চিকিৎসকেরা বলছেন ডেঙ্গি। অথচ শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ডেঙ্গি নির্ণয়ে ম্যাক এলাইজা রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে রোগ ধরা পড়ছে না রোগীদের। দুটো একটা নয়। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর তিন মাসে ১৭৬০ জন রোগীর রক্তের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। তার মধ্যে ওই পরীক্ষায় পজেটিভ মিলেছে মাত্র তিন জনের। তা দেখিয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতর দাবি করছে, বাকিদের ডেঙ্গি বলা যাবে না। অথচ ওই সময়ের মধ্যে ২৪ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ম্যাক এলাইজা পরীক্ষার কিট ফুরিয়ে গেলে রোগীদের রক্তের নমুনা পাঠানো হয় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ওই সমস্ত নমুনার আশি শতাংশ ক্ষেত্রেই রোগীর শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু ধরা পড়ে। এর পরেই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রকাশ্যে না বললেও হাসপাতালের চিকিৎসকেরাও এখানকার রিপোর্ট নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
ডেঙ্গি সন্দেহে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন রমেশ শীল, বিশ্বব্রত সান্যাল, দীপক মাহাতোরা। অভিযোগ, বেসরকারি ল্যাবরেটরি থেকে তাঁরা পরীক্ষা করালে প্রত্যেকেরই এনএসওয়ান পজিটিভ মেলে। অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, তাঁদের এনএসওয়ান পজিটিভ। তাতে ডেঙ্গি হয়েছে বলা যায় না। ম্যাক এলাইজা রিপোর্ট তাদের মেলেনি। দু’দিন ভর্তি থাকার পরেই সাধারণ জ্বর জানিয়ে ছুটিও দিয়ে দেওয়া হয়। পরে নার্সিংহোমে গিয়ে রমেশবাবু, বিশ্বব্রতবাবুদের ফের ডেঙ্গির চিকিৎসা করাতে হয়েছে। বিশ্বব্রতবাবুর দিদি দেবারতি দেবী বলেন, ‘‘হাসপাতালের উপরে ভরসা করাই ভুল হয়েছে। সাধারণ জ্বর জানিয়ে তিন দিন পর ছুটি দিয়ে বাড়িতে বিশ্রাম নিতে বলে চিকিৎসক। বাড়ি এনে ঘন্টাখানের মধ্যে নার্সিংহোমে ভাইকে ভর্তি করাতে হয়। চিকিৎসক জানিয়ে দেন, ডেঙ্গিতে মারাত্মক ভাবে সে অসুস্থ।’’ রমেশবাবু বলেন, ‘‘সাধারণ ভাইরাল জ্বর বলে হাসপাতাল ছুটি দিয়েছিল। অথচ বাইরে চিকিৎসককে দেখালে তিনি ডেঙ্গি বলে চিকিৎসা করে সুস্থ করেছেন। স্বাস্থ্য দফতর রোগ লুকোচ্ছে কি না দেখা দরকার।’’
হাসপাতাল সুপার অমিতাভ মণ্ডল বলেন, ‘‘মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বিষয়টি দেখছেন।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত বিশ্বাস বলেন, ‘‘এখনই এ নিয়ে কিছু বলার নেই। বিষয়টি নিয়ে আমরাও আলোচনা করেছি। হাসপাতালের রক্ত পরীক্ষায় কোথাও কোনও সমস্যা রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা হবে। পুরনো ওই সমস্ত রক্তের নমুনা থেকে কিছু উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে পুনরায় পরীক্ষা করা হবে।’’ স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্রই জানিয়েছে, শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ম্যাক এলাইজা রক্ত পরীক্ষার কিট ফুরিয়ে গেলে ২৪ নভেম্বর ৫৭টি রক্তের নমুনা পাঠানো হয়েছিল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে। তার মধ্যে ৪৩ টি পজিটিভ। ২৫ নভেম্বর পাঠানো ২০টি নমুনার মধ্যে ১৬টি, ২৯ নভেম্বর ২৯টি নমুনার মধ্যে ২৪টি, ১ ডিসেম্বর ১৭টি রক্তের নমুনার মধ্যে ১৪টি এবং ২ ডিসেম্বর ১৭টির মধ্যে ১৫টি পজিটিভ মেলে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, ম্যাক এলাইজা পরীক্ষায় শরীরে জীবাণু মিললে তবেই ডেঙ্গি হয়েছে বলা যায়। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ওই দুই জায়গায় শিলিগুড়ি মহকুমার সন্দেহভাজন ডেঙ্গি রোগীদের রক্তের নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়। নার্সিংহোমগুলিতে র্যাপিড কার্ড পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়লে রক্তের নমুনা স্বাস্থ্য দফতরের মাধ্যমে ম্যাক এলাইজা পরীক্ষার জন্য অধিকাংশ শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে পাঠানো হত। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের অধিকাংশ রিপোর্টেই ডেঙ্গি ধরা পড়েনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy