গত বছরের ডিসেম্বর মাসের ঘটনা। গভীর রাতে খবর পেয়ে ১২ বছরের এক নাবালিকাকে বিহারগামী ট্রেন থেকে উদ্ধার করে এনেছিল দার্জিলিংয়ের একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তাকে কোথায় রাখা হবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল তারা। ওই জেলায় কোনও সরকারি কিংবা বেসরকারি আবাসিক হোম নেই। নিজেদেরই সংস্থার এক সদস্যের বাড়িতে মেয়েটিকে রাতের জন্য রাখতে বাধ্য হয় তারা।
জেলার শিশু, নারী ও সমাজ কল্যাণ দফতর সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গের সাতটি জেলার মধ্যে মাত্র দু’টি জেলায় মেয়েদের জন্য সরকারি আবাসিক হোম রয়েছে। মালদহ আর কোচবিহারে। কিন্তু সেই হোম দু’টির মধ্যেও মালদহ হোমে মাত্র ৩০ জন থাকতে পারে। আর কোচবিহারে শিশু, বিশেষ প্রতিবন্ধকতা যুক্ত এবং উদ্ধারকারী মেয়ে মিলিয়ে মোট দে়ড়শো জনের মধ্যে মাত্র ৩০ জন উদ্ধারকারী মেয়েকে জায়গা দেওয়ার কথা সরকারি ভাবে বলা হয়েছে। কিন্তু দু’টি হোমেই তার থেকে বেশি সংখ্যক মেয়েকে রাখতে হচ্ছে। মালদহে সেটা দ্বিগুণ বলেই দফতর সূত্রের খবর।
উত্তরবঙ্গে মেয়ে পাচারের ঘটনা বেড়েছে। কিন্তু কেন?
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সূত্রের খবর, ৩টি প্রতিবেশী দেশ এবং একটি রাজ্যের সীমান্তবর্তী হওয়ায় এখানকার সব ক’টি জেলাই স্পর্শকাতর। বিশেষত, শিলিগুড়িকে পাচারের ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করা শুরু করেছে পাচারকারী চক্রগুলি। ২০১৫ সালে নেপালের ভূমিকম্পের পর প্রচুর মেয়েকে এই ‘করিডর’ দিয়ে পাচার করা হয়েছে বলে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির সমীক্ষার দাবি।
সম্প্রতি অন্য রাজ্য থেকেও মেয়েদের পাচার করে এনে তোলা হচ্ছে শিলিগুড়ির কয়েকটি পানশালা লাগোয়া এলাকায়। প্রতিদিনই মেয়ে উদ্ধারের সংখ্যা বাড়ছে। তাতেই উদ্ধার হওয়া মেয়ে আর তার তুলনায় হোমের অনুপাতের অভাবটা বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। উত্তরবঙ্গে বিভিন্ন জেলার শিশু কল্যাণ সমিতির চেয়ারপার্সনরা নানা সময়ে বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। দার্জিলিং-এ একটি নতুন হোম তৈরির জমি পাওয়া গিয়েছে বলে দফতর সূত্রে দাবি করা হয়েছে। বাস্তবে তার কোনও খোঁজ এখনও মেলেনি।
বাকি জেলাগুলির কী হবে? সংশোধিত জুভেনাইল জাস্টিস আইন অনুযায়ী, প্রতিটি জেলায় একটি করে হোম থাকতেই হবে। যদিও তার সম্ভাবনা আপাতত কম বলেই দফতর সূত্রের খবর।
ফলে অনেক সময়েই শুধুমাত্র নির্দিষ্ট খবর ছাড়া বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি মেয়ে উদ্ধারের চেষ্টা করে না বলেও এক সংস্থা সূত্রে খবর। এমনই এক সংস্থার রঙ্গু সৌরিয়া বলেন, ‘‘কয়েক মাস আগে খবর পেয়ে বছর সতেরোর একটি মেয়েটিকে উদ্ধার করে আনা হয়। মেয়েটিকে উদ্ধার করতে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল। অথচ জেলায় কোনও হোম নেই। নিয়ে যেতে হবে কোচবিহার না হলে মালদহে। সন্ধ্যার পরে পাহাড়ি রাস্তায় পাচার হওয়া মেয়েকে নিয়ে যাওয়া নিরাপদ নয়। শেষকালে নিজেদের দায়িত্বে ওই সংস্থারই এক সদস্যের বা়ড়িতে মেয়েটিকে রাখা হয়।’’
জলপাইগুড়িতে সরকারি অনুমোদিত চাইল্ড লাইনের হোম থাকলেও, সেখানে পথশিশুদের পাশাপাশি পাচার হওয়ার পরে উদ্ধার হওয়া মেয়েকেও এক সঙ্গে রাখতে হচ্ছে। অথচ নিয়মনুযায়ী সেটা করা যায় না। কিন্তু শুধুমাত্র নাবালিকাদের স্বার্থে বাধ্য হয়ে এ ভাবেই রাখা হচ্ছে মেয়েদের। সরকারি সূত্রের খবর, শিলিগুড়ির মাটিগাড়া এবং দার্জিলিং সদরে সোনাদাতে দু’টি জায়গা পাওয়া গিয়েছে হোম তৈরির জন্য। মালদহে ভাড়া বাড়ি থেকে হোম সরিয়ে নতুন জায়গায় চার তলা ভবনের হোম তৈরির কাজ চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy