Advertisement
E-Paper

বিরল রোগে কেঁপে ওঠে হাত, তবু পরীক্ষায় অনড় সুস্মিতা  

রাইটারকে সঙ্গী করেই স্কুল পরীক্ষা থেকে শুরু করে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি। মাধ্যমিকে  দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেন। 

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৯ ০৫:১২
অদম্য: রাইটারের সঙ্গে সুস্মিতা (বাঁ দিেক)। —নিজস্ব চিত্র

অদম্য: রাইটারের সঙ্গে সুস্মিতা (বাঁ দিেক)। —নিজস্ব চিত্র

ছোট থেকেই হাঁটতে-চলতে বা কথা বলতে পারত না সে। পাঁচ বছর বয়সের পর একটু করে হাঁটতে শেখা। আধো আধো বুলিও ফুটতে শুরু করে। কিন্তু বাড়ির লোকেরা তখনও বুঝতে পারেননি যে, সে একটি বিরল রোগে আক্রান্ত। পরে তৎকালীন মালদহ জেলা হাসপাতালে বেশ কয়েকবার চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি।

অবশেষে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রতিবন্ধী শংসাপত্র জোগাড় করতে এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জানা যায়, সেরিব্রাল পলসি-তে আক্রান্ত সুস্মিতা মজুমদার। ছোট থেকেই তাঁর হাত দুটো কাঁপে। তাই সে লিখতে পারে না। কথাও জড়ানো। কিন্তু তাতে কী? রাইটারকে সঙ্গী করেই স্কুল পরীক্ষা থেকে শুরু করে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি। মাধ্যমিকে দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেন।

এ বার উচ্চমাধ্যমিকে রাইটার নিয়েই তিনি পরীক্ষা দিচ্ছেন। অদম্য মানসিকতার মেয়ে সুস্মিতা হবিবপুর ব্লকের শ্রীরামপুর অঞ্চল হাইস্কুলের ছাত্রী। পরীক্ষার সিট পড়েছে ব্লকেরই ঋষিপুর হাইস্কুলে। বাবা বাইকের পিছনে বসিয়ে তাঁকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দিচ্ছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্রীরামপুর গ্রামের বাসিন্দা মনোরঞ্জন ও শ্যামলী মজুমদারের চার মেয়ে। বড় মেয়ে সীনা স্নাতকোত্তর পাশ করেছেন। দ্বিতীয় মেয়ে সুস্মিতা। তাঁদের ছোট দুই যমজ মেয়ে রুমা ও উমা। তারা শ্রীরামপুর অঞ্চল হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। মনোরঞ্জন বলেন, ‘‘সুস্মিতা ছাড়া বাকি তিন মেয়ে স্বাভাবিক। সুস্মিতা ছোটবেলায় হাঁটতে বা কথা বলতে পারত না। পাঁচ বছর বয়স থেকে হাঁটা শুরু করে। অল্প অল্প কথা বলা শুরু করে। তখন আমরা বুঝতে পারিনি যে ও বিরল রোগে আক্রান্ত। পরে মালদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু কাজে আসেনি। মালদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল প্রতিবন্ধী শংসাপত্র জোগাড়ের জন্য গেলে তখন চিকিৎসকেরা জানান, সুস্মিতা সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত। সুস্মিতা ছোট থেকেই স্কুলে রাইটার নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে আসছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা তা নিয়েই দিয়েছিল। এ বার উচ্চমাধ্যমিকও রাইটার নিয়ে দিচ্ছে।’’

এ দিন ইংরেজি পরীক্ষা শেষের সুস্মিতা বলেন, ‘‘বাংলা পরীক্ষা বেশি ভাল হয়েছিল। এ দিন ইংরেজি পরীক্ষাও মোটামুটি হয়েছে। বাকি পরীক্ষাগুলি ভাল হবে বলে আমি আশাবাদী।’’ সুস্মিতা আরও বলেন, ‘‘আমার লেখার ক্ষমতা নেই। লিখতে গেলে হাত কাঁপে। তাই বাধ্য হয়েই রাইটার নিয়ে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে।’’ বড় হয়ে শিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিতে চাযন সুস্মিতা। ঋষিপুর হাইস্কুলের ভেনু ইনচার্জ অমিত হালদার বলেন, ‘‘সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত সুস্মিতার পরীক্ষার জন্য স্কুলে পৃথক ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আমরা ওর সাফল্য কামনা করি।’’

Habibpur Physically Challlenged Higher Secondary Examination
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy