Advertisement
E-Paper

যক্ষ্মা আর ভাঙা ঘরই সঙ্গী রবিনের

শরীরটার মতো ভাঙাচোরা তাঁর বেড়ার ঘরও। এক চিলতে মাটির বারান্দায় খড় পেতে কোনও রকমে বিছানা বানিয়ে নিয়েছেন। ঝড়-জলের দিন পলিথিন টাঙিয়ে কোনও রকমে কাটান। খাবার জোটানোটাই তাঁর কাছে এখন দুশ্চিন্তা। রবিন জানালেন, স্ত্রী পুতুল বছর দশেক আগে মারা গিয়েছেন। নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন অভাবের তাড়নায়। ছোট ছেলেকে মানুষ করার ক্ষমতা নেই। তাই অসমে দিদির বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এমনই পরিস্থিতি রায়গঞ্জের কমলাবাড়ি ১ পঞ্চায়েতের পিরোজপুর আদিবাসী গ্রামের রবিনের। 

সৌমিত্র কুণ্ডু 

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৯ ০৫:২৬
দিন গুজরান: এক চিলতে বারান্দায় রবিন সোরেন। রায়গঞ্জের পিরোজপুরে। নিজস্ব চিত্র

দিন গুজরান: এক চিলতে বারান্দায় রবিন সোরেন। রায়গঞ্জের পিরোজপুরে। নিজস্ব চিত্র

অসুখের একটানা চাপে বেঁকে গিয়েছে শরীর। ধুঁকছেন রবিন সোরেন। চিকিৎসার টাকা নেই। সরকারি হাসপাতালে যক্ষ্মার চিকিৎসা করাতে যান। তবে বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হয়। ফলে টাকা না থাকায় ওষুধ খাওয়া বন্ধ।

শরীরটার মতো ভাঙাচোরা তাঁর বেড়ার ঘরও। এক চিলতে মাটির বারান্দায় খড় পেতে কোনও রকমে বিছানা বানিয়ে নিয়েছেন। ঝড়-জলের দিন পলিথিন টাঙিয়ে কোনও রকমে কাটান। খাবার জোটানোটাই তাঁর কাছে এখন দুশ্চিন্তা। রবিন জানালেন, স্ত্রী পুতুল বছর দশেক আগে মারা গিয়েছেন। নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন অভাবের তাড়নায়। ছোট ছেলেকে মানুষ করার ক্ষমতা নেই। তাই অসমে দিদির বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এমনই পরিস্থিতি রায়গঞ্জের কমলাবাড়ি ১ পঞ্চায়েতের পিরোজপুর আদিবাসী গ্রামের রবিনের।

পেশায় দিনমজুর। কিন্তু শরীরের এই হাল নিয়ে কাজে যেতে পারছেন না গত ছ’মাস ধরে। পাশের বাড়িতে বিধবা বোন থাকেন। কখনও রেঁধে দিলে খাওয়াটা জোটে। কখনও ঢেকে রাখেন পরে খাবেন বলে। বাড়িতে আলো নেই। বিদ্যুতের বিলের টাকা দিতে পারেন না বলে সংযোগ কেটে দিয়েছে বণ্টন সংস্থার কর্মীরা।

গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো তাঁর ঘরের পিছনে প্রতিবেশীর কাঁচা শৌচাগার, আর নলকূপের জল জমে পুকুরের মতো হয়ে রয়েছে। দুর্গন্ধে বারান্দাতেও বসে থাকা দায়। কার্যত একা অসহায় রবিনের পুরনো রেশন কার্ড থাকলেও তা দিয়ে সপ্তাহে শুধু দেড় লিটার কেরোসিন তেল পান বলে জানান। খাদ্যসাথীর চাল পান না। রবিনের খোঁজ রাখেননি পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষও।

রায়গঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সহকারী সভাপতি মানসকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘রবিন সোরেনের এই পরিস্থিতির কথা জানা ছিল না। বিষয়টি খোঁজ নেব। নিজে তাঁর বাড়ি গিয়ে দেখব। তার জন্য কী করা যায় দেখছি।’’

খোঁজ নেই কমলাবাড়ি ১ পঞ্চায়েতের প্রধান প্রশান্ত দাসের কাছেও। প্রশান্তবাবু বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত অফিসে যেই সাহায্য চাইতে আসেন তাকেই সাধ্যমতো সহায়তা করা হয়। রবিনবাবু কখনও এসেছিলেন কিনা জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’ জেলাশাসকের নেতৃত্বে গ্রাম সংযোগে প্রশাসন গালভরা নাম দিয়ে গ্রামে গিয়ে বাসিন্দাদের বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার কাজ হচ্ছে। অথচ কর্ণজোড়ায় উত্তর দিনাজপুর জেলাশাসকের দফতরের এক কিলোমিটার দূরে আদিবাসী কলোনিতে রবিনের কাছে সেই সাহায্য পৌঁছয়নি। সোমবার শিবরাত্রির ছুটির দিনে ফোনে জেলাশাসক অরবিন্দকুমার মিনার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর ফোন বেজে গিয়েছে।

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধা বলেন, ‘‘টিবির ওষুধ হাসপাতাল থেকে কখনওই কিনতে বলার কথা নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’’

Royganj Tuberculosis রায়গঞ্জ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy