Advertisement
০১ মে ২০২৪

আলুর পথে আমের দামও লাগাম ছাড়া

শিলিগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজারের দেওয়াল টপকালেই এক লাফে কয়েক গুণ দাম বেড়ে যায় হিমসাগর, ল্যাংড়া, লক্ষ্মণভোগের। শিলিগুড়ির পাইকারি বাজারে যে আমের দর কেজি প্রতি ১৮ টাকা, শহরের বিধান মার্কেট, সুভাষপল্লির মতো প্রায় সব এলাকায় খুচরো বাজারে তা ক্রেতাদের ৫০ থেকে ৬০ টাকায় টাকায় কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। একশ্রেণির ব্যবসায়ী আড়াল থেকে কলকাঠি নেড়ে বিপুল ফায়দার জন্য এমন করছেন বলেও ক্রেতাদের একাংশের অভিযোগ।

দাম যাই হোক, বিক্রি দেদার। নিজস্ব চিত্র।

দাম যাই হোক, বিক্রি দেদার। নিজস্ব চিত্র।

অনির্বাণ রায়
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৫ ০৩:০০
Share: Save:

শিলিগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজারের দেওয়াল টপকালেই এক লাফে কয়েক গুণ দাম বেড়ে যায় হিমসাগর, ল্যাংড়া, লক্ষ্মণভোগের। শিলিগুড়ির পাইকারি বাজারে যে আমের দর কেজি প্রতি ১৮ টাকা, শহরের বিধান মার্কেট, সুভাষপল্লির মতো প্রায় সব এলাকায় খুচরো বাজারে তা ক্রেতাদের ৫০ থেকে ৬০ টাকায় টাকায় কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। একশ্রেণির ব্যবসায়ী আড়াল থেকে কলকাঠি নেড়ে বিপুল ফায়দার জন্য এমন করছেন বলেও ক্রেতাদের একাংশের অভিযোগ।

মরশুমের শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রিত বাজারে আমের পাইকারি দর পড়তির দিকে। একই ভাবে খুচরো বাজারে লিচুও যখন ন্যূনতম ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, সে সময়ে পাইকারি বাজারে দর ৮ থেকে ৩০ টাকা। জামাইষষ্ঠীর জন্য গত সপ্তাহে শিলিগুড়ির বিধান মার্কেট, হায়দারপাড়া, সুভাষপল্লির মতো খুচরো বাজারে কেজি প্রতি ৭০ টাকা ছুঁয়ে ফেলে আমের দাম। সে সময়েও পাইকারি বাজারে আমারে দর ছিল ২৫ টাকার কম। তবে খুচরো বাজারে পাইকারি দরের কোনও প্রভাবই পড়েনি বলে অভিযোগ। পাইকারি এবং খুচরো বাজারে দামের এই বিপুল হেরফেরের পেছনে কালোবাজারির কারসাজি রয়েছে বলেই ক্রেতাদের দাবি। সব্জি সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রণে রুখতে টাস্ক ফোর্স রয়েছে। বছর ভরই বিভিন্ন বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণে টাস্কফোর্সের নজরদারি চালানোর কথা। সেই নজরদারির হাল ফলের বাজার-ই বুঝিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ।

সরবরাহকারী এবং খুচরো বিক্রেতাদের অনেকেরই দাবি, আড়ত থেকে কেনা আম ঝাড়াই-বাছাইের পরে পরিমাণে অনেকটাই কমে যা। সেই আম বাজারে পৌঁছে দেওয়ারও বাড়তি খরচ রয়েছে। একে ওজনে কমে যাওয়া এবং তার সঙ্গে পরিবহণ খরচ জুড়ে যাওয়ায় পাইকারি বাজারের দাম বেড়ে যায়।

যদিও, এই তত্ত্ব মানতে রাজি নন অনেকেই। সব মিলিয়ে কেজি প্রতি ৮ থেকে ১০ টাকা বাড়তে পারে বলে দাবি। কিছুতেই পাইকারি দামের তিনগুণ বেড়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে ব্যবসায়ীদের একাংশ অভিযোগ করেছেন। শুধুমাত্র মুনাফা বাড়াতেই খোলা বাজারে আমের দাম বেড়েই চলেছে বলে অভিযোগ। একাংশ ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে করে কেজি প্রতি ন্যূনতম দশটাকা বাড়তি মুনাফা চাপিয়ে দেওয়ায় পাইকারি বাজারের দর কমার কোনও প্রভাবই খোলা বাজারে পড়ছে না। শিলিগুড়ির মহকুমা শাসক দ্বীপাপ প্রিয়া বলেন, ‘‘দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে নজরদারি চলে। পাইকারি বাজারে আম বা লিচুর যে দাম বলা হচ্ছে আর খুচরো বাজারে যে দাম নেওয়া হচ্ছে বলে শুনেছি, তা সম্ভব নয়। রিপোর্ট চেয়েছি। দ্রুত পদক্ষেপ হবে।’’

গত বছরে আলু নিয়েও একই ঘটনার সাক্ষী ছিল শিলিগুড়ি। শহরের বিভিন্ন খোলা বাজারে যখন আলুর দাম ৩০ টাকাও ছাড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল সে সময় পাইকারি বাজারে কেজি প্রতি দর ছিল ২০ টাকার কম। সে বারও টাস্কফোর্সের নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল সব মহলেই। আবার আমের দরও আলুর পথ ধরেছে বলে অভিযোগ। শুক্রবার নিয়ন্ত্রিত বাজারে মালদহের ল্যাংড়া আম ১১ থেকে ১৬ টাকা কেজি প্রতি দরে বিক্রি হয়েছে। হিমসাগরের দর ছিল ১২ থেকে ১৮ টাকা। লক্ষ্মণভোগের প্রতি কেজিতে দর ছিল ৮ থেকে ১৩ টাকা। এ বছর আমের ফলনও বেশি হয়েছে বলে আড়তদারেরা জানিয়েছেন। গত বছরও এ সময়ে প্রতিদিন ২৫-৩০ ট্রাক বোঝাই আম নিয়ন্ত্রিত বাজারে ঢুকেছে। সেখানে এখন রোজ ট্রাকের সংখ্যা পঞ্চাশ থেকে সত্তরের মধ্যেই রয়েছে বলে আড়তদাররা জানিয়েছেন।

নিয়ন্ত্রিত বাজারের উল্টোদিকেই চম্পাসারি বাজার। সেই বাজারেই হিমসাগর আম এ দিন বিকেলে বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা কেজি দরে। ক্ষুদিরামপল্লি বাজার, বিধান মার্কেট, সুভাষপল্লি বাজারেও এ দিন অন্তত ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। বেশ কিছু বাজারে সুযোগ বুঝে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরেও আম বিক্রি হয়েছে। নিয়ন্ত্রিত বাজারের আড়তদার স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘খুচরো বাজারে কী দরে আম বিক্রি হচ্ছে তা আমাদের জানার কথা নয়। এতটুকু বলতে পারি, এই মরশুমে শুরু থেকেই পাইকারি বাজারে মন্দা চলছে।’’ পাইকারি বাজারের ফল-সব্জি আড়তদারদের সংগঠনের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ তপন সাহার দাবি, ‘‘এমন কেন হচ্ছে তা আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE