এই সেই সেতু। নিজস্ব চিত্র।
মহানন্দা সেতুর অ্যাপোচের একাংশ বসে যাওয়ায় সংস্কারের উদ্যোগী হয়েছেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। তাই আজ, রবিবার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে সংযোগস্থাপনকারী মালদহের মহানন্দা সেতুর উপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধের নির্দেশিকা জারি করল প্রশাসন।
বড় গাড়ি থেকে শুরু করে ছোটগাড়িগুলিও ঘুরপথে চালাতে উদ্যোগী হয়েছেন কর্তৃপক্ষ। শনিবার ইংরেজবাজারের রথবাড়ি মোড়ে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মাইকিং করে প্রচার করা হয়। তবে আচমকা প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে যাত্রীদের মধ্যে। তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসনের উচিত এ বিষয়ে আগে থেকেই প্রচার চালানো। হঠাৎ করে প্রচার করায় সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে আমাদের। যাত্রীদের পাশাপাশি যানবাহন চালকেরাও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘বাড়তি পথ অতিক্রম করে গাড়ি নিয়ে চলাচল করতে হবে। সেই সঙ্গে প্রশাসনের তরফ থেকে যে রুট বলা হয়েছে তা জাতীয় সড়কের তুলনায় সরু। ফলে যানজটের সম্ভাবনা দেখছে গাড়ি চালকেরা।’’ এ বিষয়ে মালদহের অতিরিক্ত জেলা শাসক দেবতোষ মন্ডল বলেন, ‘‘জেলার ব্যবসায়ী সংগঠন, বাস, ট্রাক মালিক কর্তৃপক্ষদের সঙ্গে আমরা বৈঠক করে পুরো বিষয়টি জানিয়েছি। এমনকী দুই দিনাজপুর, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম জেলার পরিবহণ দফতরে আমরাও ফ্যাক্সের মাধ্যমের পুরো বিষয়টি জানিয়েছে। আর জেলাতে মাইকিং করে প্রচারও করা হচ্ছে। সাধারন মানুষের সামান্য সমস্যা হলেও সেতুটি সংস্কার করাও খুবই জরুরি।’’
এক দশক আগে মহানন্দা নদীর উপরে মালদহ মঙ্গলবাড়ির সংযোগস্থাপনের জন্য সেতু গড়ে তোলা হয়। উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে এই সেতুটি। দীর্ঘ বছর আগে তৈরি হওয়ায় সেতুর অ্যাপ্রোচের একাংশ বসে গিয়েছে। ইংরেজবাজারের দিকে সেতুর পাঁচ মিটার অংশ বসে গিয়েছে বলে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে। মালদহের ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে দৈনিক গড়ে ১৫ হাজার করে যানবাহন চলাচল করে। ফলে প্রতিটি মুহুর্তে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি সেতু তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, সেতুর অ্যাপ্রোচ রোড মেরামত করার জন্য চারটি স্ল্যাব তৈরি করা হয়েছে। ক্রেনের সাহায্যে ওই স্ল্যাবগুলি সেতুর ওই অংশে বসানো হবে। আর সংস্কারের কাজ করতে যাতে সমস্যা না হয় তার জন্য দিনের মধ্যে নির্দিষ্ট সময় সেতুর উপর দিয়ে যান চলাচলের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাত নটা থেকে সোমবার সকাল নটা পর্যন্ত মহানন্দা সেতু দিয়ে কোন যানবাহন চলাচল করবে না। তাই যাত্রীবাহী থেকে পণ্যবাহী যানবাহন গুলির রুট বদল করা হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গগামী গাড়িগুলি গাজলের কদুবাড়ি মোড় দিয়ে সামসি ঘাসিরাম মোড় যাবে। সেখান থেকে রতুয়া মানিকচক হয়ে ইংরেজবাজারের অমৃতি দিয়ে মোথাবাড়ি হয়ে কালিয়াচকে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে উঠবে। তেমনই উত্তরবঙ্গগামী গাড়িগুলি ইংরেজবাজারের রথবাড়ি দিয়ে অমৃতি হয়ে মানিকচের মথুরাপুর যাবে। সেখান থেকে রতুয়া হয়ে গাজলের কদুবাড়ি মোড়ে জাতীয় সড়কে যুক্ত হবে। রুট বদল করার জন্য চালকদের বাড়তি ৪০ কিলোমিটার পথ যেতে হবে। আর শহরবাসীর চলাচল করার জন্য দ্বিতীয় মহানন্দা সেতু ব্যবহার করা হবে।
মালদহের ব্যবসায়ী সমিতির জেলা সভাপতি জয়ন্ত কুণ্ডু বলেন, ‘‘আমাদের মতো সাধারন মানুষের সমস্যা হবে ঠিকই। তবে সেতুর কাজ যাতে ভালভাবে হয় তার জন্য আমরা প্রশাসনকে সব রকম সহযোগিতা করব।’’ জাতীয় সড়কের প্রজেক্ট মালদহের ডিরেক্টর দীনেশকুমার হানসারিয়া বলেন, ‘‘সেতুর একদিকে আটকে রেখে কাজ করলে খুব অসুবিধে হবে। তেমনই যানজটও বাড়বে। তাই ছুটির দিনে রাতে রাস্তা বন্ধ করে কাজ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আমাদের বাইপাস তৈরির কাজও জোর কদমে চলছে। আশা করি বছর খানেকের মধ্যে তৈরি হয়ে যাবে বাইপাস।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy