স্নান করতে গিয়ে তলিয়ে গিয়েছিল এক কিশোর। তার খোঁজে তল্লাশি চালাতে গিয়ে মিলল প্রায় এক মাস আগে নিখোঁজ হওয়া একটি গাড়ি ও তার চালকের দেহ। চালক তাঁর আসনেই বসেছিলেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে গজলডোবায় তিস্তা ক্যানালে ওই গাড়িটি ক্রেন দিয়ে তোলার পরে পুলিশ দেখতে পায়, চালকের পা দু’টি রয়েছে স্টিয়ারিংয়ের নীচেই। দেহের বাকি অংশ দরজার কাছে। একটি হাত দরজার হাতলে রাখা। গাড়িটি ভিতর থেকে ‘লক’ করা ছিল বলে পুলিশের দাবি। কাচ ভেঙে পুলিশ দেহটি বাইরে বার করে ময়নাতদন্তের জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
পুলিশের একাংশের অনুমান, ওই যুবক গাড়ি নিয়ে পালাতে গিয়েই দুর্ঘটনায় পড়েছে। বাঁচার জন্য দরজা খুলে বেরোনোর চেষ্টাও করেন বলে তাঁর বসার ভঙ্গি থেকে অনেকে মনে করছেন। তবে তাঁকে খুন করাও হয়ে থাকতে পারে। সে জন্য সব দিক খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্তারা।
শিলিগুড়ির এডিসিপি ভোলানাথ পান্ডে বলেন, ‘‘তবে প্রাথমিক ভাবে গাড়ি নিয়ে পালাতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে অনেকে সন্দেহ করছেন। ময়নাতদন্তে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। পুলিশ সব দিকই খতিয়ে দেখবে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, গাড়িটি বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা করানো হবে।
পুলিশ জানায়, মৃত চালকের নাম ছতন ছেত্রী (৩২)। তিনি আদতে কোচবিহারের হলদিবাড়ির বাসিন্দা। পেশায় গাড়ির চালক। পেশার কারণেই শিলিগুড়ির ভক্তিনগর থানার হায়দরপাড়ার পালপাড়া এলাকায় থাকতেন। শিলিগুড়ির হাকিমপাড়ার অতুলপ্রসাদ সরণির উত্তম পালের গাড়িটি চালাতেন তিনি। গত ১০ মার্চ উত্তমবাবু শিলিগুড়ি থানায় অভিযোগ করেন, তাঁর গাড়ির চালক ছতন ওরফে উত্তম সাদা রঙের ছোট গাড়ি নিয়ে নিখোঁজ হয়েছে। পুলিশ একটি মামলা রুজু করে তদন্তে নামে। পুলিশ খবর পায়, ময়নাগুড়ি ও লাগোয়া এলাকায় কয়েকদিন ধরে উত্তম ঘোরাফেরা করছে। তবে তাঁকে পুলিশ ধরতে পারেনি। ইতিমধ্যে উত্তমের বাড়ির লোকেরাও বহুবার চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। মোবাইলও বন্ধ ছিল।
এই অবস্থায়, দু’দিন আগে ফুলবাড়ি এলাকার এক কিশোর গজলডোবার তিস্তা ক্যানালে স্নান করতে নেমে নিখোঁজ হয়ে যায়। তার জামাকাপড় মিললেও তার হদিস মেলেনি। তা নিয়ে ওই কিশোরের বাড়ির লোকজন এদিন সকালে বিক্ষোভ দেখান। এর পরে দুপুরে পুলিশ ও দমকল গিয়ে ক্যানালের জল কমিয়ে কিশোরের খোঁজে নামে। বিকেলের দিকে জল কিছুটা কমতেই দেখা যায়, একটি গাড়ির উপরের অংশ দেখা যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে আলোড়ন পড়ে যায়। ক্রেন নিয়ে গাড়িটি তোলা হতেই দেখা যায় ভিতরে চালকের আসনে পচাগলা দেহ। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা, এসিপি (পূর্ব) পিনাকী মজুমদার ঘটনাস্থলে যান। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের প্রবীণ অফিসারদের একাংশের সন্দেহ, মাঝ রাতে ওই নির্জন এলাকা দিয়ে দ্রুতগতিতে যাওয়ার সময়ে গাড়িটি ক্যানালে পড়ে গিয়ে থাকতে পারে। তবে খুন করে চালক সহ গাড়ি ফেলে দেওয়া হয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হবে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy