অবরোধকারী ডিএসও কর্মীদের ধরপাকড় পুলিশের। (ইনসেটে) জখম অবরোধকারী। ছবি: সন্দীপ পাল।
নবম শ্রেণির দুই ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে পথ অবরোধ ও মিছিল করা হল জলপাইগুড়ি ও ধূপগুড়ি শহরে। বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ জলপাইগুড়ি জেলা দায়রা আদালত সংলগ্ন মার্চেন্ট রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় ডিএসও সমর্থকরা। অবরোধকারীদের হঠিয়ে দিতে পুলিশ লাঠি চালায় বলে অভিযোগ। বারো জন ডিএসও কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রায় আধ ঘণ্টা পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। একই সময় ধূপগুড়ি শহরে স্থানীয় বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা মিছিল করে কালীরহাট এলাকার ধর্ষণ কাণ্ডে ধৃতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানায়। জলপাইগুড়ির নবম শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় ধৃত চার জনকে এদিন বিশেষ আদালতে তোলা হলে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজনে চার দিনের জন্য তাদের নিজেদের হেফাজতে নেয়। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার আভারু রবীন্দ্রনাথন বলেন, “তদন্তের প্রয়োজনে ধৃতদের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।”
এদিন দুপুর নাগাদ অভিযুক্তদের বিশেষ আদালতে তোলা হলে পুলিশের তরফে হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। বিচারক চারদিনের জন্য পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। সরকারি আইনজীবী সোমনাথ পাল বলেন, “অভিযুক্তদের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন না। বিচারক পুলিশের আবেদন মঞ্জুর করেছে।”
গত রবিবার রাতে শহরের করলা নদী সংলগ্ন পরিত্যক্ত চিলড্রেন পার্কে কোরানি পাড়া এলাকার বাসিন্দা নবম শ্রেণির ছাত্রীকে ধৃত চার যুবক গণধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। পরিবারের তরফে সোমবার রাতে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ জানানো হয়। ওই রাতে চার অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেফতার করে ‘প্রিভেনশন অব চাইল্ড সেক্সুয়াল অফেন্সের’ (পকসো) ৬ এবং ৩৬৩, ৩২৮ আইপিসি ধারায় মামলা রুজু করে। মঙ্গলবার ছুটির দিনে ধৃতদের নিম্ন আদালতে তোলা হলে বিচারক মামলাটি বিশেষ আদালতে স্থানান্তরিত করে ধৃতদের বুধবার পর্যন্ত জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, পকসো ছাড়াও ৩৬৩, ৩২৮ আইপিসি ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। কেন পুলিশ সময় নষ্ট না করে মঙ্গলবার অভিযুক্তদের নিজেদের হেফাজতে নিল না? জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার বলেন, “ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য প্রথম দিন আদালতে আবেদন জানানো হয়। কিন্তু আবেদন মঞ্জুর হয়নি। ওই কারণে বৃহস্পতিবার ফের আবেদন জানানো হয়। সেটা মঞ্জুরও হয়েছে।’’
এদিন দুপুর নাগাদ ধৃত চার অভিযুক্তকে আদালতে আনা হয়। কিছুক্ষণ বাদে দেড়টা নাগাদ শতাধিক ডিএসও সমর্থক নবম শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষণ এবং মঠে শিশুর উপরে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে ধৃতদের কঠোর শাস্তির দাবিতে মার্চেন্ট রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। যানজটে নাকাল হতে হয় পথচারীদের। বেলা দুটা পর্যন্ত ওই পরিস্থিতি চলে। এর পরে পুলিশ গিয়ে লাঠি চালিয়ে অবরোধ তুলে আন্দোলনকারীদের আটক করে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যায়। তাঁদের মধ্যে বারো জনকে গ্রেফতার করা হয়। ডিএসও-র জেলা সভাপতি সুজয় লোধ অভিযোগ করেন, পুলিশ নির্বিচারে লাঠি চালিয়েছে। পাঁচ জন জখম হয়েছেন। যদিও জেলা পুলিশ সুপার ওই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “লাঠি চলেনি। অবরোধ তুলতে গেলে আন্দোলনকারীরা পুলিশকর্মীদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে।” এ দিকে বেলা ২টো নাগাদ কালীরহাট এলাকায় নবম শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষণ কাণ্ডে ধৃতদের কড়া শাস্তির দাবিতে ধূপগুড়ি বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা মিছিল করেন। মিছিলে পা মেলান শিক্ষিকারা। ওই ঘটনায় পুলিশ ছাত্রীর বাবা, জ্যাঠু ও দাদাকে গত শুক্রবার রাতে গ্রেফতার করে। সোমবার ধৃতদের বিশেষ আদালতে তোলা হলে পুলিশ পাঁচ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নেয়। ঘটনার প্রতিবাদে আগামী শনিবার শহরে ডিএসও বন্ধ ডাকার সিদ্ধান্ত নেয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy