Advertisement
১১ মে ২০২৪
নদীতে মিশছে নয়নের জল

জল বাড়তেই রাস্তায় নামল সংসার

সংসার উঠে এসেছে রাস্তায়। কেউ বা খোলা আকাশের নীচে তাঁবু খাটিয়েছেন। পড়ে রয়েছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। কারও আবার গোটা সংসারটাই ঠাঁই পেয়েছে রাস্তার পাশে দাঁড়ানো পিক-আপ ভ্যানের ওপরে৷

ঘর ভেসেছে নদীর জলে। জলপাইগুড়ির শান্তিপাড়ায় তাই এ ভাবেই পড়াশোনা খুদের। ছবি: সন্দীপ পাল

ঘর ভেসেছে নদীর জলে। জলপাইগুড়ির শান্তিপাড়ায় তাই এ ভাবেই পড়াশোনা খুদের। ছবি: সন্দীপ পাল

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৬ ০৮:০৫
Share: Save:

সংসার উঠে এসেছে রাস্তায়। কেউ বা খোলা আকাশের নীচে তাঁবু খাটিয়েছেন। পড়ে রয়েছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। কারও আবার গোটা সংসারটাই ঠাঁই পেয়েছে রাস্তার পাশে দাঁড়ানো পিক-আপ ভ্যানের ওপরে৷ জলপাইগুড়ি শহরের শান্তিপাড়া এলাকায় করলা নদীর নতুন ব্রিজ ও ব্রিজ সংলগ্ন রাস্তার চিত্র এখন এটাই ৷

টানা বৃষ্টিতে শান্তিপাড়ার পবিত্র নগর কলোনি সহ আশপাশের এলাকা গতকাল সকাল থেকেই জলমগ্ন হয়ে পড়ে৷ সন্ধ্যার পর পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হতে শুরু করায় পবিত্র নগর কলোনির বাসিন্দারা বাড়ি ছেড়ে রাস্তার ওপর আশ্রয় নিতে শুরু করেন৷ পঞ্চাশটিরও বেশী পরিবার গতকাল রাতে বাড়ি ছেড়েছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পরই ঘরে জল ঢুকে যায় দেবারু মহম্মদের৷ প্রাণ বাঁচাতে স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধূ ও নাতিকে নিয়ে আশ্রয় নেন করলা নদীর ব্রিজের পাশে রাস্তায় থাকা একটি পিক-আপ ভ্যানে৷ গাড়িটি দেবারুর শ্যালকের৷ দিদি-জামাইবাবু গোটা সংসার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তাই এ দিন আর পিক ভ্যান নিয়ে ভাড়া খাটাতে যাননি৷ রাস্তায় আশ্রয় নেওয়ার সময় বাড়ি থেকে যেটুকু সঙ্গে আনতে পেরেছিলেন তার মধ্যে ছিল দেবারুর পাঁচ বছরের নাতি শুকু মহম্মদের বই-খাতা ৷

একসঙ্গে এতগুলি পরিবার রাস্তার ওপরে আশ্রয় নেওয়ায় এ দিন সকালেই পুরসভার পক্ষ থেকে একটি পানীয় জলের গাড়ি করলা নদীর নতুন ব্রিজে পাঠানো হয় ৷ কিন্তু ওইটুকুই ৷ এর বাইরে পুরসভা তাঁদের জন্য আর কোনও ব্যবস্থা করেনি বলেই অভিযোগ দুর্গত মানুষদের৷ রাস্তায় আশ্রয় নেওয়া পবিত্রনগর কলোনির বাসিন্দা রূপালী ভুঁইঞার অভিযোগ, “মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে বাড়ির সকলের সঙ্গে রাস্তায় পড়ে রয়েছি৷ রাস্তাতেই রান্না-বান্না, খাওয়া-দাওয়া চলছে৷ অথচ পুরসভা আমাদের জন্য একটি ত্রিপলেরও ব্যবস্থা করেনি৷ আমাদের নিজেদেরকেই সেই ব্যবস্থা করতে হয়েছে ৷” একই অভিযোগ এলাকার আরেক বাসিন্দা পূর্ণ বর্মনেরও ৷

এদিকে জলপাইগুড়ি পুরসভার সিপিএম কাউন্সিলার প্রমোদ মণ্ডলের অভিযোগ, “শান্তিপাড়ার পবিত্রনগর এলাকায় প্রতিবছরই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় ৷ অথচ জলপাইগুড়ি পুরসভা যে এ ধরণের পরিস্থিতি মোকাবিলায় একেবারেই প্রস্তুত নয় বর্ষার শুরুতেই তা পরিষ্কার হয়ে গেল ৷ আমরা বারবার দাবি জানানো সত্ত্বেও ওই এলাকায় পুরসভা এ দিন ত্রাণ পাঠায়নি ৷”

তবে জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “জলমগ্ন প্রতিটি এলাকাতেই পুরসভার পক্ষ থেকে ত্রিপল সহ প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হয়েছে৷ এই মুহূর্তে বিপর্যয় থেকে মানুষকে বাঁচানোটাই আমাদের কর্তব্য৷ পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হোক ৷ তারপর ওই এলাকার বাসিন্দাদের কাছে কেন ত্রিপল পৌছালো না তা নিশ্চয়ই পুরসভা খতিয়ে দেখবে ৷”

বুধবার পরিস্থিতির খানিকটা উন্নতি হলেও রাস্তায় আশ্রয় নেওয়া পবিত্রনগর এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই এ দিন বাড়িমুখো হননি৷ আর যারা দুপুরের পর বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন তাঁদের মনেও আশংকা রাতে বৃষ্টি হলে ফের রাস্তাতেই এসে আবার সংসার পাততে হবে৷

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rain Monsoon Dwellers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE