Advertisement
E-Paper

মহাসঙ্কটে ধূপগুড়ির আলুচাষিরা

অচল হয়ে যাওয়া নোটের কবলে পড়ে মাথায় হাত পড়েছে আলু চাষিদের। উত্তরবঙ্গের অন্যতম আলু বলয় ধূপগুড়ি। ধূপগুড়ি ব্লকে প্রায় ১২ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আলু চাষ হয়। কিন্তু এ বার অর্ধেক জমিতেও আলু চাষ হবে কি না, তাই নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে কৃষি আধিকারিক ও চাষিদের মধ্যে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৩২
ধূপগুড়িতে গুদামে পড়েই পচে যাচ্ছে আলু। — নিজস্ব চিত্র

ধূপগুড়িতে গুদামে পড়েই পচে যাচ্ছে আলু। — নিজস্ব চিত্র

অচল হয়ে যাওয়া নোটের কবলে পড়ে মাথায় হাত পড়েছে আলু চাষিদের। উত্তরবঙ্গের অন্যতম আলু বলয় ধূপগুড়ি। ধূপগুড়ি ব্লকে প্রায় ১২ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আলু চাষ হয়। কিন্তু এ বার অর্ধেক জমিতেও আলু চাষ হবে কি না, তাই নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে কৃষি আধিকারিক ও চাষিদের মধ্যে। নভেম্বর ও ডিসেম্বরের প্রথম এক সপ্তাহ পর্যন্ত আলু চাষের উপযুক্ত সময়। তার পরে আলু চাষে ফলন কম হয়। কিন্তু, বড় নোট অচলের জাঁতাকলে পড়ে আলুর জমি চাষ, বীজ, সার কেনা ও প্রাথমিক মজুরের টাকার অভাবে চাষিরা জমি চাষ শুরুই করতে পারছেন না। ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিসে সারা দিন ঘুরে দু’চার হাজারের বেশি টাকা মিলছে না। কেউ কেউ সেটাও পাচ্ছে না।

ধূপগুড়ির গাদংয়ের আলু চাষি সতীশ সরকার বলেন, “প্রতি বছর ১২ থেকে ১৫ বিঘে আলু চাষ করি। নিজের বা ধার দেনা করে আলু চাষের টাকা জোগাড় হয়ে যায়। কিন্তু, এ বার কোথাও টাকা মিলছে না। ১৫ বিঘে আলু চাষ করতে গেলে প্রথমেই কমপক্ষে দেড় লাখ টাকা লাগবে। বর্তমানে হাতে ছোট নোট দশ হাজার টাকাও নেই। তিন ধরে ব্যাঙ্কে ঘুরে মাত্র চার হাজার টাকা পেয়েছি। অথচ, এখনই দেড় লাখ টাকার প্রয়োজন। কবে ব্যাঙ্কে টাকা স্বাভাবিক হবে, তার ঠিক নেই। আর পনেরো দিন পার হয়ে গেলে আলু চাষ করে কোন লাভ হবে না। টাকার যে আকাল চলছে মনে হচ্ছে এ বার দু’তিন বিঘে আলু লাগিয়েই ক্ষান্ত হতে হবে।” শুধু সতীশবাবু কেন, ধূপগুড়ির বারঘরিয়া, মাগুরমারি, গধেয়ারকুঠি, সাঁকোয়াঝোড়া প্রতিটি গ্রামের হাজার হাজার আলু চাষিদের একটাই কথা—টাকা কোথায় পাব?

ধূপগুড়ির সহকারী কৃষি অধিকর্তা দেবাশিস সর্দার বলেন, “কয়েক বছরের পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে ধূপগুড়ি ব্লকে ১২ হাজার হেক্টর বা তার থেকে বেশি জমিতে আলু চাষ হয়েছে। বড় নোট বাতিলের ধাক্কায় আলু চাষ অনেকটা কমবে বলে মনে হচ্ছে। বীজ বিক্রেতা বড় নোট নিতে চাইছে না। তাঁরাই বা বড় নোট নিয়ে কী করে চালাবেন। এ বার কৃষকরা সব্জির ভাল দাম পাচ্ছিলেন। নোট বাতিলের এক ধাক্কায় সব্জির দাম অর্ধেক হয়ে গেল। টাকা স্বাভাবিক হতে হতে তো আলু বা সব্জির মরসুম শেষ হয়ে যাবে। নোট বাতিলের ধাক্কায় কৃষকরাও বড় ধাক্কা খেলেন বলে মনে করি।”

নোট নিয়ে গোলমালের আগেই ধূপগুড়িতে পঞ্জাব থেকে উন্নতমানের আলু বীজ এনে দোকানে দোকানে মজুত করেছেন আলু ব্যবসায়ীরা। ট্রাকে ট্রাকে আলু বীজ মজুত করে ফাঁপরে পড়েছেন তাঁরাও। দোকানে দোকানে সাজিয়ে রেখেছেন আলু বীজের বস্তা। কিন্তু গত বুধবারের পর থেকে বীজ বিক্রি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

ধূপগুড়ি আলু মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা ও আলু বীজ বিক্রেতা স্বপনকুমার দত্ত হতাশার সুরে বলেন, “প্রতি বছর প্রায় ৫০ ট্রাক পঞ্জাবের উন্নতমানের আলু বীজ বিক্রি করি। প্রতি ট্রাকে ২০ টন আলু থাকে। জ্যোতি বা পোখরাজ এক ট্রাক আলু পঞ্জাব থেকে কিনে ধূপগুড়ি পৌঁছনো পর্যন্ত সব মিলিয়ে খরচ হয় কম বেশি প্রায় ৮ লাখ টাকা। এ বার মরসুম শুরু হতেই প্রায় এক মাস আগে ২০ ট্রাক আলু পঞ্জাব থেকে আনা হয়েছে। নোট অচলের খবর হওয়ার আগেই ১২ ট্রাক আলু সঠিক দামে বিক্রি করেছি। আর নোট বাতিলের পরে এই ক’দিনে এক ট্রাক আলু বিক্রি করলাম। দুই কোয়ালিটির আলু বিক্রি করছি। ৫০ কিলোগ্রাম বস্তা আলু বীজের দাম দুই হাজার ও ষোলশো টাকা। এখন নোট বাতিলের ফলে বীজ বিক্রি হচ্ছে না। ঘরে থেকে বড় বড় শিকড় গজিয়ে পচে যাচ্ছে বস্তা বস্তা আলু। তাই বস্তা প্রতি সাত’শো টাকা ক্ষতি স্বীকার করেও ক্রেতা পাচ্ছি না। আলু কিনতে আসা চাষিরা একশো টাকা নোটের সঙ্গে দু’একটা পাঁচশো টাকার নোট দিলেও নিতে বাধ্য হচ্ছি। সেই পাঁচশো টাকা ব্যাঙ্কে জমা করতে সময় চলে যায়।”

Potato Farmers Demonetization
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy