ঘন কুয়াশা থাকলেও দাপট নেই বাতাসের। তবুও মাঝে মধ্যেই দুলে উঠছে ঝোপঝাড়। সেই রহস্য ভেদে একটু এগিয়ে গেলেই কর্তব্যরত বিএসএফ জওয়ানদের দিকে উড়ে আসছে ইট-পাথর। গুলি চালাচ্ছেন জওয়ানেরাও। কখনও ঝোপঝাড় থেকে মিলছে নেশার সিরাপ, কখনও জালনোট। হবিবপুরের শোনঘাট থেকে বামনগোলার খুটাদহ, পাচারকারী-বিএসএফের এই দ্বৈরথ কার্যত রোজকার হয়ে উঠেছে মালদহে।
বুধবার ভোরে বিএসএফের সঙ্গে পাচারকারী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের মল্লিকপুর সীমান্তে। অভিযোগ, পাচারকারীদের হাতে আক্রান্ত হন দুই জওয়ান। রূপেশ কুমার নামে এক জওয়ানের আঘাত গুরুতর থাকায় তিনি গঙ্গারামপুর হাসপাতালে ভর্তি। অপর জওয়ানকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনায় গুলিবিদ্ধ এক বাংলাদেশি নাগরিকও হাসপাতালে ভর্তি। সীমান্তে বিএসএফ গুলি চালালেও কেন ঠেকানো যাচ্ছে না পাচারের প্রবণতা, উঠছে প্রশ্ন।
প্রায় রোজকার এমন ঘটনা উদ্বেগ বাড়িয়েছে বিএসএফের কর্তাদেরও। কারণ, কাঁটাতার বেড়া দেওয়া নিয়ে মালদহ এবং দুই দিনাজপুরের একাধিক সীমান্তে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়েছে বিএসএফ-বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ)। এমনকি, বৈষ্ণবনগরের সুকদেবপুর সীমান্তে অস্ত্র হাতে সীমান্তে জড়ো হতে দেখা যায় দু’দেশের নাগরিকদের। অস্থিরতার সুযোগ কি নিচ্ছে পাচারকারীরা, প্রশ্ন উঠছে। বিএসএফের এক কর্তা বলেন, “ও পার বাংলার রক্ষীদের ঢিলেঢালা মনোভাবের কারণে সীমান্তে পৌঁছে যাচ্ছে চোরা চালানকারীরা। একাধিক বার ফ্ল্যাগ মিটিং করে সমস্যার কথা জানানো হয়েছে। তার পরেও কোনও রকম সুরাহা হচ্ছে না।”
তবে এ পারের কারবারিরা কী ভাবে সীমান্তে পৌঁছচ্ছে? বিএসএফের দাবি, সীমান্তে বিস্তীর্ণ এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নেই। কোথাও বেড়া থাকলেও জ়িরো পয়েন্টে বিঘার পর বিঘা চাষের জমি রয়েছে। সে জমিতে চাষবাসও হয়। নজরদারির পরেও কৃষক সেজে পাচারকারীদের একাংশ সীমান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। শীতের মরসুমকে কাজে লাগিয়ে এবং অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে হবিবপুর, বামনগোলার উন্মুক্ত সীমান্তে সক্রিয় হয়ে উঠেছে গরু পাচারকারীরাও। জানা গিয়েছে, বর্ষার মরসুমে উন্মুক্ত সীমান্তে জল থাকে। শুখা মরসুম হওয়ায় সে জমি চাষের জমিতে পরিণত হয়েছে। অভিযোগ, উন্মুক্ত ফাঁকা জমিতে শয়ে শয়ে গরু ছেড়ে দিচ্ছে পাচারকারীরা।
বিএসএফের এক জওয়ান বলেন, “সীমান্তে বিভিন্ন পয়েন্টে এক থেকে দু’জন জওয়ান থাকেন। তাঁদের দায়িত্বে থাকে ৮০-১০০ মিটার এলাকা। পায়ে হেঁটে বা সাইকেলে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে টহল দিতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। টহলদারি পয়েন্টগুলিতে নজরদারির জন্য বাড়তি জওয়ান মোতায়ন করার প্রয়োজন রয়েছে।” বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ শাখার এক কর্তা এই প্রসঙ্গে বলেন, “নজরদারি থাকে। প্রয়োজনে তা বাড়ানো হবে। সীমান্তে জওয়ানেরা সক্রিয়। এমনকি, মহিলা জওয়ানেরা সাহসিকতার সঙ্গে পাচার রুখে দিয়েছেন।”
তথ্য: শান্তশ্রী মজুমদার, গৌর আচার্য
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)