Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
আজ চালু প্রকল্প, বরাদ্দে ঘাটতি
Anganwadi

শিশুর খাদ্য বাড়ন্ত, কে দেখবে মাকে

এক মাস হল বাচ্চা হয়েছে রিঙ্কি সিংহের। তাঁর বয়স মোটে ১৯ বছর। কণ্ঠার হাড় ঠেলে বেরিয়েছে।

রুগ্ন: অঙ্গনওয়াড়িতে শিশুকে নিয়ে। বালুরঘাটে।

রুগ্ন: অঙ্গনওয়াড়িতে শিশুকে নিয়ে। বালুরঘাটে। নিজস্ব চিত্র।

অনুপরতন মোহান্ত
শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২১ ০৬:১৪
Share: Save:

দুই মেয়ে রয়েছে তাঁর। এক জনের বয়স ৮ বছর, অন্য জনের ১০ বছর। তার পরে তৃতীয়বারের জন্য গর্ভবতী হয়েছেন কাকলি সিংহ। কিন্তু এখন একটু হাঁটতে গেলেই হাঁফ ধরে। শরীরে অপুষ্টির ছাপ স্পষ্ট। দিনমজুর স্বামীর অল্প আয়ে বাচ্চা দুটোর ভালমন্দ খাবারই জোটে না। তার উপর নিজে খাবেন কী! পেটের-টাকে কী করে সুস্থ রাখবেন, ভেবে পান না কাকলি।

এক মাস হল বাচ্চা হয়েছে রিঙ্কি সিংহের। তাঁর বয়স মোটে ১৯ বছর। কণ্ঠার হাড় ঠেলে বেরিয়েছে। শিশুকন্যাকে কোলে বসে রয়েছেন, চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট।

তপন বিধানসভা কেন্দ্রের বালুরঘাট ব্লকের বেলাইন সিংহপাড়া এলাকার দিনমজুর গরিব পারিবারের গর্ভবতী এবং প্রসূতি মায়েদের পু্ষ্টিকর খাবার জোগানের মাধ্যম ওই আইসিডিএস সেন্টার (অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র) গত পাঁচ মাস ধরে তালা বন্ধ। ফলে সিংহপাড়া অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের অধীন ওই এলাকার ৬০ জন শিশুর সঙ্গে অন্তত ১৪ জন গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়ের মুখেও গত পাঁচ মাস ধরে উঠছে না পুষ্টিকর খাবার। এই চিত্র কেবল সিংহপাড়াতেই নয়, গোটা দক্ষিণ দিনাজপুরের ৩২৪৪টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত প্রায় ৩১ হাজারের বেশি গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েরই।

এই পরিস্থিতিতে আজ, মঙ্গলবার থেকে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে মা ও শিশুদের খাদ্যসামগ্রী বিলি করা শুরু করতে যাচ্ছে প্রশাসন। পাঁচ মাস বন্ধ থাকার পরে চালু হতে গেলেও বরাদ্দে কিছু ঘাটতি থাকছে বলেই একটি অংশের দাবি। প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, ১৫ জুন থেকে ২০ জুনের মধ্যে দক্ষিণ দিনাজপুরের সমস্ত অঙ্গওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে উপভোক্তাদের মাথাপিছু ২ কেজি চাল, ২ কেজি আলু ও ৩০০ গ্রাম মসুরির ডাল বিলির নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু খাদ্যসামগ্রীর ওই তালিকায় নেই ডিম, সয়াবিন ও ছোলা। ফলে গর্ভবতী মা ও প্রসূতিদের পুষ্টির ঘাটতি কতটা পূরণ হবে, তা নিয়ে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। এক চিকিৎসকের কথায় কোভিড পরিস্থিতির শুরু থেকে বালুরঘাট হাসপাতালের পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্র পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। ২০ শয্যার ওই কেন্দ্রে গত দেড় বছরে অপুষ্টির শিকার কোনও মা ও শিশু ভর্তি হয়নি।

অথচ গ্রামে পা রাখলেই অন্য ছবি। অপু্ষ্টির শিকার মা ও শিশুরা গত দেড় বছর ধরে সরকারি নজরদারি থেকে শত যোজন দূরে রয়ে গিয়েছে। সরকারি নথি অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর অবধি জেলায় অপুষ্টিতে ভোগা প্রসূতি মা ও শিশুর সংখ্যা অন্তত ৩০০ জন। বেলাইনের সিংহপাড়ার অনিতা সিংহ ৫ বছরের নাতি বিশাল ও ৬ বছরের নাতনি পল্লবীকে ফ্যান ভাত খাইয়ে পু্ষ্টি বজায় রাখার চেষ্টা করছেন। অনিতা বলেন, ‘‘শহর থেকে দূরে এক কোণে আমরা পড়ে থাকি। তাই হয়তো করোনা বিধিনিষেধে এখনও কোনও সংস্থা এখানে খাদ্যসামগ্রী দিয়ে সাহায্য করে উঠতে পারেনি।’’ গর্ভবতী কাকলির মতো প্রসূতি ইশিতা দাস, বুলবুলি সিংহদেরও এখন জলা-জঙ্গলের শাকপাতাই ভরসা।

অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) জিতিন যাদব বলেন, ‘‘কোভিড পরিস্থিতিতে ওই কর্মসূচি ব্যাহত হয়। মা ও শিশুর পুষ্টিকরণের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Children Anganwadi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE