Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
English Bazar

Flood: চার মাস ভাড়া বাড়িতেই দিন কাটে শিবুদের

ফুলহারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভাঙন-বন্যায় বিপর্যস্ত মহানন্দা পাড়ের বাসিন্দারাও। শুখা মরসুমে মহানন্দা নদী কার্যত ছোট খালের চেহারা নেয়।

হরিশ্চন্দ্রপুরের ভাকুরিয়ায় ফুলহারের ভাঙনে এ ভাবেই তলিয়ে যাচ্ছে কৃষিজমি।

হরিশ্চন্দ্রপুরের ভাকুরিয়ায় ফুলহারের ভাঙনে এ ভাবেই তলিয়ে যাচ্ছে কৃষিজমি। ছবি: বাপি মজুমদার।

বাপি মজুমদার  , অভিজিৎ সাহা 
চাঁচল ও মালদহ শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২২ ০৫:৫৭
Share: Save:

কৃষিকাজ করেই সংসার চালান ঋষিলাল যাদব। গত এক মাসে নদী ভাঙনে ফুলহারের গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে তাঁর চার বিঘা কৃষি জমি। চোখের সামনে অসহায়ের মতো জমি তলিয়ে যেতে দেখেছেন আর চোখের জল ফেলেছেন। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের রশিদপুরের ঋষিলালের মতোই অবস্থা প্রতিবেশী শেখ কাবলুরও। তাঁরও তিন বিঘা জমি গিলে খেয়েছে ফুলহার। বাকি যেটুকু জমি রয়েছে, যে ভাবে ফুলহারের ভাঙন শুরু হয়েছে তা-ও নদীতে তলিয়ে যাওয়া সময়ের অপেক্ষা বলে আশঙ্কা ঋষিলাল, কাবলুদের। ঋষিলাল বলেন, ‘‘এই এলাকায় ভাঙন নতুন নয়। কিন্তু ভাঙন রোধে কেউ কখনও উদ্যোগী হননি।’’

হরিশ্চন্দ্রপুরের পাশাপাশি, রতুয়াতেও ফুলহারের ভাঙন, বন্যা প্রায় প্রতি বছরের ঘটনা। বর্ষা শুরু হলেই চোখের ঘুম উড়ে যায় রশিদপুরের ঋষিলাল, কাওয়াডোলের সুনীল মণ্ডল, উত্তর ভাকুরিয়ার ব্রহ্মদেব সাহাদের। ভাঙনপ্রবণ ভাকুরিয়া, রশিদপুর, কাওয়াডোল, চণ্ডীপুর নদীর অন্য পারে। ফুলহার বাঁধ থেকে কিছুটা এগিয়ে নদী। সারা বছর নৌকোয় নদী পেরিয়ে মূল ভূখণ্ডে তাঁদের যাতায়াত করতে হয়। বর্ষা শুরু হতেই সে নদী হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর। তা স্থানীয় ভাবে বৃষ্টি হোক বা না হোক। কারণ, উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি হলেই মহানন্দা হয়ে সে জল ফুলহারে এসে পড়ে। তার পরে, হরিশ্চন্দ্রপুরের ওই এলাকাগুলির পাশাপাশি রতুয়ার দেবীপুর, বঙ্কুটোলা, সম্বলপুরে শুরু হয় ভাঙন। বিঘার পরে বিঘা জমি, আমবাগান নদীগর্ভে তলিয়ে যায়।

ভাকুরিয়া, কাওয়াডোল, রশিদপুরে এখনও প্রতিনিয়ত ভাঙন চলছে। ভাকুরিয়ায় নদী যে ভাবে লোকালয়ের দিকে এগোচ্ছে তাতে আতঙ্কে ঘুম নেই বাসিন্দাদের। স্থানীয়রাই জানাচ্ছেন, আর মাত্র ২০ মিটার এগোলেই এলাকার বিদ্যুতের খুঁটি নদীতে তলিয়ে যাবে। তা হলে গোটা এলাকার বিদ্যুৎ বণ্টন বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। ভাকুরিয়ার শুকাই পরিহার বলেন, ‘‘প্রতি বছর বন্যায় ঘরে জল ঢোকে। বাড়ির চারপাশ জলে ডুবে যায়। ডোবে খেতের ফসলও। তখন ভরসা মাচা। কিন্তু এলাকার সমস্যা মেটাতে কেউ এগিয়ে আসেননি। ভাঙন-বন্যা আমাদের কয়েক হাজার মানুষের জীবনে অভিশাপ।’’

ফুলহারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভাঙন-বন্যায় বিপর্যস্ত মহানন্দা পাড়ের বাসিন্দারাও। শুখা মরসুমে মহানন্দা নদী কার্যত ছোট খালের চেহারা নেয়। নদীতে জলের অভাবে সেচের সমস্যাতেও ভুগতে হয় বাসিন্দাদের। অথচ, বর্ষায় সেই মহানন্দাই ফুলেফেঁপে ওঠে। শুরু হয় ভাঙন, বন্যার তাণ্ডব। চাঁচলের গালিমপুর, যদুপুর, বলরামপুর, রতুয়ার গোবিন্দপুর, হরিরামপুর থেকে শুরু করে ইংরেজবাজার, পুরাতন মালদহের মহানন্দা পাড়ের একাংশের ছবিটা প্রায় একই রকম। ইংরেজবাজারের ৮, ৯, ১২, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বহু বাসিন্দা নদীর পাড়ে ঝুপড়িতে বসবাস করেন। প্রায় প্রতি বছর বর্ষায় তাঁদের ঘরছাড়া হতে হয়। ইংরেজবাজারের শিবু দাস বলেন, ‘‘মহানন্দায় জল বাড়লেই ঘরে জল ঢোকে। তখন ভাড়া বাড়ি খুঁজতে হয়। অগস্ট থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত সেই ভাড়া বাড়িতেই দিন কাটে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

English Bazar flood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE