লাইন দিয়েও শূন্য হাতে
সকাল সাতটায় হরিশ্চন্দ্রপুরের তুলসিহাটা ইলাহাবাদ ব্যাঙ্কের সামনে লাইন দিয়েছিলেন অলক সিংহ। ওষুধের পাইকারি ব্যবসায়ী অলকবাবু পাঁচ ঘণ্টা বাদে পেলেন এক হাজার টাকা। ওই এলাকায় কোনও এটিএম নেই। রয়েছে আট কিলোমিটার দূরে হরিশ্চন্দ্রপুরে। বস্তুত হরিশ্চন্দ্রপুর, চাঁচল, রতুয়া ও সামসি ছাড়া মহকুমার আর কোথাও এটিএম নেই। ফলে এই এলাকাগুলিতে এটিএম কিছুটা স্বস্তি দিলেও এটিএম বিহীন এলাকাগুলিতে মানুষের ভোগান্তি অব্যাহত। যেমন চাঁচলের এক স্কুল শিক্ষক জয়ব্রত কিস্কু বলেন, ‘‘চণ্ডীপুর বঙ্গীয় গ্রামীণ ব্যাঙ্কে আমার অ্যাকাউন্ট রয়েছে। কিন্তু দুপুরে ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে গিয়ে শুনি যে টাকা ফুরিয়ে গিয়েছে।’’
জাতীয় সড়ক অবরোধ
প্রায় ৫ দিন ধরে ব্যাঙ্কে গিয়ে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। তাই ক্ষোভে-দুঃখে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে দিলেন গ্রাহকরা। বৃহস্পতিবার ধূপগুড়ি-গয়েরকাটা ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে ঠাকুরপাট এলাকায় প্রায় তিন ঘন্টা অবরোধ হয়। কয়েকশো গ্রাহকের অভিযোগ, এমন হয়রানি চলায় সকলেই চরম সমস্যা পড়েছেন। কৃষক নিত্যানন্দ মণ্ডল বলেন, “কয়েক দিন দু’হাজার টাকা দিয়েছে। অনেকে পেয়েছেন, আবার কেউ কেউ পায়নি। আজ ব্যাঙ্ক খোলার পর ব্যাঙ্ক থেকে জানানো হয় টাকা না আসায় আজ লেন দেন বন্ধ থাকবে। প্রতি দিন জমির কাজ ফেলে ব্যাঙ্কে আসি আর এসেও টাকা পাই না।” এই কথা শোনার পরে গ্রাহকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। এক গ্রাহক সরস্বতী রায় বলেন, “ চারদিন পরেই মেয়ের বিয়ে। প্রতিদিন দু’হাজার টাকা করে দিচ্ছিল। ক’দিনে বাড়ির কাজ ফেলে গিয়ে মাত্র ৮ হাজার তুলতে পেড়েছি। বিয়ের জন্য টাকা যোগার করে করে ব্যাঙ্কে রেখেছিলাম। এখন বিয়ের খরচের জন্য তুলতে পারছি না। বিয়ের ব্যাপার, ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের বিষয়টি দেখা দরকার।” পরে পুলিশ অবরোধকারীদের বুঝিয়ে প্রায় তিন ঘন্টা পর অবরোধ তুলতে পারে।
গ্রাহকদের চা
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মালদহের এটিএম গুলিতে পড়ছে লম্বা লাইন। ভিড় সামাল দিতে নাজেহাল হতে হচ্ছে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষগুলিকে। তবে ইংরেজবাজার শহরের কার্নিমোড়ের বন্ধন ব্যাঙ্কের এটিএমে দেখা গেল অন্য ছবি। ব্যাঙ্কের তরফে এটিএমের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রাহকদের মধ্যে বিলি করা হচ্ছে চা। ব্যাঙ্কের ম্যানেজার অভিষেক কুমার নিজে দাঁড়িয়ে থেকে গ্রাহকদের চা খাওয়ালেন। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার ফলে ক্ষোভ থাকলেও এক কাপ চা পাওয়ায় ব্যঙ্ক কর্তৃপক্ষের ভুমিকায় খুশি গ্রাহকেরা। অভিষেকবাবু বলেন, ‘‘সহকর্মীরা দীর্ঘক্ষণ কাজ করছেন, তেমনই গ্রাহকেরা ধৈর্য ধরে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। তাই আমাদের তরফ থেকে গ্রাহকদের চা ও জলের ব্যবস্থা করেছি।’’
বালুরঘাটে খুশি
টাকা ঢুকতেই বৃহস্পতিবার বালুরঘাটে স্টেট ব্যাঙ্কের অধিকাংশ এটিএম চালু হয়ে গেল। বুধবার সন্ধ্যা থেকে এটিএমে লাইন দিয়ে বাসিন্দারা টাকা তোলেন। স্বাভাবিকভাবে এ দিন ব্যাঙ্ক এবং এটিএমের সামনে ভিড় কম ছিল। লম্বা লাইন চোখে পড়েনি। এ দিন ইউকো ব্যাঙ্কের ভিতরে টাকা তুলতে গিয়ে স্কুল শিক্ষক অরুণ সাহা বলেন, ‘‘বোনের বিয়ের টাকা জোগার নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। রাতে কেন্দ্রের ঘোষণায় আড়াই লক্ষ টাকা তোলার ছাড়পত্র মেলায় আমরা খুশি।’’ খুশি তপনের স্কুল কর্মী উত্তম পান্ডে থেকে ঠাকুরপুড়ার বাসিন্দা গৃহবধূ শ্যামলী বর্মনও। তাঁরাও মেয়ের বিয়ের জন্য ব্যাঙ্ক থেকে বিয়ের অনুষ্ঠান খরচের নগদ মোটা টাকা তুলতে পারবেন জেনে আশ্বস্ত। এদিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠছে।
ভোগান্তি ব্যাঙ্কে
উকিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা পেশায় ফুল ব্যবসায়ী সনাতন সরকার এ দিন ১৫০০ টাকা বদলের জন্য বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের রায়গঞ্জ শাখায় লাইনে দাঁড়ান। তিনি বলেন, ব্যাঙ্ক খোলার পরেই ব্যাঙ্কের কর্মীরা জানিয়ে দেন ১০০ টাকার নোটের অভাবে এক হাজার টাকার বেশি নোট বদল করা হবে না। বেলা ১১টা নাগাদ সেই নোটও ফুরিয়ে যায়। দু’ঘণ্টা পর নোট আসলেও সনাতনবাবুর নোট বদল করতে বেলা আড়াইটা বেজে যায়। এ সব ঝামেলায় এ দিন একবেলা ফুলের দোকান খুলতে পারিনি। ওই ব্যাঙ্কের রায়গঞ্জ শাখার সিনিয়র ম্যানেজার (অপারেশন) পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন সকাল ১০টার মধ্যেই মালদহ শাখা থেকে ১০০ টাকার নোট চলে আসে। এ দিন কোনও কারণে সেই নোট আসতে তিন ঘণ্টা দেরি হওয়ায় ব্যাঙ্কে নোট ফুরিয়ে যায়। ১০০ টাকার নোটের অভাবে এ দিন কাউকেই ১০০০ টাকার বেশি নোট বদল করে দেওয়া হয়নি।