Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কৃষ্ণেন্দুকে রুখতে চেষ্টা বিক্ষুব্ধদের

কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীকে আবার ইংরেজবাজারের পুরপ্রধানের পদে দেখতে চান না তৃণমূলেরই কিছু কাউন্সিলর। তাই কৃষ্ণেন্দুকে আটকাতে যে কোনও মূল্য মেটাতেও তাঁরা প্রস্তুত। সোমবার বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যের সঙ্গে মালদহের সার্কিট হাউসে ইংরেজবাজারের তৃণমূলের অন্তত এক জন কাউন্সিলর দেখা করেন। ওই কাউন্সিলর জেলার আর এক মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের ঘনিষ্ঠ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৫ ০২:২৪
Share: Save:

কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীকে আবার ইংরেজবাজারের পুরপ্রধানের পদে দেখতে চান না তৃণমূলেরই কিছু কাউন্সিলর। তাই কৃষ্ণেন্দুকে আটকাতে যে কোনও মূল্য মেটাতেও তাঁরা প্রস্তুত। সোমবার বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যের সঙ্গে মালদহের সার্কিট হাউসে ইংরেজবাজারের তৃণমূলের অন্তত এক জন কাউন্সিলর দেখা করেন। ওই কাউন্সিলর জেলার আর এক মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের ঘনিষ্ঠ। সাবিত্রীদেবীর সঙ্গেও শমীকবাবুর এ দিন দেখা হয়। তবে সাবিত্রীদেবীর দাবি, এটা নেহাৎই সৌজন্য সাক্ষাৎ। শমীকবাবু তাঁর এলাকায় আসায়, তাঁর সঙ্গে দেখা হয়ে গিয়েছিল।

এ বার ইংরেজবাজার পুরসভার তৃণমূল পেয়েছে ১৫টি আসন। কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি ও নির্দল মিলিয়ে পেয়েছেন ১৪টা। কিন্তু বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস এবং তৃণমূলের একটা অংশ কৃষ্ণেন্দুর চেয়ারম্যান পদ থেকে রুখতে মরিয়া। তৃণমূলের অন্দরের খবর, দলের জয়ী কাউন্সিলরদের মধ্যে ৯ জন কৃষ্ণেন্দু ঘনিষ্ঠ। বাকি ৬ জন কৃষ্ণেন্দু বিরোধী। সূত্রের খবর, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বিদায়ী ভাইস চেয়ারম্যান দুলাল সরকার ওরফে বাবলাও। কৃষ্ণেন্দু বিরোধীদের দাবি, একাধারে মন্ত্রী আর চেয়ারম্যান হয়ে দলে কৃষ্ণেন্দুবাবুর আধিপত্য দিন দিন বেড়েছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে তাঁর ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ। এ সবের জন্য ক্ষুব্ধ ছিলেন দলের একাংশ। সে কারণেই এ বার তাঁকে শিক্ষা দিতে ভোটাভুটিতে দলের একাংশ তাঁকে হারিয়ে দিতে পারে বলে খবর। এই পরিস্থিতিতে শমীকবাবুর সঙ্গে কৃষ্ণেন্দু বিরোধী এক কাউন্সিলর ও মন্ত্রী সাবিত্রীদেবীর সাক্ষাৎ এই জল্পনা উস্কে দিয়েছে যে, বিজেপির সাহায্য নিয়ে কৃষ্ণেন্দু বিরোধীরা পুরবোর্ড গঠন করতে চেষ্টা করবেন।

তবে কেউই এই বিষয়ে সরাসরি মুখ খুলতে নারাজ। সাবিত্রিদেবী বলেন, ‘‘আমি এলাকায় বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। সে সময় সমীকবাবু সেখান দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন।বিধানসভায় তাঁর সঙ্গে পরিচিয় আগে থেকেই রয়েছে। তাই তিনি আমাকে দেখে দাঁড়ান। সৌজন্যবশত সে সময় তাঁর সঙ্গে প্রকাশ্যেই আমার কথা হয়েছে। অন্য কোনও ব্যাপার নেই।’’ তিনি বলেন, ‘‘পুরবোর্ড গঠনের ব্যাপারে আমার কোনও ভূমিকা নেই। দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর কথাই চূড়ান্ত।’’

আর শমীকবাবুর কথায়, ‘‘বহু দিনের একনায়কতন্ত্র থেকে ইংরেজবাজারকে বাঁচাতে শহরে সুস্থ সামাজিক পরিবেশ ফেরাতে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে সব রাজনৈতিক দলের উচিত কিছু ক্ষণের জন্য দলীয় পতাকার ঊর্ধ্বে উঠে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা। আমি আশা করি এই ডাকে সকলেই সাড়া দেবেন। শহর বাঁচলে তবেই রাজনীতি বাঁচবে।’’

তবে তৃণমূলের এই অংশের ক্ষোভের আগাম আঁচ পেয়েছেন কৃষ্ণেন্দুও। ইতিমধ্যেই কংগ্রেসের নন্দ তিওয়ারির সঙ্গে কৃষ্ণেন্দু যোগাযোগ করেছেন বলে খবর। বিজেপির জয়ী কাউন্সিলরদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন তিনি। কৃষ্ণেন্দু-ঘনিষ্ঠ প্রতিভা সিংহ, দেবপ্রিয় সাহারা ভোটে হেরে গিয়েছেন। কৃষ্ণেন্দু ও তাঁর স্ত্রী কাকলি অল্প ভোটে জিতেছেন। এর ফলে দলে তাঁর রাজনৈতিক কর্তৃত্বও খানিকটা খর্ব হয়েছে। এই সুযোগে সাবিত্রীর সঙ্গে তাঁর পুরনো বিরোধ ফের মাথা চাড়া দিয়েছে। বিজেপি সেই সুযোগটিই নিচ্ছে বলে মনে করছে তৃণমূলের একটি অংশ। সূত্রের খবর, পুরবোর্ড দখলে রাখতে তৃণমূল যদি এখন কৃষ্ণেন্দুর বদলে অন্য কাউকে চেয়ারম্যান করে সেক্ষেত্রে দলের কাউন্সিলরদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হতে পারে। সেই পরিস্থিতিতে বিজেপির তিন কাউন্সিলর তৃণমূলকে সমর্থন করবে, এমন আশ্বাসও কৃষ্ণেন্দু বিরোধীরা পেয়েছেন বলে সূত্রের খবর।

বিজেপি সূত্রে খবর, এ দিন ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ইংরেজবাজার পুরভোটে বিজেপির যিনি প্রার্থী হয়েছিলেন তাঁর বাড়িতে দেখা করতে গিয়েছিলেন শমীকবাবু। বিজেপির প্রার্থীদের উপর হামলা এবং কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ। তা নিয়েই সরেজমিনে দলের নেতা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন বসিরহাটের বিধায়ক। এ দিন জেলা পুলিশ সুপারের দফতরে দলের নেতা কর্মীদের নিয়ে ওই অভিযোগে স্মারকলিপিও দেন তিনি। তার আগেই সাবিত্রীদেবীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE