ ভেঙে ফেলা হয়েছে। সংলগ্ন স্থানটির একটা অংশে মেডিকেল অ্যাসোশিয়েশনের অফিস, স্টুডেন্ট হেল্থ হোমের কার্য়ালয় আছে। বাকি অংশে পুরসভা থেকে সদ্য ঠাকুর পঞ্চানন বর্মার মূর্তি বসানো হয়েছে। কলকাতার ব্রাহ্ম সমাজের মুখপাত্র গৌতম নিয়োগী তাঁদের জায়গার বিষয়টি রাজ্য সরকারের গোচরে আনেন। মুখ্যমন্ত্রী এসে উদ্বোধন করবেন বলে প্রচার করা হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী আসেননি। হলদিবাড়ি থেকে বোতাম টিপে উদ্বোধন করেন।

সুনীতিবালা সদর বিদ্যালয়টি প্রাথমিক পর্যায়ে জালালু্দ্দিন এবং তার স্ত্রী প্যারি বিবি ১৮৭১ সালে স্থাপন করেছিলেন। এই স্কুলটি জেলার প্রথম মেয়েদের স্কুল। স্কুলের প্রায় ১০০ বছরের পুরোন ক্লাসরুম এখনও আছে। স্কুলের প্রধানশিক্ষিকা অপর্ণা বাগচী বলেন, “আমরা চাই আমাদের স্কুলটিকে হেরিটেজ ঘোষণা করা হোক। কারণ আমাদের স্কুলটি জেলার প্রথম মেয়েদের স্কুল এবং জাতীয় ঐতিহ্যের ধারা বহন করে চলেছে। আমাদের স্কুলে এখনও পুরোন ভবনটি আছে। রক্ষণাবেক্ষণ না থাকলে অচিরেই ধংস হয়ে যাবে।” এরকম দাবি উঠেছে দিনবাজার ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে। দিনবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বিলাস রায় বলেন, “দিনবাজার কালীমন্দির এবং কেরানিপাড়ার কালীমন্দিরটিকেও হেরিটেজ স্থানের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।”

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের হেরিটেজ কমিটির কোঅর্ডিনেটর আনন্দগোপাল ঘোষ বলেন, “যে স্কুল, স্থান এবং দুটি মন্দিরের কথা কথা বলা হয়েছে, তাদের অবস্থা খতিয়ে দেখে অবশ্যই হেরিটেজ কমিশনে সুপারিশ করা হবে।” এই জায়গাগুলি ছাড়াও অন্য জায়গাগুলির অবস্থা কী রকম একবার খতিয়ে দেখা যাক।

জলপাইগুড়ির রাজবাড়ির একটা অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের লাল বিল্ডিংয়ে অসংখ্য ফাটল ধরেছে। ধর্মীয় স্থানগুলিকে ধর্মালম্বীরা রক্ষণাবেক্ষণ করলেও সবার কাজে লাগে এমন দুলাল দিঘির কোনও সংস্কার হয়নি।

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের হেরিটেজ প্রজেক্ট কমিশন সুত্রে জানা যায় যে বর্তমানে নবগঠিত হেরিটেজ কমিশনে উত্তরবঙ্গের কোনও সদস্য নেই। বাম আমলে ২০০৪ সালে ২১ জন সদস্যকে নিয়ে হেরিটেজ কমিশন গঠিত হয়েছিল। তার মধ্যে উত্তরবঙ্গের প্রতিনিধি ছিল পদাধিকারবলে জলপাইগুড়ি জেলাপরিষদের সভাধিপতি এবং কালিম্পং মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান। এখন সেই কমিটি অবলুপ্ত। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে হেরিটেজ প্রজেক্ট কমিটি তৃণমূল সরকারের আমলে ২০১৩ সালে গঠিত হয়েছিল। তারপরে হেরিটেজ কমিশনে উত্তরবঙ্গের বিষয়গুলি চিহ্নিত করে পাঠানো হয়েছে। কমিশন এখনও কোন পদক্ষেপ করেনি।

প্রাবন্ধিক উমেশ শর্মা বলেন, “শহরের প্রাচীন ঐতিহ্যমন্ডিত বিষয়গুলিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য স্থানীয় সরকার জলপাইগুড়ি পুরসভারও দায়িত্ব আছে।” জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “হেরিটেজ কমিটি রয়েছে। সময় মতো রাজ্যে হেরিটেজ কমিশন মারফত কেন্দ্রীয় হেরিটেজ কমিশনকে সবকিছু জানানো হয়।” পুরসভা থেকে জানা যায় যে জলপাইগুড়ি রাজবাড়িকে ইতিমধ্যে হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়েছে।

heritage tag Snitibala School north bengal universit jalpaiguri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy