ঘোরাফেরা: নিজেদের তৈরি বনাঞ্চলে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা। নিজস্ব চিত্র।
আলিপুরদুয়ার জেলার শামুকতলা থানার অধীন আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম লোকনাথপুর। পিছিয়ে পড়া ওই গ্রামের পাঁচটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ৫৩ জন মহিলা ১৭ বছরের পরিশ্রমে এলাকায় বনাঞ্চল গড়ে তুলেছেন। বন দফতরের সহযোগিতায় সেখানে প্রায় বারো হাজার গাছ পুঁতেছিলেন তাঁরা। শাল, সেগুন, মেহগনি, গামা, শিরীশ, কদম, হরতকী, আমলকী মতো গাছ আজ বড় হয়েছে। অভিযোগ উঠছে, সরকারি উদাসীনতায় এখন ধ্বংসের পথে সেই বনাঞ্চল। কারণ, কাঠ-চোরদের নজর পড়ছে। চুরি হয়ে যাচ্ছে ওই বনাঞ্চলের মুল্যবান সব গাছ। মহিলাদের অভিযোগ, বহুবার বনকর্তাদের কাছে সে সব জানিয়ে বনরক্ষার আবেদন করেছেন তাঁরা। কিন্তু বনাঞ্চল রক্ষা করার কোনও উদ্যোগ এখনও নেওয়া হয়নি। তবে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের সাউথ রায়ডাক রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার শুভায়ু সাহা আশ্বাস দিয়েছেন, ওই বনাঞ্চল রক্ষা করতে পদক্ষেপ করা হবে।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৪ সালে ওই বনাঞ্চল গড়ার কাছ শুরু হয়। সে কাজে শামিল হন মুক্তি ১, মুক্তি ২, জনকল্যাণ, মিলন এবং জ্যোতি নামে স্থানীয় পাঁচটি মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী। দলের সদস্য ছিলেন রীতা নার্জিনারি, নমিতা রায়, বাসন্তী নার্জিনারি, গীতা ছেত্রী, রঞ্জিলা বসুমাতার মতো আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা স্থানীয় মহিলারা। ছ’হেক্টর সরকারি জমির উপর গড়ে তোলেন আস্ত একটি বনাঞ্চল।
মহিলারা জানান, গ্রামের মধ্যে সরকারি জমিটি অযত্নে পড়েছিল। ঝোপ জঙ্গলে ভরা ছিল সে জমি। তাঁরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন জমিটি বন দফতরের। তখন তাঁরা বনকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জমিটিতে বনাঞ্চল গড়ার পাশাপাশি একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার আবেদন জানান। বন দফতরের অনুমতি মেলে। চুক্তি হয় পর্যটন কেন্দ্র এবং বনঞ্চল গড়ার পর সেখান থেকে যা আয় আসবে, তাঁর লাভ্যাংশের একটি অংশ পাঁচটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে দেওয়া হবে। এর পর শুরু হয় বন বানানোর কর্মযজ্ঞ। তাঁদের কথায়, ঝোপ জঙ্গল পরিষ্কার করে মাটি কেটে গাছ লাগান তাঁরা। টানা দশ বছর ধরে নিয়মিত দেখভালের পর গড়ে ওঠে স্বপ্নের সেই বনাঞ্চল।
মহিলাদের অভিযোগ, এর পরেই বন দফতরের সাহায্য থেকে বঞ্চিত হতে থাকেন তাঁরা। এখন আর বন দফতরের কোনও সাহায্য মেলে না। দিনেরাতে সেই বনাঞ্চল থেকে গাছ কেটে, কাঠ পাচার হয়ে যাচ্ছে। মহিলারা জানালেন, প্রাণঢালা পরিশ্রমে তিল তিল করে গড়ে তোলা বনাঞ্চল চোখের সামনে ধংস হতে দেখে কান্না পায় তাঁদের।
রীতা নার্জিনারি বলেন, ‘‘দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এই বনাঞ্চল প্রাকৃতিক নয়। মনে হয়, বক্সা বাঘবনেরই অংশ এটি। এখন প্রায়ই দুষ্কৃতীরা এখান থেকে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ দেখার নেই। আমরা কি করে ওদের আটকাব?’’ নমিতা রায়ের অভিযোগ, ‘‘সরকারি উদাসীনতায় এমন সুন্দর বনাঞ্চল আজ ধংসের মুখে। তার সঙ্গে আমরাও আমাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। ওই বনাঞ্চলে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার কথা ছিল। তা হলে আমরাও আয়ের পথ খুঁজে পেতাম।’’
বিষয়টি নিয়ে এখন ব্লক প্রশাসনে নড়াচড়া পড়েছে। আলিপুরদুয়ার ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অনুপ দাস বলেন, ‘‘এমন একটি কর্মকাণ্ডের কথা আমাকে কেউ জানায়নি। অতিমারির কারণে জারি হওয়া বিধিনিষেধ শিথিল হলে আমি ওই বনাঞ্চল পরিদর্শনে যাব। স্থানীয় মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেব। প্রয়োজনে বনমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলব।’’
বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের সাউথ রায়ডাক রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার শুভায়ু সাহা বলেন, ‘‘বনাঞ্চলের স্থানীয় মহিলাদের সঙ্গে কথা বলেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানাব সব কথা। ওই বনাঞ্চল রক্ষার ব্যাপারে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy