Advertisement
E-Paper

বেপরোয়া ট্রাক ভাঙল ব্যারিকেড

বুধবার বেলা ৩টে নাগাদ শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে ফুলবাড়ির মহানন্দা ব্যারেজে সেতুর ঘটনা। সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকটি পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে। গ্রেফতার হয়েছেন চালকও।

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৩৯
দুর্ঘটনাগ্রস্ত: ট্রাকের ধাক্কায় ভেঙেছে ব্যারিকেড। —নিজস্ব চিত্র।

দুর্ঘটনাগ্রস্ত: ট্রাকের ধাক্কায় ভেঙেছে ব্যারিকেড। —নিজস্ব চিত্র।

একের পর এক ব্যারিকেড ভেঙে দুরন্ত গতিতে ছুটতে থাকা ট্রাকের তলায় আরেকটু হলেই পিষে যাচ্ছিলেন কর্তব্যরত ৩ পুলিশ কর্মী ও সেচ দফতরের কয়েকজন ইঞ্জিনিয়র। শেষ মুহূর্তে রাস্তার দুধারে ঝাঁপিয়ে প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন ওঁরা।

বুধবার বেলা ৩টে নাগাদ শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে ফুলবাড়ির মহানন্দা ব্যারেজে সেতুর ঘটনা। সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকটি পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে। গ্রেফতার হয়েছেন চালকও। কিন্তু, গাড়ির খালাসি পালিয়ে গিয়েছে।

ট্রাক চালকের দাবি, আচমকা ‘ব্রেক ফেল’ করায় তিনি সামলাতে পারেননি। কিন্তু, পুলিশ সেই যুক্তি মানতে নারাজ। কারণ, চালক ধরা পড়ার পরে গাড়ির কাগজপত্র কিংবা সিমেন্ট সংক্রান্ত নথি দেখাতে পারেননি। তাতেই পুলিশের সন্দেহ বেড়েছে। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার নীরজ কুমার সিংহ বলেন, ‘‘গাড়িটি তীব্র গতিতে ছিল বলেই অফিসাররা জানিয়েছেন। ব্রেক নষ্ট হওয়ার যুক্তি বিশেষজ্ঞদের দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কড়া পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছি।’’

এতদসত্ত্বেও পুলিশের অন্দরেও আশঙ্কা বেড়েছে। কারণ, ‘সেফ ড্রাইভ-সেভ লাইফ’ স্লোগানকে সামনে রেখে শিলিগুড়িতে ঢোকার প্রতিটি রাস্তায় কড়াকড়ি হচ্ছে। একাধিক জায়গায় ব্যারিকেড বসিয়ে পুলিশ নজরদারি করছে। প্রয়োজনে গাড়ি থামিয়ে নথিপত্রও পরীক্ষা হচ্ছে। তা করতে গিয়ে ব্যারিকেডের পাশে দাঁড়িয়ে গাড়ি থামানোর সঙ্কেত দিতে হচ্ছে পুলিশকর্মীদের। সেই সময়ে গাড়ি না থামিয়ে কেউ দুরন্ত গতিতে চলে গেলে পুলিশকর্মীদের দুর্ঘটনায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে এক পুলিশ অফিসার বিবরণ দিতে গিয়ে কাঁপছিলেন। তিনি জানান, যে ভাবে ব্যারিকেডের পাশে দাঁড়িয়ে গাড়ি থামাতে হয়, তাতে প্রাণহানির আশঙ্কাও যে থাকে সেটা এদিনই হাডে় হাড়ে টের পাওয়া গিয়েছে।

বস্তুত, ঘটনায় উদ্বিগ্ন সেচ দফতরের অফিসার-কর্মীরাও। কারণ, সেচ দফতরের একজন সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়রের তত্ত্বাবধানে ওই সেতুটি কোথায় কতটা দুর্বল হয়েছে তা পরীক্ষা করা হচ্ছিল এদিনই। সে জন্য নানা সরঞ্জাম নিয়ে ইঞ্জিনিয়র-কর্মীদের একাংশ টেবিল চেয়ার পেতে সেতুর ধারে বসেছিলেন। দুরন্ত গতির ট্রাকটি ব্যারিকেড ভেঙে সেই টেবিল-চেয়ার গুড়িয়ে দেয়। ইঞ্জিনিয়র-অফিসাররা লাফিয়ে সরতে পারায় প্রাণে বেঁচেছেন।

ঘটনা হল, সোমবার রাতেই শিলিগুড়ি পুলিশের ডিসির গাড়ি রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে ধাক্কা মারায় চালক সহ ২ পুলিশকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। তার আগে মালদহেও গাড়ি থামাতে গিয়ে এক পুলিশ কনস্টেবলের মৃত্যু হয়। কয়েক মাস আগে কোচবিহারেও ব্যারিকেড ভেঙে এক পুলিশকর্মীকে ট্রাক পিষে দেয়। স্বভাবতই, দুর্ঘটনা রুখতে রাস্তায় দাঁড়ানো পুলিশকর্মীদের নিরাপত্তা কী ভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, কিছু ট্রাক চালক জরিমানা এড়াতে ব্যারিকেডের সামনে গতি বাড়িয়ে সরে পড়তে চান। আবার কয়েকটি ক্ষেত্রে পুলিশ নথি পরীক্ষার নামে টাকা আদায়ের চেষ্টা করে বলেও ট্রাক চালকদের একাংশের অভিযোগ রয়েছে। ফলে, দুর্ঘটনা এড়াতে কী ভাবে ব্যারিকেড বসালে পুলিশকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে তার রূপরেখা তৈরির দাবিও উঠেছে পুলিশের অন্দরে। পুলিশের এক কর্তা জানান, গাড়ির চালক যাতে গতিবেগ কমাতে বাধ্য হন, এমন কৌশলে ব্যারিকেডের সংখ্যা বাড়ানো হবে।

barricade Reckless Truck
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy