শিলিগুড়িতে এলেন সূর্যকান্ত মিশ্র। বুধবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
বিধানসভা ভোটে বিপর্যয় হলেও তা ধরে বসে না থেকে আগামী দিনে মানুষের পাশে জোটবদ্ধ ভাবে থেকে টানা আন্দোলন, কর্মসূচি চালিয়ে যেতে হবে। উত্তরবঙ্গে দলের নেতাদের এমনই নির্দেশ দিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।
ভোটের পর প্রথমবার বৃহস্পতিবার শিলিগুড়িতে এসে সকাল থেকে বিকাল অবধি সূর্যবাবু দার্জিলিং জেলা সম্পাদকমণ্ডলী এবং জেলা কমিটির বৈঠক করেন। দলীয় সূত্রের খবর, নিজেদের পার্টি কর্মসূচি ছাড়াও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বজায় রেখেই আন্দোলনের কথা বলেছেন সূর্যবাবু। সেই সঙ্গে পার্টি কর্মীদের চাঙ্গা রাখার জন্য নেতাদের বুথ স্তরে নিয়মিত মিটিং, মিছিল চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আর তা করতে গিয়ে নিষ্ক্রিয় পার্টি কর্মীদের চিহ্নিত করার কথাও বলেছেন সূর্যবাবু।
সিপিএম সূত্রের খবর, সংগঠন ঠিকঠাক থাকলে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট কার্যকরী হয়েছে বলেও বৈঠকে সূর্যবাবু জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, উত্তরবঙ্গে মালদহ ও দার্জিলিং জেলায় তৃণমূল কোনও আসন পায়নি। সেখানে দুই জেলায় ১৮টি আসনের মধ্যে জোট ১৫টি আসন পেয়েছ। মোর্চা পাহাড়ে তিনটি আসন পেয়েছে। তাই আগামী দিনের কথা মাথায় রেখে সাংগঠনিক ত্রুটি, সমস্যা মেটানোর দিতেই নজর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সূর্যবাবু।
গত ১৯ মে বিধানসভা ভোটের ফলাফলের পর সিপিএমের অন্দরে জেলা ধরে ধরে ফল বিশ্লেষণ, পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। সেখানে কোথায় খামতি বা গোলমাল ছিল তা দেখা শুরু করছেন রাজ্য নেতারা। সেই সূত্র ধরেই বৃহস্পতিবার সকালে ট্রেনে শিলিগুড়িতে আসেন সূর্যবাবু।
দার্জিলিং জেলার পর আজ, শুক্রবার কোচবিহারে একইভাবে পার্টি মিটিং করবেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। কোচবিহারে মোট ৯টি আসনের মধ্যে এবার মাত্র ১টি আসন পেয়েছে জোট। কোচবিহারে কংগ্রেস বা শরিকদের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে কোথাও সমস্যা ছিল কি না, তা নিয়ে আলোচনা বলে দলীয় সূত্রের খবর। বৈঠকে শিলিগুড়িতে কংগ্রেসের সঙ্গে আগামী ৭ জুন সন্ত্রাস বিরোধী মিছিল হবে বলে ঠিক হয়েছে। জোট বেঁধে একই রকম মিছিল নকশালবাড়িতেও হবে।
বৈঠক বা জেলা সফর নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্যই করতে চাননি সূর্যবাবু। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা শিলিগুড়ির বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পুরোটাই একেবারেই দলীয় বৈঠক। মানুষের পাশে থেকে জোটবদ্ধ ভাবেই আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।’’ দলের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকারের কথায়, ‘‘জেলায় জেলায় এসে রাজ্য সম্পাদক বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কী করণীয়, তা আমাদের বলেছেন।’’
দলীয় সূত্রের খবর, এ বার রাজ্যে আসন সংখ্যার বিচারে সিপিএম বিধানসভায় কংগ্রেসের পরে নেমে গিয়েছে। জোটে থেকে প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা পেয়েছে কংগ্রেস। ভোটে সিপিএমের ভোট কংগ্রেস পেলেও কংগ্রেসের অনেক ভোট বামেদের বাক্সে আসেনি বলেই সিপিএম নেতারা মনে করছেন। আবার বিজেপি’র ভোটের বড় অংশ তৃণমূলের দিকে গেলেও বাকি ভোটের জেরে বহু আসনে জোটকে হারতে হয়েছে। বৈঠকে এ সবই আলোচনা করে সূর্যবাবু জানিয়ে দেন, তাঁরা ভোটে হারলেও ২ কোটির উপর মানুষ তাঁদের উপর আস্থা রেখেছেন। তাকে সম্মান করেই আগামী দিনে এগোতে হবে। এবার ভোটে সাফল্য না পেলেও আগামী দিনে তা কার্যকরী হতে পারে। শিলিগুড়িতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কংগ্রেসের সঙ্গে থেকে ভোটের ফলাফল আশানুরূপ হয়েছে। বিধানসভা, পঞ্চায়েত, পুরসভা ভোটে তৃণমূল ছাড়াও বিজেপি কোণঠাসা হয়েছে। তার ধারবাহিকভাবে বজায় রাখার কথাও বলেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy