Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অমলের স্বপ্নে বাধা অনটন

দিনহাটার স্টেশন পাড়া এলাকার বাসিন্দা দাস দম্পতির একমাত্র সন্তান অমল। বাবা শ্যামলবাবু রংমিস্ত্রির কাজ করেন। কোনও দিন কাজ জোটে, কোনও দিন জোটেনা।

যোদ্ধা: মায়ের সঙ্গে অমল দাস। নিজস্ব চিত্র

যোদ্ধা: মায়ের সঙ্গে অমল দাস। নিজস্ব চিত্র

অরিন্দম সাহা
দিনহাটা শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৭ ০১:৫০
Share: Save:

এক চিলতে টিনের ঘর। বেশি বৃষ্টি হলে জল চুঁইয়ে পড়ে। বইপত্র সামলে রাখাই মুশকিল। রংমিস্ত্রি বাবা ও বিড়ি শ্রমিক মায়ের অনটনের সংসার। ভালমন্দ দূরঅস্ত, মাঝেমধ্যে আধপেটা খেয়েই স্কুল যেতে হয়েছে। স্রেফ ইচ্ছাশক্তিকে সম্বল করে সেই পরিবারের ছেলে অমল দাস উচ্চমাধ্যমিকে এ বার ৪৪৭ নম্বর পেয়েছেন। যা মোট নম্বরের নিরিখে ৮৯ শতাংশেরও বেশি। ছেলের ওই ভাল ফলেও অবশ্য হাসি উধাও দাস পরিবারের। অমলের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণে বাদ সাধছে অভাব।

দিনহাটার স্টেশন পাড়া এলাকার বাসিন্দা দাস দম্পতির একমাত্র সন্তান অমল। বাবা শ্যামলবাবু রংমিস্ত্রির কাজ করেন। কোনও দিন কাজ জোটে, কোনও দিন জোটেনা। মা তুলসীদেবী বিড়ি বেঁধে সামান্য উপার্জন করে স্বামীকে সাহায্য করেন। দিনহাটা সোনিদেবী হাইস্কুলে ছেলেকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ানোর খরচ চালাতেই পরিবারের নাভিশ্বাস উঠেছে। শুভানুধ্যায়ীদের অনেকে পাশে দাঁড়ানোয় বড় সমস্যা হয়নি। কিন্তু ছেলের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণে জয়েন্ট এন্ট্রান্সের প্রস্তুতি, প্রশিক্ষণ থেকে অন্যান্য খরচের অঙ্ক তো অনেক বেশি। তুলসীদেবী বলেন, “ছোটবেলা থেকেই ছেলেটা আমার অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করছে। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? তাই ওর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ নিয়ে একটা চিন্তা হচ্ছে।” মায়ের পাশে বসে অমল জানিয়েছে, স্কুল শিক্ষক, গৃহশিক্ষকেরা সাধ্যমত সহযোগিতা করেছেন। বেতন নেননি। পরের জয়েন্টের প্রস্তুতি তো এ ভাবে হয়না। অঙ্ক অনার্স নিয়ে ভর্তির কথাও মাথায় রাখতে হচ্ছে। জানিনা কী দাঁড়াবে।

স্কুল সূত্রের খবর, অমল মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৬১১ নম্বর পেয়েছিল। এ বার উচ্চমাধ্যমিকে সে পেয়েছে ৪৪৭ নম্বর। বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে অঙ্কে ৯৪, ফিজিক্সে ৯২, বায়োলজিতে ৯১, কেমিস্ট্রিতে ৮০, বাংলায় ৯০ নম্বর পেয়েছে। সোনিদেবী জৈন হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক গঙ্গাধর রায় বলেন, “অমল অত্যন্ত মেধাবী। লড়াই করে ভাল ফল করেছে।” অমলের এক গৃহশিক্ষক সিদ্ধেশ্বর সাহা বলেন, “বিনা বেতনে আমিও পড়িয়েছি। সাহায্য পেলে অমলের প্রতিভার বিকাশের পথ সুগম হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Amal Das Poverty higher education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE